|
|
|
|
|
|
|
সিগনেট-এর নতুন কাব্যগ্রন্থ |
অপুর কলমে |
আত্মীয়-পরিজনদের জন্মদিনে তিনি উপহার দেন নতুন লেখা একটা করে কবিতা। আবৃত্তিকার হিসেবে বহু পরিচিত, কিন্তু নিজের কবিতা পড়তে লজ্জা পান। অভিনেতা হিসেবে যিনি বিপুল ভাবে আত্মপ্রকাশ করেন, কবি হিসেবে তিনিই যেন একা একা, সঙ্গোপন। আর তাই নিয়ে, খানিকটা মজা করেই, ছড়া লিখেছিলেন অমিতাভ চৌধুরী, ‘নুন-সাহেবের ছেলে তিনি/ সত্যজিতের নায়ক,/ অভিনয়ে ছাড়েন তিনি/ ফাস্টোকেলাস শায়ক।/ কখন তিনি অপুবাবু/ কখন তিনি ফেলুদা,/ মাঝে মাঝে পদ্য লেখেন/ যেন পাবলো নেরুদা।’ কিন্তু কবিতাকে ছাড়েননি অপু। ১৯৫৯-এ প্রথম ছবি ‘অপুর সংসার’। সে ছবিতেও কবি অপুকে দেখা গিয়েছে। আর কবি সৌমিত্র-র প্রথম বই, ১৯৭৫-এ, জলপ্রপাতের ধারে দাঁড়াব বলে। ৫৪টি কবিতার সেই সংকলন প্রথম প্রকাশ করেছিল অন্নপূর্ণা পাবলিশিং হাউস। প্রচ্ছদশিল্পী? সত্যজিৎ রায়। |
|
তার পরে একে একে ব্যক্তিগত নক্ষত্রমালা, শব্দেরা আমার বাগানে, পড়ে আছে চন্দনের চিতা, হায় চিরজল, পদ্মবীজের মালা, হে সায়ংকাল, জন্ম যায় জন্ম যাবে...। আর বছর দুয়েক আগে বর্ণপরিচয় থেকে প্রকাশিত হয়েছে তাঁর কবিতার বই হলুদ রোদ্দুর। কবি সৌমিত্র-র প্রকাশ অনিয়মিত, কিন্তু বহমান। সেই ধারাতেই সিগনেট প্রেস থেকে প্রকাশিত হল সৌমিত্রর সাম্প্রতিক কবিতার সংকলন মধ্যরাতের সংকেত। ৪৮টি কবিতার এই সংকলনে স্বতন্ত্র এক সৌমিত্র, শুরুর আগের শুরুতে লিখেছেন: ‘আমি কবিতার চলতে শুরু করার সাক্ষী/ আমি দেখতে পেয়েছিলাম/ চলতে চলতে সে এই শহর ছাড়িয়ে যাচ্ছে/ প্রথম মেঘ যেমন ক’রে আকাশ ঢেকে ফেলতে থাকে/ প্রথম প্রেম যেমন...’ সেই প্রথম প্রেম কবিতা, আবার প্রকাশ্য শরীর পেল, পুলু কিংবা অপু-র কলমে। সঙ্গের ছবিটি ‘অপুর সংসার’কে মনে পড়ালেও তার সঙ্গে সম্পর্ক নেই এ ছবির। “ওটা একটা মজার ছবি। একটা সিনেমা-পত্রিকার জন্য তুলেছিল সুকুমার রায়। সেটা ১৯৬১-৬২ হবে, তখন থাকতাম মির্জাপুর স্ট্রিটে,” স্মৃতিতে ডুবে বলছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ডান দিকে ‘মধ্যরাতের সংকেত’-এর প্রচ্ছদ।
|
হরিহরের পাঁচালি |
‘সেদিন আমার ছোট ছেলের নামটা ভুলে পর্যন্ত ভুলে গিয়েছিলুম অথচ পার্ট কখনও ভুলে যাই না ও নেশা যে রক্তের মধ্যে।... বাড়িতে বসে নিজেকে ক্লান্ত লাগে, একটানা বেশিক্ষণ কথা বলতে কষ্ট হয়। কিন্তু... মঞ্চ যেন রেসের মাঠ একবার মাঠে নামলে একটানা দৌড়। তখন আর থামার চিন্তা না তার অবকাশও নেই। অবকাশ আমি জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত চাইব না।’ কানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের এ-রচনা অভিনেতা হিসেবে তাঁর মনটির কাছে নিয়ে যায়। এমনই কিছু রচনা নিয়ে সদ্য প্রকাশ পেল তাঁর হরিহরের পাঁচালি/ আত্মস্মৃতি ও অন্যান্য রচনা (সূত্রধর, ৮০.০০)। ‘ক্ষীণতনু হলেও এই প্রথম গ্রন্থাকারে কানু বন্দ্যোপাধ্যায় আত্মপ্রকাশ করলেন।’ নন্দন-এর সঙ্গে সূত্রধর-এর যৌথ অনুষ্ঠানে বইটি প্রকাশ করলেন সন্দীপ রায়, আলাপচারিতায় ছিলেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় সূর্য বন্দ্যোপাধ্যায় দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায় রুশতী সেন। দেখানো হল ‘পথের পাঁচালী’ ও ‘অপরাজিত’।
|
|
ডোভার লেন |
ডোভার লেন মানেই জানুয়ারির শীতের রাত আর উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত। কিন্তু শুধুই কি আর একটি আয়োজনে আটকে থাকতে পারে একষট্টি বছরের ‘দ্য ডোভার লেন মিউজিক কনফারেন্স’! মোটেও না, সারা বছর জুড়ে তাই ছোট-বড় কয়েকটি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসর। যেমন সংস্থার অফিসেই (১৮/২ ডোভার লেন) ১৪ অগস্ট সন্ধে ছ’টায় অনুষ্ঠান। কণ্ঠসঙ্গীতে ব্রজেশ্বর মুখোপাধ্যায়, তবলা লহরায় অনির্বাণ দাশগুপ্ত অরিন্দম ভদ্র বর্মন প্রতীক চৌধুরী। ২৩-২৪ অগস্ট বিড়লা আকাদেমিতে কণ্ঠসঙ্গীতে রাঘব চট্টোপাধ্যায় সমীহন কাশালকর সুজিত বসু আর বাঁশিতে সুদীপ চট্টোপাধ্যায়। সঙ্গে থাকবেন সংস্থার মেধা সন্ধান প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থানাধিকারীরা। সবার আমন্ত্রণ।
|
প্রত্নবিদ |
প্রত্নতাত্ত্বিক অশোক দত্তের জন্ম ময়মনসিংহে। বাবার চাকরির সুবাদে এই বঙ্গে আসা। প্রত্নতত্ত্ব এবং প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি, দুটিতেই এম এ, পরে পিএইচ ডি। ১৯৮২-তে জার্মান সরকারের ফেলোশিপ নিয়ে যান ন্যুরেমবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়। ’৮৬-তে যোগ দেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বহু উৎখননে যুক্ত ছিলেন, বিশেষত মোগলমারি-তে এ রাজ্যের বৃহত্তম বৌদ্ধবিহার উৎখনন তাঁকে খ্যাতি এনে দেয়। শেষ দিন পর্যন্ত মোগলমারি-ই ছিল তাঁর ধ্যানজ্ঞান। গবেষক ও শিক্ষক হিসেবে সুপরিচিত মানুষটি হঠাৎই চলে গেলেন ৩১ জুলাই। ১৮ অগস্ট তিনটেয় আশুতোষ জন্মশতবার্ষিকী হলে অশোক দত্তকে স্মরণ করবেন কাছের মানুষরা।
|
মহেন্দ্র-স্মরণ |
জীবনী লেখা অপছন্দ করতেন। নিজে জানাননি জীবনকথা। শেষের দিকে সর্ববন্ধন মুক্ত অবস্থায় ছবি তুলতে দিয়েছিলেন। বলতেন ‘‘বইগুলোর ভেতর ‘আমি’ রয়ে গেলুম’’। তিনি মহেন্দ্রনাথ দত্ত। বিবেকানন্দের দ্বিতীয় ভাই। বহু ভাষা জানতেন। বিভিন্ন বিষয়ে দখল ছিল। অর্থাভাবের দরুন যে বিষয়ের ওপর বলতেন, তরুণ শ্রোতারা লিখে রাখতেন। যা পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য, শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের অনুধ্যান, কাশীধামে স্বামী বিবেকানন্দ, প্যালেস্টাইন ভ্রমণ কাহিনী ও ইহুদী জাতির ইতিহাস, কলিকাতার পুরাতন কাহিনী ও প্রথা, প্রাচীন ভারতের সংশ্লিষ্ট কাহিনী ইত্যাদি। ১৯৫৬-র বিজয়া দশমীর দিন তিনি প্রয়াত হন। ১০ অগস্ট তাঁর ১৪৪-তম জন্মতিথি উপলক্ষে ‘মহেন্দ্র প্রজ্ঞাপীঠ’-এ স্মরণ অনুষ্ঠান করল ‘মহেন্দ্র পাবলিশিং কমিটি’। এই উপলক্ষে ‘মহেন্দ্র সেবা কেন্দ্র’ (হোমিয়ো) নতুন করে চালু হল। সূচনা হল নতুন যোগসূত্র mohendrapeeth@gmail.com।
|
স্পার্টাকাস |
দাসত্ব আর পরাধীনতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে যে মানুষটির নাম আজও মুখে-মুখে ফেরে সেই স্পার্টাকাস-কে নিয়ে মস্কোর বলশয় থিয়েটারের প্রযোজনায় তৈরি চলচ্চিত্রটি দেখানো হবে গোর্কি সদনে ১৩ অগস্ট সন্ধে সাড়ে ছ’টায়। স্বাধীনতার ৬৫ বছর পূর্তিতে আইজেনস্টাইন সিনে ক্লাবের আয়োজন। ১৪-১৮ ওই একই সময়ে নানা দেশের মানুষের স্বাধীনতা বা গণ-জাগরণের ছবি: ব্যাটল অব আলজিয়ার্স, কুয়েমাদা, কানগামবা, ব্লাডি সানডে। সিনেমার পাশাপাশি প্রদর্শনী স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সংগৃহীত স্বদেশি রেকর্ড, দেশলাই, চিঠিপত্র, ছবি, ইস্তাহারের। আইজেনস্টাইন সিনে ক্লাবের সঙ্গে ফোরাম ফর ফিলাটেলিস্টস অ্যান্ড কালেক্টার্স।
|
মিউজিক |
বলিউড থেকে কীর্তন যে কোনও গান বাঁচিয়ে রাখতে বিশেষ ভূমিকা নিয়েছে ‘মুভমেন্ট ফর আন্ডারস্ট্যান্ডিং সঙ্গীত অ্যান ইন্ডিয়ান কনসেপ্ট’ সংক্ষেপে ‘মিউজিক’। মূল কাজ গান সংরক্ষণ হলেও, ওয়ার্কশপ, সেমিনার বা নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গানের প্রচারেও তারা বিশেষ উদ্যোগী। গান-বাজনার পাশাপাশি সঙ্গীত সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র সংরক্ষণের মাধ্যমেও তারা গানকে বাঁচিয়ে রাখতে সচেষ্ট। রয়েছে ‘লিসনার্স ক্লাব’— যেখানে আগ্রহী শ্রোতারা গান শোনা থেকে শুরু করে গান সংক্রান্ত যে কোনও তথ্য পেতে পারেন। বাংলা কীর্তন এবং সত্যজিৎ রায়ের প্রথম সঙ্গীত প্রধান ছবি গুপী গাইন বাঘা গাইন-এর ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সংস্থাটি প্রকাশ করেছে বিশেষ সংকলন। সম্প্রতি এদের উদ্যোগে পালিত হল গুরু জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের শতবার্ষিকী অনুষ্ঠান, স্মরণ করা হল সদ্যপ্রয়াত রবীন্দ্রসঙ্গীত বিশেষজ্ঞ সুভাষ চৌধুরীকে।
|
রাজার ভূমিকায় |
শকুনি থেকে রাজা। বিপ্লব চট্টোপাধ্যায় ফের মঞ্চে। শহরের মঞ্চে এক সময় তাঁর ‘শকুনির পাশা’ আলোড়ন তুলেছিল। রবীন্দ্রনাথের সার্ধশতবর্ষে এ বার তিনি ‘রাজা’ নাটকের রাজা। ‘ইনস্টিটিউট অব ফ্যাকচুয়াল থিয়েটার আর্টস’ বা ইফটা-র প্রযোজনায় আগামিকাল মিনার্ভা থিয়েটারে রবীন্দ্রনাথের নাটক অবলম্বনে ‘রাজা...দ্য কিং অব ডার্ক চেম্বার’-এ রাজার ভূমিকায় দেখা যাবে বিপ্লবকে। গত বছর নাটকটির শতবর্ষপূর্তিও হয়েছে। নাটকটির নির্দেশক দেবাশিস দত্ত।
|
অন্য চিত্রাঙ্গদা |
বেশ কিছু কাল যাবৎ উত্তরবঙ্গের জনজাতীয় মানুষের প্রাণে সাম্প্রদায়িকতা বা বিচ্ছিন্নতার বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথের গানের মর্মবাণী পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করছেন জলপাইগুড়ির মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস, গভর্নমেন্ট গার্লস হাইস্কুলের শিক্ষিকা। সাংস্কৃতিক সংস্থা ‘রবীন্দ্রবীথি’র সম্পাদিকাও তিনি। ইতিমধ্যেই উত্তরের জনজাতীয় ভাষায় অনূদিত রবীন্দ্রগান গেয়ে দিল্লি আর কলকাতায় সাড়া ফেলেছেন। সাদরি-রাজবংশী-মেচ ভাষায় অনূদিত রবীন্দ্রগানের অডিয়ো-সিডি-ও বেরিয়েছে তাঁর: ‘মাটির বুকের মাঝে বন্দী যে জল...’, সঙ্গে পাঠে সতীনাথ মুখোপাধ্যায়। কবির ‘চিত্রাঙ্গদা’ এই প্রথম সাদরি ভাষায় রূপায়িত করে মঞ্চস্থ করছে ‘রবীন্দ্রবীথি’। ১৯ অগস্ট রবিবার সকাল ১০টা থেকে শিশির মঞ্চে। ‘সাদরি’ জনজাতির হেমলতা বাঘওয়ার এই উদ্যোগে সহায়তা করেছেন মণিদীপাকে। অলকানন্দা রায় আর অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সংবর্ধিত করা হবে ওই অনুষ্ঠানে।
|
বিশেষ কেন্দ্র |
|
স্বাধীনতা অর্জনের কিছু আগে ভবানীপুরের বাড়িতে সুভাষচন্দ্র বসু ঘনিষ্ঠ বন্ধু আত্মত্যাগী বিপ্লবীদের স্মৃতিতে কলকাতায় একটি স্থায়ী কেন্দ্র গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন। রবীন্দ্রনাথ প্রস্তাবটি সমর্থন করেন। কেন্দ্রটির নামকরণ করা হয় ‘মহাজাতি সদন’। বাড়িটির নকশা তৈরি করেছিলেন শিল্পী সুরেন্দ্রনাথ কর (সঙ্গে তারই ছবি)। ১৯৩৯-এর ১৯ অগস্ট রবীন্দ্রনাথ এই কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু কলকাতা থেকে সুভাষের অন্তর্ধানে কাজ স্তব্ধ হয়ে যায়। জমি-বাড়ি ব্রিটিশ সরকার নিয়ে নেয়। স্বাধীনতার পর উদ্যোগী হন বিধানচন্দ্র, সব জট ছাড়িয়ে ১৯৫৮-এর ১৯ অগস্ট তিনিই এর দ্বারোদ্ঘাটন করেন। গড়ে তোলা হয় স্বাধীনতা সংগ্রামের তিনটি স্থায়ী প্রদর্শনী। সংযোজিত অংশে রয়েছে ‘বিধানচন্দ্র গ্রন্থাগার’। বিধানচন্দ্রের ব্যক্তিগত সংগ্রহের বারো হাজার বই এখানে সংরক্ষিত, আছে পূরণচাঁদ নাহারের সাময়িক পত্রপত্রিকা ও বাণী রায়ের মূল্যবান গ্রন্থ ও পত্রিকাসংগ্রহও। ২০০৫ থেকে এটি ‘ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও রাজনৈতিক আন্দোলনের বিশেষ গ্রন্থাগার ও গবেষণা কেন্দ্র’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। শুরু হয়েছে পত্রপত্রিকা থেকে বিভিন্ন বিষয়ে সূচিকরণের কাজ, গবেষকরা যা থেকে নিয়মিত সাহায্য পাচ্ছেন। তবে এমন একটি গবেষণাকেন্দ্রে আরও গবেষক প্রত্যাশিত।
|
দুর্লভ দেশগান |
আজকাল অগস্ট মাসের ক’টি দিন ক’টি বাঁধাধরা গান ছাড়া দেশাত্মবোধক গান বস্তুটি প্রায় অপ্রাপ্য হয়ে গিয়েছে। তাই হঠাৎ যখন বহু যুগের ও পার হতে শোনা যায় নজরুলের ‘শিকল পরা ছল মোদের’ কিংবা দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধাও ধাও সমরক্ষেত্রে’, এমনকী ‘বঙ্গ আমার জননী আমার’, কিংবা মুকুন্দ দাসের ‘বান এসেছে মরা গাঙে’ নতুন করে শিহরন জাগায় আমাদের ঐশ্বর্যের উত্তরাধিকার। ‘আমার দেশ’ সিডি-টিতে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ইতিহাসের অধ্যাপক সুগত বসু-র গলায় এ বার দশটি দেশের গান, শোনা-কমশোনা-নাশোনা মিশিয়ে। নজরুল-দ্বিজেন্দ্রলাল-মুকুন্দ দাস ছাড়াও আছেন অতুলপ্রসাদ, মোহিনী চৌধুরি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। আছে রবীন্দ্রনাথের সুরে ‘বন্দে মাতরম্’। আছে সম্পূর্ণ ‘জনগণমন’, অর্থাৎ তার পাঁচটি গোটা স্তবক। তবে গানের নির্বাচনের থেকেও বেশি উল্লেখযোগ্য গানের গায়কী। এক হারিয়ে-যাওয়া গায়কী সুগত বসু-র গলায়, বিশ শতকের প্রথমার্ধে যে ভাবে গানগুলি গাওয়া হত, সেই দূরস্মৃতির বাহক। ছোটবেলায় দিলীপকুমার রায়ের গান শুনতেন। তাই কি গলায় বসে গিয়েছিল ওই গায়কী? দুর্লভ এই দেশগান-সংকলনটি ভাবনা রেকর্ডস-এর। |
|
উন্মুক্ত ব্রাত্যজন |
আমি জন্মেছিলাম “ম্লেচ্ছ” হয়ে শেষজীবনে রবীন্দ্রসংগীত জগতে হয়ে গেলাম “হরিজন” কেন “ম্লেচ্ছ” এবং কী করে “হরিজন” এই ব্যাপারটি জানবার ঔৎসুক্য হয়তো অনেকের হতে পারে কারণ যতই বিনয় করি না কেন, আমার বেশ ভালো করেই উপলব্ধি হয়েছে যে অগণিত রবীন্দ্রসংগীতপ্রেমিকদের অকৃত্রিম এবং অকুণ্ঠ ভালোবাসা সারাজীবন পেয়ে আমি ধন্য হয়েছি।’ লিখেছিলেন দেবব্রত বিশ্বাস, তাঁর ব্রাত্যজনের রুদ্ধসঙ্গীত-এ। কিন্তু সেই ব্রাত্য থাকার সময় কেটে গিয়েছে। রবীন্দ্র সার্ধশতবর্ষে এবং তাঁর শতবর্ষে তাঁকে নিয়ে নানা আয়োজন। বিশেষ করে ‘দেবব্রত বিশ্বাস শতবর্ষ উদ্যাপন কমিটি’র আয়োজনে বছরভর চলল নানা ভাবে জর্জদা-স্মরণ। তারই সমাপ্তি অনুষ্ঠান ২১ ও ২২ অগস্ট বাংলা আকাদেমি ও রবীন্দ্রসদনে। প্রকাশিত হবে স্মারক গ্রন্থ, জর্জদাকে নিয়ে বরুণকান্তি চট্টোপাধ্যায়ের উদ্যোগে নবনির্মিত তথ্যচিত্র ‘উন্মুক্ত ব্রাত্যজন’-এর সিডি। বলবেন গোলাম মুরশিদ, সমীর গুপ্ত, সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। গানে প্রমিত সেন, শর্মিষ্ঠা দত্ত পাঠক, শ্রেয়া গুহঠাকুরতা ও কাকলি রায়ের পরিচালনায় ‘গান্ধার’। থাকছে জর্জদা-র গানের সঙ্গে অনুষ্ঠানের সহ-আয়োজক ডান্সার্স গিল্ডের নাচও। |
|
|
|
প্রয়াণ |
ছোটবেলায় মনে দাগ কেটেছিল কুমোরটুলি, বাকি জীবন কেটে গেল সেই মূর্তির সাধনায়। ভাস্কর সুনীল পালের জন্ম ১৯১৭-তে, গিরিশ পার্ক অঞ্চলে। আর্ট কলেজে শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন মুকুল দে-কে। ওঁর কাজের গভীরতায় মুগ্ধ হয়েছিলেন মুকুল দে, ফলে গড়ে উঠেছিল দু’জনের মধ্যে সহজ সম্পর্ক। বেনেটোলার মধু দাঁ-র বাড়িতে সাহিত্যিকদের আড্ডায় ঋদ্ধ হয়েছেন সুনীলবাবু। ওঁর জীবনের এমত বহু স্মৃতি ধরা রয়েছে রাজ্য চারুকলা পর্ষদ প্রকাশিত ও প্রশান্ত দাঁ সম্পাদিত কিছু স্মৃতিকথা কিছু শিল্পভাবনা বইটিতে। ১৯৪২-এ আমন্ত্রণ পেয়ে চলে যান নেপালের রাজদরবারে অতিথি হয়ে। সেখানে রাজা ত্রিভুবন ও মন্ত্রী যোধা সমসের-এর মূর্তি সহ আরও কয়েকটি কাজ রয়েছে। অম্বেডকর, অমল হোম, বিধান রায়, বাঘা যতীন, চার্লি চ্যাপলিন এমত বহু প্রতিকৃতিতে ছড়িয়ে আছে সুনীলবাবুর কাজের স্বাক্ষর। তবে শিল্পীর মতে শ্রেষ্ঠ কাজ অবনীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতিটি। আর্ট কলেজে রক্ষিত এই প্রতিকৃতির জন্য শিল্পগুরু সিটিং দিয়েছিলেন দক্ষিণের বারান্দায়। পার্ক ইনস্টিটিউশন-এর পাশে চিত্তরঞ্জন দাস এ শহরে ওঁর প্রথম উন্মুক্ত ভাস্কর্য। ম্যুরাল করেছেন ব্যারাকপুরের গাঁধীঘাটে, নকশা করেছেন পুরুলিয়া রামকৃষ্ণ মিশনের। এমনকী মিনার, বিজলি, ছবিঘর সিনেমাহল তিনটির ভেতর রয়েছে ওঁর করা নকশা। আর্ট কলেজে ভাস্কর্য বিভাগের প্রধান থাকার সময় ওঁর কাছে তৈরি হয়েছেন বর্তমান প্রজন্মের বহু খ্যাতকীর্তি শিল্পী-ভাস্কর। ওঁর কাজ সংগৃহীত হয়েছে নানা সংগ্রহে, পেয়েছেন অনেক পুরস্কার। খোলা মনের মানুষটি ছিলেন অসম্ভব প্রচারবিমুখ। ২ অগস্ট চলে গেলেন শিল্পী। আজ সন্ধে ছ’টায় ‘অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস’-এর কনফারেন্স হলে আয়োজিত হয়েছে স্মরণসভা। আয়োজনে ‘ক্যালকাটা স্কাল্পটর্স অ্যান্ড কনট্রাইভান্স’। |
|
|
|
|
|
|
|