|
|
|
|
অবশেষে পুরনো বাস-মিনিবাস বাতিলের পথে রাজ্য |
অশোক সেনগুপ্ত • কলকাতা |
আদালতের নির্দেশ মেনে অবশেষে ১৫ বছরের পুরনো বাস-মিনিবাস বাতিলের নির্দেশিকা জারি করল রাজ্য সরকার। আর তাতে বেসরকারি বাস ও ট্যাক্সি মালিকদের সমস্যা যেমন বাড়ল, গাড়ির সংখ্যা কমায় যাত্রীদের দুর্ভোগও বাড়তে পারে।
পুরনো গাড়ি বসিয়ে দেওয়ার নির্দেশ মানতে গিয়ে বাস মালিকেরা যাতে সমস্যায় না পড়েন, তার জন্য জওহরলাল নেহরু জাতীয় নগর উন্নয়ন পরিকাঠামো প্রকল্পের (জেএনএনইউআরএম) টাকায় বাস কেনার ব্যবস্থা করেছিল রাজ্য সরকার। কিছু মালিক সেই বাস কিনেছিলেন। অনেকে বাস কেনার বরাতও দিয়ে রেখেছিলেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ভাড়া না বাড়ায় পুরনো বাসে লোকসান গুণে নতুন বাস আর তাঁরা কিনে উঠতে পারেননি। এ বার পুরনো বাস বসিয়ে দেওয়ার নির্দেশ জারি হওয়ায় তাঁরা ঘোর বিপদে পড়লেন। |
|
বাস পরিষেবা স্বাভাবিক রাখতে আদালতের নির্দেশ কার্যকর করার বিষয়টা এত দিন শিকেয় তুলে রেখেছিল পরিবহণ দফতর। কিন্তু ওই মামলার মূল আবেদনকারী সুভাষ দত্ত সম্প্রতি সেই বিষয়টি হাইকোর্টের গোচরে আনেন। এর পরে ২০ জুলাই বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত এবং অসীমকুমার মণ্ডল রাজ্য সরকারের ভূমিকার সমালোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। তার পরই পরিবহণ দফতর তড়িঘড়ি কলকাতা মেট্রোপলিটান অঞ্চলে (কেএমএ) ১৫ বছরের পুরনো বাস, মিনিবাস, ট্যাক্সি-সহ সব ধরনের বাণিজ্যিক গাড়ি বাতিল করার কথা ঘোষণা করল। হাইকোর্ট ১৫ বছরের পুরনো বাণিজ্যিক গাড়ি বাতিলের কথা ঘোষণা করেছিল ২০০৮-এ। তার প্রতিবাদে পরিবহণের মালিক-শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন আন্দোলনে নামে। তখন পরিবহণ ধর্মঘটও হয়। তাই নির্দেশ যথাযথ ভাবে কার্যকর করতে পারেনি রাজ্য। এক সময়ে তা ধামাচাপাও পড়ে যায়।
নতুন সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে আদালতের আগের নির্দেশের উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ১৫ বছরের পুরনো বাণিজ্যিক গাড়িকে আর ‘সার্টিফিকেট অব ফিটনেস’ (সিএফ) দেওয়া হবে না, মঞ্জুর করা হবে না পারমিটও। এই বিজ্ঞপ্তির প্রতিলিপি পাঠানো হয়েছে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, নদিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং উত্তর ২৪ পরগনার আরটিও-দের কাছে।
কিন্তু সরকারের এই নতুন ঘোষণায় বৃহত্তর কলকাতায় প্রায় ৩০% বাস কমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটসের যুগ্ম সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে, “সরকার ভাড়া না বাড়ানোয় এমনিতেই মালিকেরা বাস বার করতে পারছেন না। হাইকোর্টের প্রথম নির্দেশের পরে বেশ কয়েক হাজার বাস বসে গিয়েছে। নতুন নির্দেশে বাসের সংখ্যা আরও কমবে।” পরিবহণমন্ত্রী অবশ্য বলেন, “বিভিন্ন নিগমের বাসের বয়স ১০ বছরের কম। ফলে সরকারি বাসের সংখ্যা কমবে না। বরং শীঘ্রই বিভিন্ন নিগম বেশ কিছু নতুন বাস কিনবে।”
আগের নির্দেশে শহরে প্রায় ৫ হাজার ট্যাক্সি বসে গিয়েছে। বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিমল গুহর দাবি, “এ বার আরও কয়েক হাজার ট্যাক্সি বসে যাবে।” মঙ্গলবার তিনি এক দল প্রতিনিধি নিয়ে এ ব্যাপারে পরিবহণমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। রাজ্যে নথিভূক্ত লরির সংখ্যাও কমবে বলে অনুমান। সরকারি নির্দেশিকায় মহানগরীতে প্রতিটি অটোর ইঞ্জিন ‘টু স্ট্রোক’ থেকে ‘ফোর স্ট্রোক’ করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিবহণমন্ত্রীর অবশ্য দাবি, এই নির্দেশের অনেকটাই ইতিমধ্যে কার্যকরী হয়েছে। |
|
|
|
|
|