কিছু কিছু রোগে অ্যান্টিবায়োটিকের কোনও বিকল্প নেই। কিন্তু সেই অ্যান্টিবায়োটিক যদি প্রয়োগ করা হয় সদ্যোজাতদের শরীরে, তার প্রভাব হতে পারে সুদূরপ্রসারী। অন্তত নিউ ইয়র্কের এক দল বিজ্ঞানীর তা-ই দাবি। নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন এবং নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি ওয়েগনার স্কুল অফ পাবলিক সার্ভিসের এক দল বিজ্ঞানী ১১ হাজার ৫৩২টি শিশুকে গত ১০ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করে এই সিদ্ধাতে এসেছেন। তাঁদের এই গবেষণা ‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ ওবেসিটি’-তে প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞানীদের দাবি, জন্মের পর থেকে ৫ মাস বয়স পর্যন্ত কোনও শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হলে পরবর্তী কালে তাদের কারও কারও মধ্যে স্থূল হওয়া প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু যদি ৫ মাস বয়সের বেশি কোনও শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয় তা হলে পরবর্তী কালে তাদের স্থূলত্বের প্রবণতা অনেক কম হয়।
বিজ্ঞানীরা ওই শিশুদের তিনটি দলে ভাগ করেন। প্রথম দলের শিশুদের ৫ মাস হওয়ার আগেই অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দলের শিশুদের ৬-১৪ মাস বয়সের মধ্যে প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়েছিল। আর তৃতীয় দলের শিশুদের যখন ১৫-২৩ মাস বয়স তখনই কোনও রোগের চিকিৎসায় প্রথম অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। এর পরে ওই শিশুদের সাত বছর বয়স পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের দাবি, যে সব শিশু জন্মের প্রথম পাঁচ মাসের মধ্যেই অ্যান্টিবায়োটিক খেয়েছে তারা অন্য শিশুদের থেকে ২২% বেশি স্থূলত্বের শিকার হয়েছে। কিন্তু অন্য দু’টি দলের ক্ষেত্রে এমন সম্ভাবনা দেখা যায়নি।
এর কারণ হিসেবে ওই বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, অ্যান্টিবায়োটিকের প্রভাবে শিশুদের ক্ষুদ্রান্ত্রে থাকা কিছু প্রয়োজনীয় ব্যাক্টেরিয়া (প্রোব্যাক্টেরিয়া) মরে যায়। শরীরে থাকা এই ব্যাক্টেরিয়াগুলি প্রধানত দেহের পুষ্টিতে সাহায্য করে। বিজ্ঞানীদের মতে, এই ব্যাক্টেরিয়াগুলি মরে যাওয়ায় দেহের বিপাকের ভারসাম্য নষ্ট হয়। যার ফলেই ওই শিশুদের মধ্যে মোটা হওয়ার প্রবণতা দেখা যায় বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। যদিও গবেষক দলের অন্যতম জ্যান ব্লুস্টেনের মতে, “গবেষণা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। স্থূলত্বের আরও কোনও কারণ আছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।” প্রায় একই কথা বললেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অপূর্ব ঘোষ। তিনি জানালেন, “এটা ঠিক গবেষণা নয়, একটা পর্যবেক্ষণ। এ নিয়ে আরও পরীক্ষা দরকার।” তবে ইচ্ছেমতো অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারের যে যথেষ্ট কুফল রয়েছে তা-ও জানান তিনি। |