একদল পুরুষ এক মহিলাকে তাড়া করে ফিরছে। প্রাণ বাঁচাতে মহিলা রুদ্ধশ্বাসে ছুটছেন। কেউ তাঁর পাশে নেই। তিনি জানেন ধরা পড়লে মৃত্যু অনিবার্য। হিন্দি সিনেমার দৃশ্য নয়। মাতৃতান্ত্রিক সমাজ পিতৃতান্ত্রিকতায় উত্তরণের পরিণতি এ ভাবে চুম্বকে মঞ্চে তুলে ধরতে মহড়ায় ব্যস্ত ময়নাগুড়ি কলেজের একদল পড়ুয়া। সামাজিক অবক্ষয়কে তাঁরা ফুটিয়ে তুলবেন মহাভারতের বনপর্বের কাহিনি অবলম্বনে রাজবংশী সম্প্রদায়ের কথ্য ভাষায় লেখা প্রায় এক ঘন্টার নাটকে। শুরুতে দেখা যাবে নারীকে তাড়িয়ে বেড়ানোর ওই দৃশ্য। যেখানে পুরুষ জাতি ভিলেন। আগামী ৯ সেপ্টেম্বর কলকাতায় আন্তঃ কলেজ নাটক প্রতিযোগিতায় ওই নাটক পরিবেশিত হবে। অভিনব নামকরণ হয়েছে নাটকের—‘নরলোকের চিত’। অর্থাৎ মনুষ্য সমাজের চিন্তা। লেখক দীনেশ রায়। পঞ্চাশ মিনিটের নাটক পরিচালনা করছেন সব্যসাচী দত্ত। কুশীলব ৮ জন। রয়েছে লোক সঙ্গীতের সুরে কয়েকটি গান। রচনা করেছেন কামেশ্বর রায়। নাট্যকার দীনেশবাবুর কথায়, “নামকরণে লুকিয়ে রয়েছে বিষয়।” মঞ্চে দেখা মিলবে যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকুল, সহদেব, দ্রৌপদীর মতে পরিচিত চরিত্র। ভাষায় নতুনত্ব চরিত্রদের কথপোকথনে। দর্শকরা সেখানে খুঁজে পাবেন নিজের আধুনিক সমাজকে। মঞ্চে দ্রৌপদী আধুনিক সমাজের নির্যাতিতা নারীদের প্রতিনিধিত্ব করবেন। তাঁর কণ্ঠে শোনা যাবে যন্ত্রণা কাতর চিরন্তন প্রশ্ন, ‘পাপ-পুণ্যের কথা বলে তোমরা আমাদের বন্দি করে রেখেছ। কতদিন এটা চলবে!’ নাট্যকার দীনেশবাবু বলেন, “উত্তরবঙ্গের ছেলেমেয়েরা নাটক পরিবেশন করবেন। তাই নাটক রাজবংশীতে লেখা হয়েছে।” জ্বলন্ত সামাজিক সমস্যা নিয়ে লেখা নাটকে অভিনয় করে খুশি তৃতীয় বর্ষের ছাত্র চিরঞ্জীব রায়, অভিমন্যু রায়, দীপেশ মণ্ডল, প্রথম বর্ষের ঝিমি রায় বসুনীয়া, সুশান্ত রায়, উজ্জ্বল রায়। তাঁদের কথায়, “আসনে বসে দর্শকদের অনেক কিছু ভাবতে হবে। আমরা নতুন কিছু উপহার দেব।” দুই শিক্ষক মানিক শর্মা ও অপূর্ব সাহা কলেজের শুরু থেকে ছাত্রদের নিয়ে মহড়ায় ব্যস্ত। তাঁরা ছাত্রছাত্রীদের বুঝিয়ে দিচ্ছেন সময় মেপে অভিনয়ের কৌশল। কলেজের অধ্যক্ষ দেবকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা সামাজিক সমস্যার মূলে পৌছে যেতে চেষ্টা করেছি। মাতৃতান্ত্রিক থেকে পিতৃতান্ত্রিক বিবর্তনের দীর্ঘ পথ পরিক্রমার ফলাফল নাটকে উঠে এসেছে। কোনও কলেজের তরফে রাজবংশীতে নাটক পরিবেশনের এমন উদ্যোগ প্রথম।” কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, মহাভারতের বিশেষ একটি পর্বের কাহিনি অবলম্বনে নাটক লেখা হলেও সেখানে স্থান পেয়েছে সাম্প্রতিক ঘটনা। বধূ নির্যাতন থেকে ছাত্রীকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ—সবই চুম্বকে তুলে আনা হয়েছে বিভিন্ন দৃশ্যে। রয়েছে ধর্ম ও রাজনীতি। নির্যাতনের বিভিন্ন কৌশলের কথা। নাট্যকার বলেন, “মাতৃতান্ত্রিক সমাজে মুক্ত নারী পিতৃতান্ত্রিক সমাজে কতটা অসহায় সেটাই বলার চেষ্টা করেছি। আধুনিক সমাজে গণতন্ত্র, নারী স্বাধীনতা, অধিকারের সমতা নিয়ে অনেক কথা বলা হয়। সিমাজে সত্যি কী ওই পরিবেশ আছে? দর্শকরা প্রশ্নের উত্তর নাটকে পেয়ে যাবেন।”
|
তারার কথা
লাদাখে নতুন ছবির শ্যুটিংয়ে শাহরুখ খান। ছবি: পি টি আই |
|