হয়তো কিছু দিনের মধ্যেই রুপোলি পর্দায় ফের দেখতে পাওয়া যেত বিখ্যাত ‘টপ গান’ সিনেমার সুপুরুষ পাইলট ম্যাভেরিককে। বেশ ক’দিন ধরে সে রকমই ভাবছিলেন পরিচালক টনি স্কট। তবে গত রবিবারের পরই বদলে গেল ‘চিত্রনাট্য’। রবিবারই লস অ্যাঞ্জেলেসের ভিনসেন্ট টমাস ব্রিজ থেকে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন টনি। আপাতত তাই ম্যাভেরিককে ফিরিয়ে আনার যাবতীয় পরিকল্পনাও প্রশান্ত মহাসাগরের জলে।
ঠিক কী হয়েছিল সে দিন?
পুলিশ সূত্রে খবর, রবিবার দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ লস অ্যাঞ্জেলেস পুলিশের দফতরে অনেকে ফোন করেন। তাঁরা প্রত্যেকেই জানান, ভিনসেন্ট টমাস ব্রিজ থেকে কেউ ঝাঁপ দিয়েছে। যদিও তখনও পুলিশ জানত না টনিই সেই ব্যক্তি। দ্রুত লস অ্যাঞ্জেলেসের বন্দর-পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। তাদেরই একটি উদ্ধারকারী দল প্রায় কয়েক ঘণ্টার চেষ্টায় উদ্ধার করে টনির দেহ। মার্কিন উপকূল-রক্ষী বাহিনীর লেফটেন্যান্ট জেনিফার অসবার্ন জানিয়েছেন, টনির গাড়ি থেকে একটি ‘সুইসাইড নোট’-ও মিলেছে। ঘটনার সময় ভিনসেন্ট টমাস ব্রিজে রাখা ছিল টনির প্রিয় কালো রঙের টয়োটা প্রায়াস। ইতিমধ্যেই তাঁর মৃত্যুর কারণ নিয়ে জোরদার জল্পনা শুরু হয়েছে খোদ হলিউডের অন্দরমহলে।
আশির দশক থেকে হলিউডকে একের পর এক দুর্দান্ত ছবি উপহার দিয়েছেন আদতে ব্রিটিশ টনি স্কট। ১৯৮৬ সালে টম ক্রুজ অভিনীত ‘টপ গান’ প্রথম বার টনিকে সাফল্যের স্বাদ দেয়। তার ঠিক চার বছর পরেই ফের টনি-টম জুটির অন্য হিট ‘ডেজ অফ থান্ডার’। এর পর আর ফিরে তাকাননি টনি। ‘ম্যান অন ফায়ার’, ‘দেজা ভু’, ‘দা টেকিং অফ পেলহাম ওয়ানটুথ্রি’- পরপর বেশ কয়েকটি সিনেমার সাফল্য পরিচালক হিসাবে সামনের সারিতে নিয়ে আসে টনিকে। ২০১০-এ মুক্তি পায় ‘আনস্টপেবল’। এর পরে নিজের সিনেমার নামের মতো আক্ষরিক অর্থেই ‘অপ্রতিরোধ্য’ হয়ে ওঠেন তিনি। ঘনিষ্ঠ সূত্রের মতে, সম্প্রতি ভাই রিডলে স্কটের (হলিউডের আর এক বিখ্যাত চিত্র পরিচালক) সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে স্কট ফ্রি প্রোডাকশনস নামে একটি প্রযোজনা সংস্থা গড়েন টনি। সেই সংস্থার প্রথম সিনেমাটি নিয়ে কাজও শুরু করেছিলেন পুরোদমে। পাশাপাশি অভিনেত্রী স্ত্রী ডোনা স্কট এবং দুই যমজ ছেলেকে নিয়ে সংসারও করছিলেন।
কিন্তু রবিবার বদলে গেল পুরো ছবিটাই।
হলিউড জুড়ে এখন শোকের ছায়া। হয়তো বা কেউ ভাবছেন যদি সময়ের চাকা ঘুরিয়ে ফেরত চলে যাওয়া যেত রবিবারের সেই দুপুরে। বাঁচানো যেত টনিকে। ‘রিল লাইফে’ ঠিক যেমনটি টনি নিজেই ঘটিয়েছিলেন তাঁর ‘দেজা ভু’ ছবিটিতে। তবে ‘রিয়েল লাইফে’ সময়ের চাকা ঘোরানোর মতো কোনও চিত্রনাট্য তৈরি করতে পারেননি আটষট্টি বছরের এই প্রৌঢ় পরিচালক। আপাতত তাই অকালমৃত্যু চিরকালের মতো ইতি টেনে দিল ‘আনস্টপেবল’ টনি স্কটের জীবনে।
|
|
ফুলের সাজে ফ্যাশন শো। সোমবার, শহরের এক হোটেলে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী |
|