|
|
|
|
ডাক প্রাক্তনকে |
সম্পাদক ব্রাত্য, তুমুল ‘ই-ক্ষোভ’ যুব সিপিএমে |
সন্দীপন চক্রবর্তী • কলকাতা |
প্রাক্তন ডাক পেয়েছেন। বর্তমান পাননি। আর তাতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে!
সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআইয়ের সদ্যসমাপ্ত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্মেলনে ‘অতিথি’ হয়ে গিয়েছিলেন মহম্মদ সেলিম। মেদিনীপুরে সমাবেশে প্রধান বক্তা ছিলেন ডিওয়াইএফআইয়ের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সেলিমই। সমাবেশের অদূরে বাড়িতে থাকলেও আমন্ত্রণ পাননি সংগঠনের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক তাপস সিংহ। তাঁর ঘরের মাঠে নিজের সংগঠনের কাছে তাপসবাবু ‘ব্রাত্য’ থেকে যাওয়ায় তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে সিপিএম যুবদের মধ্যে। দলীয় নেতৃত্বকে কাঠগড়ায় তুলে সোস্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন কর্মী-সমর্থকেরা। সচরাচর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনায় সিপিএম নেতৃত্ব যা বলে থাকেন, সেই একই আক্রমণ তাঁদের দিকে ফিরে এসেছে ‘ঘরের লোক’দের কাছ থেকেই! সংগঠনের কাজকর্ম ঘিরে এমন ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ সিপিএম-রাজনীতিতে বিরল!
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএমে গোষ্ঠী-লড়াই সুবিদিত। জেলা সম্পাদক দীপক সরকার ও তাঁর অনুগামীদের চাপে ‘কোণঠাসা’ হয়েই তাপসবাবুকে এক সময় নিজের জেলা ছেড়ে দিল্লিতে সরে যেতে হয়েছিল বলে সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা।
দল ক্ষমতা হারানোর পরেও অতীতের ‘ভুল’ থেকে যে কোনও শিক্ষাই নেতারা নেননি, সেই ক্ষোভই এ বার আছড়ে পড়েছে ফেসবুকে। কেউ লিখেছেন, গত ১০ বছর ধরে একই ভাবে তাপসবাবুকে ‘উপেক্ষা’ করা হচ্ছে। কেউ মন্তব্য করেছেন, ‘পশ্চিম মেদিনীপুরে একটাই পোস্ট! বাকি সব ল্যাম্প পোস্ট’! কেউ বলেছেন, ‘পরিবর্তনের পরেও দলের নেতারা এখনও এক হতে পারেননি’। আবার কারও আক্ষেপ, ‘আমাদের পার্টিতে শুধু পছন্দ-অপছন্দটাই আছে! আর কিছু নেই’। তাপসবাবুদের প্রতি ‘সহমর্মিতা’ জানিয়ে বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ একটাই জেলা সিপিএম নেতৃত্বের ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর অঙ্গুলি হেলনেই যুব সংগঠন তাদের সাধারণ সম্পাদককে তাঁর নিজের জেলায় আমন্ত্রণ জানাতে পারেনি! গোটা ঘটনায় স্বয়ং তাপসবাবু ‘ব্যথিত’। প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে সোমবার রাঁচি থেকে তিনি বলেছেন, “ঘটনাটা প্রত্যাশিত নয়। সর্বভারতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতির মধ্যেই নানা রাজ্যে ঘুরছি। পশ্চিমবঙ্গে একাধিক জেলার সম্মেলনে যাচ্ছি। এমনকী, হুগলির হরিপালের মতো সন্ত্রাস-কবলিত এলাকায় জোনাল সম্মেলনেও আমন্ত্রণ পেয়ে গিয়েছি। অবিভক্ত মেদিনীপুরে ডিওয়াইএফআইয়ের জেলা সম্পাদক ছিলাম। তা হলে সেখানে যেতে পারব না কেন?”
তাঁর মন্তব্য, “এই মনোভাব বাম আন্দোলনের পক্ষে ক্ষতিকারক।”
সেলিমের ব্যাখ্যা, যাদের সম্মেলন, তারাই আমন্ত্রণ বা আবেদন পাঠায়। ওই সংগঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেতার কেমন যোগসূত্র, তাঁর দায়িত্ব এবং কর্মসূচি, এ সব বিবেচনা করে চূড়ান্ত সূচি ঠিক হয়। এই সূত্রেই পশ্চিম মেদিনীপুরের সিপিএম নেতা এবং ডিওয়াইএফআইয়ের বিদায়ী জেলা সম্পাদক (যাঁদের আয়োজনে সম্মেলন হয়েছে) কমল পলমলের বক্তব্য, “এখন এ নিয়ে চর্চা হচ্ছে কেন, বুঝতে পারছি না। আমাদের সংগঠনে নির্দিষ্ট কাউকে ডাকার ব্যাপারে বাঁধা-ধরা নিয়ম নেই। বক্তা চেয়ে আমরা রাজ্য নেতৃত্বের কাছে আবেদন করি। যা অনুমোদিত হয়, তা-ই হয়।” কমলবাবুর আরও বক্তব্য, “তাপসদা’র সঙ্গে আমাদের ভালবাসার সম্পর্ক। আমাদের অত্যন্ত কাছের মানুষ। এর মধ্যে অন্য কোনও ব্যাপার নেই।” আবার গোটা বিতর্ককে ‘অর্থহীন’ আখ্যা দিয়ে যুব সংগঠনের রাজ্য সভাপতি প্রতিম ঘোষের বক্তব্য, “তাপস’দা এখন ঝাড়খণ্ডে। নানা রাজ্যে সম্মেলন প্রক্রিয়া চলছে। সেই জন্যই ব্যস্ত আছেন।”
যদিও ঘটনা হল, তাপসবাবু ঝাড়খণ্ড গিয়েছেন মেদিনীপুরের সম্মেলন হয়ে যাওয়ার পরে। শনিবার মেদিনীপুরের সমাবেশে সেলিম যখন বক্তৃতা করছেন, তাপসবাবু তখন বাড়িতে! ১১ অগস্ট ক্ষুদিরামের মৃত্যু দিবস বলে তিনি সাধারণত মেদিনীপুরেই নানা কর্মসূচিতে থাকেন। ডিওয়াইএফআই সূত্রের খবর, সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানালে সাধারণ সম্পাদক অনায়াসে ‘সম্মতি’ দিতেন। তাঁর ডায়েরির ‘ডেট’ সে দিন ফাঁকাই ছিল!
দলের অন্দরের মতবিরোধকে কমিউনিস্ট রাজনীতিতে ‘অন্তর্দলীয় সংগ্রাম’ বলা হয়ে থাকে। সেই সংগ্রামই দ্বিগুণ উদ্যমে শুরু করার দাবি উঠেছে ফেসবুকে। কেউ আবার পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কত দিন? প্রতিহিংসাপরায়ণতাকে অন্তর্দলীয় সংগ্রাম বলা যায়’? গোটা ঘটনাপ্রবাহে সিপিএমের এক কেন্দ্রীয় নেতার প্রতিক্রিয়া, “ক্ষমতায় থাকলে দলে অনেক সময় নানা কারণে বিভিন্ন শিবির তৈরি হয়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ক্ষমতা হারিয়েও কোনও পরিবর্তন নেই!”
|
|
|
|
|
|