তার পাশে মহাকাশের সব কিছুই ক্ষুদ্র। এমনই এক ‘জগতের’ সন্ধান পেলেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি)-র গবেষকেরা। মহাকাশবিজ্ঞানীরা নক্ষত্রপুঞ্জের এই সমাহারের নাম দিয়েছেন ‘ফিনিক্স গ্যালাক্সি ক্লাসটার’। ‘নেচার’ পত্রিকায় গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।
পৃথিবী থেকে ৭০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে রয়েছে ‘ফিনিক্স’। সাঙ্কেতিক ভাষায় ‘এসপিটি-সিএলজে২৩৪৪-৪২৪৩’। বিশাল এই জগতে হাজার হাজার নক্ষত্রপুঞ্জের বাস। যার মধ্যে আবার রয়েছে প্রায় ৩ লক্ষ কোটি তারা। আমাদের আকাশগঙ্গা নক্ষত্রপুঞ্জ (মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি) তার কাছে নেহাতই নগণ্য। মাত্র ২০ হাজার কোটি তারা রয়েছে আকাশগঙ্গায়। ফিনিক্সের ভর সূর্যের থেকে প্রায় আড়াই হাজার লক্ষ কোটি গুণ বেশি। শুধু তা-ই নয়, বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রত্যেক বছর গড়ে প্রায় ৭৪০টি তারা জন্ম নিচ্ছে ফিনিক্সে। অর্থাৎ এক দিনে অন্তত দু’টো।
এত কিছু কী করে জানলেন, এমআইটি-র গবেষকেরা? |
২০১০ সালে প্রথম ‘ফিনিক্স’কে খুঁজে পান বিজ্ঞানীরা। দক্ষিণ মেরুতে রাখা বিশেষ দূরবীক্ষণ যন্ত্রে ধরা পড়ে তার ‘ছবি’। বিশাল প্যাঁচানো ওই জিনিসটা কী জানতে নড়েচড়ে বসেন বিজ্ঞানীরা। মহাকাশে থাকা নাসার বিশেষ গবেষণাগার ‘চন্দ্র এক্স রে’-এর সাহায্যে ফিনিক্সের পরিবার নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে থাকা আরও ৮টি দূরবীক্ষণ যন্ত্রেও তাঁরা নজর রাখতে থাকেন ফিনিক্সের উপরে।
মহাকাশবিজ্ঞান সংক্রান্ত পুরনো অনেক ধারণাই বদলে দিচ্ছে ফিনিক্সের গঠন। যে কোনও নক্ষত্রপুঞ্জ সমাহারের মাঝখানের অংশটা সাধারণত লাল। ‘রেড অ্যান্ড ডেড’। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এই রঙের অর্থ ওখানে ‘বৃদ্ধ’ তারাদের আস্তানা। ‘ফিনিক্স’-র কেন্দ্রটা কিন্তু এক্কেবারে আলাদা। মৃত্যু উপত্যকা নয়। সে বরং সদ্যোজাত তারার সংসার। মুখ্য গবেষক মিশেল ম্যাকডোনাল্ড বলেন, “ফিনিক্সের মাঝের অংশটা উজ্জ্বল নীল রঙের। ইঙ্গিতটা এ রকম, ওই জায়গাটায় গ্যাসীয় পিণ্ড দ্রুত গতিতে ঠান্ডা হচ্ছে।” বিজ্ঞানীদের মতে, প্রচণ্ড গরম ওই গ্যাসীয় পদার্থ দ্রুত গতিতে ঠান্ডা হওয়ার সময় মহাজাগতিক বিস্ফোরণ ঘটে জন্ম নিচ্ছে নতুন তারা।
প্রবল মাধ্যাকর্ষণ বলে কৃষ্ণ গহ্বর নিজের মধ্যে গিলে ফেলতে পারে যে কোনও কিছুই। তার বদলে সে উৎপন্ন করে প্রচুর পরিমাণ তাপশক্তি। নক্ষত্রপুঞ্জের সংসারে গরম গ্যাসীয় পিণ্ডের ঠান্ডা হওয়াকে আটকায় এই তাপই। কিন্তু তারার জন্মের জন্য ঠান্ডা হওয়াটা খুবই জরুরি। গরম গ্যাসীয় পিণ্ড ঠান্ডা হওয়ার সময়ই বিস্ফোরণ ঘটে নক্ষত্রের জন্ম হয়। ফিনিক্সের ব্যতিক্রমী চরিত্র এবং দ্রুত গতিতে তারাদের জন্ম হতে দেখে বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ দুনিয়ায় কৃষ্ণ গহ্বরও নিজের কাজে ‘ব্যর্থ’।
মৃত তারাদের ‘কবরখানা’ যেখানে, ফিনিক্সে সেখানেই জন্ম নিচ্ছে অগণিত নতুন তারা। রোজ রোজ। আগুনে ছাই হয়ে যাওয়ার পর যে ভাবে নিজের ছাইয়ের মধ্যে পুনর্জন্ম হয় ‘ফিনিক্স পাখির’। বিজ্ঞানীদের চোখে তাই হয়তো সেও ‘আগুনপাখি’ ফিনিক্স। |