কোপে ছাত্র-নেতা
এসএফআই সম্মেলনে নজিরবিহীন ‘ই-ক্ষোভ’
সএফআইয়ের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলনে একাংশ কর্মী-সমর্থকের ক্ষোভ এ বার সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে। জেলার ‘ক্ষমতাসীন’ সিপিএম নেতৃত্বের সমালোচনা করে নানা মন্তব্য রয়েছে সেখানে। কেউ লিখেছেন, ‘পার্টিতে এখন গণতন্ত্রের বদলে স্বৈরতন্ত্রের ক্ষমতা অধিকার করেছে। ইতিহাস বলে, এর পরিণতি ভয়ঙ্কর।’ আর এক সমর্থকের বক্তব্য, ‘গণ-সংগঠনে স্বাধীন মতপ্রকাশের অধিকার দিতে হবে। কাজের নিরিখে নেতৃত্বের পদোন্নতি করতে হবে।’
এসএফআইয়ের সম্মেলন নিয়ে এমন ক্ষোভ নজিরবিহীন। বিশেষ করে পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলায়, যেখানে সিপিএমের সাংগঠন বেশ মজুবত, যে জেলার সম্পাদক দীপক সরকারের সাংগঠনিক দক্ষতা বহুচর্চিত। শনিবার ডেবরায় সিপিএমের ছাত্র সংগঠনের জেলা সম্মেলন হয়েছে। দিনটিকে সংগঠনের ‘কালো দিন’ বলেও ফেসবুকে মন্তব্য করা হয়েছে। ক্ষোভের সূত্রপাত সম্মেলনে বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের নেতা প্রসেনজিৎ দাসকে ছেঁটে ফেলা থেকে। প্রসেনজিৎ ছাত্র সংগঠনের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ‘লড়াকু’ নেতা হিসেবেই তাঁর পরিচিতি। এ বার কমিটিতে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে রাখা তো দূর, তাঁকে জেলা কমিটির সাধারণ সদস্যও করা হয়নি। এর প্রতিবাদেই নানা পোস্ট ফেসবুক জুড়ে। অনেকেই এ জন্য সিপিএমের ‘ক্ষমতাসীন’ জেলা নেতৃত্বকে ‘তুলোধনা’ করছেন। এঁদের বক্তব্য, প্রাক্তন এক ছাত্র নেতা দলীয় নেতৃত্বকে ‘ভুল’ বুঝিয়েছেন।
দলীয় স্তরে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, এ বার ছাত্র সংগঠনের জেলা সম্পাদক হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হবেন সৌগত পন্ডা। সভাপতি হবেন সোমনাথ চন্দ্র। আগে সভাপতি ছিলেন সরফরাজ খান। তিনি এ বার ডিওয়াইএফের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হয়েছেন। ফলে সভাপতি পদে ‘নতুন মুখ’ আনতেই হত। কে সভাপতি হবেন, তা নিয়ে তীব্র ‘মতবিরোধ’ দেখা দেয়। সোমনাথ এসএফআইয়ের জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন। সাধারণত, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যই ‘পদোন্নতি’ পেয়ে সম্পাদক বা সভাপতি হন। জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নন, এমন কাউকে কেন সভাপতি করা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। জেলা সিপিএম নেতৃত্বের ঠিক করে দেওয়া প্যানেল মানবেন না বলে জানিয়েও দেন এসএফআইয়ের একাংশ নেতৃত্ব। পরিস্থিতি যে ক্রমশ জটিল হচ্ছে, তা বুঝতে পারেন সিপিএমের ‘ক্ষমতাসীন’ নেতৃত্বও। তাই সম্মেলন শুরুর আগে পর্যন্ত ‘বিদ্রোহীদের’ বোঝানোর চেষ্টা হয়। তবে তাতে কাজ হয়নি।
সম্মেলনেও ‘বিদ্রোহের’ আঁচ পড়তে পারে বুঝে শনিবার ডেবরায় উপস্থিত ছিলেন সুভাষ দে, মেঘনাথ ভুঁইয়া, সমর মুখোপাধ্যায়, উত্তম মণ্ডল, গোপাল প্রামাণিকের মতো সিপিএমের বেশ কয়েকজন নেতা। প্রথম ৩ জন সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য। উত্তম জেলা কমিটির সদস্য। সিপিএম সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, ছাত্র-যুব সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন নেতা সম্মেলনে গিয়েছিলেন। ছিলেন ছাত্র সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সায়নদীপ মিত্র, রাজ্য সভাপতি কৌস্তভ চট্টোপাধ্যায়। এঁদের উপস্থিতিতেই জেলা নেতৃত্বের সমালোচনায় সরব হন একাংশ প্রতিনিধি। সম্মেলনের দলিলে উল্লেখিত প্রসঙ্গ টেনে এক প্রতিনিধি বলেন, “রিপোর্টে বলা হয়েছে, আমাদের মাথার উপর ৩৪ বছরের বামফ্রন্ট সরকারের ছত্রছায়া আর নেই। তাই হয়তো আমাদের সংগঠন তাসের ঘরের মতো ধসে পড়েছে। এখন নেতৃত্ব কিছু ঘটলে ছুটে যাচ্ছেন। যখন বামপন্থী সরকার ছিল, তখন এমন করলে কি আজ আমাদের এই দিন দেখতে হত?”
পরিস্থিতি দেখে দুপুরে এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও জেলা কমিটির সদস্যদের নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক করেন প্রাক্তন ছাত্র-যুব নেতৃত্ব। বোঝান, অনেক বাধা, অনেক চক্রান্ত, তীব্র সন্ত্রাসের মধ্যে সংগঠনকে এগিয়ে যেতে হয়েছে। নতুন কমিটি নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছনো জরুরি। না হলে সমস্যা আরও জটিল হবে। শেষমেশ প্রাক্তন ছাত্র-যুব নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত মেনে নেন এসএফআইয়ের অধিকাংশ নেতা-কর্মী। সন্ধ্যায় সম্পাদক ও সভাপতি হিসেবে যথাক্রমে সৌগত ও সোমনাথের নাম প্রস্তাব করা হয়। একাধিক জোনাল কমিটির প্রতিনিধিরা হাত তুলে সমর্থন না করলেও প্রস্তাব পাশ হয়ে যায়। আগে সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সংখ্যা ছিল ১৮। এ বার তা ২০ হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জনই নতুন। নতুনদের মধ্যে রয়েছেন সৌম্য সরকার, মধুমিতা মুখোপাধ্যায়, কৌশিক মাণ্ডি প্রমুখ। আগে জেলা কমিটির সদস্য সংখ্যা ছিল ৮৬। এ বার ৭৩ হয়েছে। ৫৬ জনই নতুন। দলীয় কর্মীদের ক্ষোভের কথা অবশ্য মানতে চাননি এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক। তাঁর কথায়, “সুষ্ঠু ভাবেই সম্মেলন হয়েছে। সম্মেলনে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে আলোচনা তো হবেই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.