|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা: বেহালা
|
সমাধান সুদূর |
দূষণে নীল |
দেবাশিস দাস |
জিনস কাপড়ে রং করার জন্য ব্যবহৃত রাসায়নিক পদার্থে দূষিত হচ্ছে চড়িয়াল খালের জল। এমনই অভিযোগ মহেশতলা, চটা, মেটিয়াবুরুজ, আক্রা ফটক, বিষ্ণুপুর, মহিষগোট, বজবজের অধিকাংশ বাসিন্দার। অভিযোগ উঠেছে, এ জন্য চাষের কাজে সমস্যার পাশাপাশি ছড়াচ্ছে চর্মরোগও।
স্থানীয় সূত্রে খবর, চড়িয়াল খাল সংলগ্ন এই এলাকায় দীর্ঘ দিন ধরেই প্রধানত জিনসের পোশাক তৈরি হয়। এখান থেকে ভিন্ রাজ্য, এমনকী, বিদেশেও জিনস রফতানি হয়। |
|
উৎসবের মরসুমে চাহিদা বাড়ে। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, এখানে পোশাক-শিল্পের উপযুক্ত পরিকাঠামো এখনও গড়ে ওঠেনি।
পোশাক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত এক ব্যবসায়ী জানান, পোশাক তৈরির জন্য প্রথমে জিন্সের থান আনা হয়। পরে মাপ মতো কেটে রং করে মেশিনে সেলাই করা হয়। রং করতে সাত-আট ধরনের রাসায়নিক ব্যবহৃত হয়। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল টেলার্স ইউনিয়ন’-এর সাধারণ সম্পাদক এবং মহেশতলার প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএমের মুরসোলিন মোল্লা বলেন, “তৎকালীন বাম সরকারকে সমস্যা বোঝাতে সময় লেগেছিল। পরে অবশ্য সরকারি উদ্যোগে দর্জিদের উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে আমরা দিল্লি, কর্নাটক, কেরল, তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশের থেকে অনেক পিছিয়ে। জল পরিশোধনের ব্যবস্থা করা যায়নি। ফলে চড়িয়ালের জল দূষিত হয়ে চলেছে।”
অভিযোগ, এই অংশে চড়িয়ালের জল নীল হয়ে গিয়েছে। খালপারের মাটিও নীলচে। এলাকার বাসিন্দা রথীন দাসের কথায়: “খালের জল বিষাক্ত হয়ে গিয়েছে। এই জলে চাষের কাজ করা যায় না। গায়ে লাগলে চুলকোয়। লালচে দাগ হয়ে যায়।”
|
|
পরিবেশ দফতর সূত্রে খবর, এই ধরনের রঙে যে রাসায়নিকগুলি থাকে তা মানুষ বা যে কোনও প্রাণী, এমনকী, উদ্ভিদের পক্ষেও ভয়ানক ক্ষতিকর। মানুষের শরীর এই ধরনের রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শে এলে হজমশক্তি নষ্ট হয়ে যায়। তা ছাড়া এই ধরনের রঙে এমন রাসায়নিক পদার্থও (নিউরো টক্সিন) থাকে যা স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি করে। শুধু খালের জলই নয়, এই রাসায়নিকগুলি চুঁইয়ে ভূগর্ভের জলস্তরকেও দূষিত করছে। সেচ দফতরের প্রতিমন্ত্রী শ্যামল মণ্ডল বলেন, “খোঁজ নিচ্ছি। অবিলম্বে ব্যবস্থা নেব।”
সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চললেও কোনও উপায় মেলেনি বলে দাবি মহেশতলার বর্তমান বিধায়ক তৃণমূলের কস্তুরী দাসের। তাঁর কথায়: “অনেক বার নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু কেউ কথা শোনেননি। যে যাঁর মতো মেশিন বসাচ্ছেন। আমরা এক বার সমস্ত ইউনিটকে এক জায়গায় আনারও চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পারিনি। তবে হাল ছাড়িনি। চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
আক্ষেপের সুর মহেশতলার পুরপ্রধান তৃণমূলের দুলাল দাসের কথায়ও। তিনি বলেন, “আমরা ট্রিটমেন্ট প্লান্ট বসানোর জন্য ব্যবসায়ীদের বলেছিলাম। অনেকেই কথা শোনেননি। এই বিষয়ে পরিবেশ দফতরের সাহায্য দরকার।” |
|
বজবজের উপ-পুরপ্রধান কংগ্রেসের গৌতম দাশগুপ্ত বলেন, “এই সমস্যা নিয়ে রাজ্য সরকার অবিলম্বে সতর্ক না হলে চড়িয়াল সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকায় চাষের কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। চর্মরোগ আরও ছড়িয়ে পড়বে।”
রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রে খবর, এই সমস্যার সমাধান করতে গেলে দূষিত জল পরিশোধন করার যন্ত্র বসানোর প্রয়োজন।
ওই এলাকার পোশাক-শিল্প এতটাই অসংগঠিত যে তাদের পক্ষে আলাদা ভাবে ওই যন্ত্র বসানো সম্ভব নয়। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকের অধীনে একটি প্রকল্প রয়েছে যাতে এই সব ছোট ছোট শিল্প সংস্থার বর্জ্য এক জায়গায় নিয়ে গিয়ে তা পরিশোধন করে খালে ফেলার ব্যবস্থা করা যায়। এই কাজটি করার কথা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, পর্ষদ চড়িয়াল খালের এই রাসায়নিক দূষণের ব্যাপারে এখনও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। পর্ষদের চেয়ারম্যান বিনয়কান্তি দত্ত বলেন, “কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ওই এলাকায় একটি সাধারণ বর্জ্য পরিশোধন কেন্দ্র করা যায় কি না দেখছি। আমরা তাড়াতাড়ি এলাকাটি পরিদর্শনে যাব।” রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী সুদর্শন ঘোষদস্তিদারের বক্তব্য: “এই সমস্যা সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
|
ছবি: পিন্টু মণ্ডল |
|
|
|
|
|