নাগরিক মঞ্চের ডাকা ১২ ঘণ্টার বনধে সোমবার বিপর্যস্ত হল জলপাইগুড়ি শহর ও লাগোয়া এলাকা। ভক্তিনগর থানাকে শিলিগুড়ি কমিশনারেটের আওতায় আনার প্রতিবাদে এদিন মঞ্চের তরফে বন্ধ পালনের ডাক দেওয়া হয়। মঞ্চের ডাকা বন্ধের জেরে শহরের দোকানপাট, বেসরকারি বাস চলাচল বন্ধ ছিল। একটি সরকারি বাসে ঢিল ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ। সরকারি দফতরে হাজিরাও ছিল সামান্য। পক্ষান্তরে, ভক্তিনগর থানাকে শিলিগুড়ি কমিশনারেটে আওতায় আনার সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে এদিন শিলিগুড়ির রামকিঙ্কর হলে সভা করে বৃহত্তর শিলিগুড়ি নাগরিক মঞ্চও। ওই সভায় ভক্তিনগর থানা এলাকার ডাবগ্রাম-১ ও ২ এবং ফুলবাড়ি-১ এবং ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কয়েকজন প্রতিনিধিও উপস্থিত ছিলেন। |
জলপাইগুড়ি নাগরিক মঞ্চের যুগ্ম সম্পাদক সুজিত সরকার দাবি করেন, “সাধারণ শহরবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে সর্বাত্মক বনধ হয়েছে। আশা করি এদিনের বনধের সাড়া দেখে রাজ্য সরকার নিশ্চয়ই ভক্তিনগরকে কমিশনারেটে অর্ন্তভুক্ত করার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবেন।” বৃহত্তর শিলিগুড়ি নাগরিক মঞ্চের সভাপতি সুনীল সরকার জানান, ভক্তিনগর থানা এলাকার বাসিন্দারাই শিলিগুড়ি আদালতের আওতায় আসতে চান। তিনি বলেন, “ওই এলাকার বাসিন্দারাও রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তের পক্ষে। এলাকার ১০ হাজার বাসিন্দা আমাদের গণসাক্ষর অভিযানে অংশ নিয়েছেন। আরও সই সংগ্রহ চলছে। সবই মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে ভক্তিনগর থানা এলাকাকে দ্রুত শিলিগুড়ি আদালতের আওতায় আনার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার দাবি জানানো হবে।” জলপাইগুড়ির বনধ সমর্থকদের অভিযোগ, এদিন জেলাশাসক, বিডিও-সহ কয়েকটি অফিসে পুলিশ জোর করে সমর্থকদের হঠিয়ে দিয়ে কর্মীদের অফিসে ঢোকার ব্যবস্থা করে দেয়। সকাল থেকে বিভিন্ন মোড়ে এবং সরকারি দফতরের সামনে অবরোধ করার অভিযোগে ২৭ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার সুগত সেন বলেন, জোর করে জনজীবন অচল করার চেষ্টার অভিযোগে ২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। একটি সরকারি বাসে ঢিল ছোঁড়া হয়।” সকাল থেকেই শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন দফতর ছিল তালা বন্ধ। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর খোলা থাকলেও বেলা বারোটা পর্যন্ত কোনও কর্মী না-যাওয়ায় দুপুরের পর দফতরে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। বনধ সমর্থকদের আর্জি মেনে বিচারকরা আদালত থেকে ফিরে যাওয়ায় সেখানেও স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়। জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশনে যুব কংগ্রেস হলদিবাড়ি-নিউ জলপাইগুড়িগামী প্যাসেঞ্জার ট্রেন অবরোধ করে। যুব কংগ্রেসের জলপাইগুড়ি লোকসভা কেন্দ্রের সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়কে রেল অবরোধের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। শান্তিপাড়ায় এনবিএসটিসির ডিপো থেকে কয়েকটি বাস ছাড়লে কদমতলা মোড়ে বনধ সমর্থকরা সেগুলি আটকে দেন। পূর্ত দফতরের মোড়ে অবরোধের খবর পেয়ে পুলিশ অবরোধকারীদের গ্রেফতার করে। জলপাইগুড়ি বার আসোসিয়েশনের সম্পাদক অভিনন্দন চৌধুরীকেও গ্রেফতার করা হয়। তৃণমূলের জেলা সভাপতি চন্দন ভৌমিক বলেন, “বনধ ডেকে সমস্যার সুরাহা হয় না। এদিন যেভাবে কংগ্রেস ও সিপিএম হাত ধরে অবরোধ করেছে তাতে জলপাইগুড়িতে নতুন রাজনৈতিক অধ্যায় তৈরি হয়েছে।” |
ভক্তিনগর বিষয়ে জলপাইগুড়ি নাগরিক মঞ্চের আন্দোলন এবং এদিন বনধের বিষয়ে তৃণমূলের জেলা নেতা তথা সরকারি আইনজীবী গৌতম দাস দলের সর্বভারতীয় সম্পাদক কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী মুকুল রায়কে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। গৌতমবাবু বলেন, “আমরা বনধের বিরোধী। পুরো বিষয়টি মুকুলবাবুকে জানিয়ে জেলা থেকে নোট পাঠানো হয়েছে।” এদিন বৃহত্তর শিলিগুড়ি নাগরিক মঞ্চের ডাকা সভায় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মানস দাশগুপ্ত, ফোসিনের চেয়ারম্যান প্রহ্লাদ বণিক, সুজিত বসু, প্রদীপ দত্ত, মনোরঞ্জন সাহা, আইনজীবী স্বদেশ সরকার, ফুলবাড়ি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য মতীন রায়, উপ প্রধান দিলীপ রায়, যুব নেতা সাগর মোহান্ত, ওষুধ ব্যবসায়ী শঙ্কর ঘোষ-সহ অন্যান্যরা বক্তব্য পেশ করেন। মানসবাবু বলেন, “ভক্তিনগর থানা এলাকার জনসংখ্যা জলপাইগুড়ি শহরের চেয়ে বেশি। সেই এলাকার মানুষকে ৫০ কিলোমিটার দূরের আদালতে যেতে হবে, এটা মানা যায় না। বরং ভক্তিনগরের বাসিন্দাদের শিলিগুড়ি কমিশনারেটে অন্তর্ভুক্ত করা হলে ওই এলাকারও উন্নয়নে গতি আসবে।” তিনি শিলিগুড়িতে জেলা ঘোষণা এবং শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়িকে ‘টুইন সিটি’ ঘোষণা করার পক্ষে সওয়াল করেন। এদিন মঞ্চের নয়া কমিটি ঘোষণা করা হয়। কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন রতন বণিক। |