কাঁচামাল কয়লার দাম লাফিয়ে বাড়লেও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোর বিরোধী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে বণ্টন কোম্পানি ও বিদ্যুৎ পর্ষদের লোকসানের বহর প্রতি দিন বেড়ে চলেছে। এ দিকে, বছর বছর চাহিদা বাড়ায় বাড়তি বিদ্যুতের সংস্থান করাটাও প্রয়োজন। এই উভয়সঙ্কটে পড়ে এ বার সস্তার জলবিদ্যুতে ভরসা রাখছেন রাজ্যের বিদ্যুৎকর্তারা। কর্তারা মনে করছেন, রাজ্যের গ্রিডে দামি তাপবিদ্যুতের সঙ্গে কম দামের জলবিদ্যুৎ থাকলে, ইউনিট পিছু মাসুলের গড় দাম খানিকটা কম রাখা যাবে। এ জন্য সিকিম, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্য রাজ্য ও ভুটানের সঙ্গে চুক্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতর।
রাজ্যে এখন সারা বছর যে বিদ্যুৎ ব্যবহার হয়, তার ৯০ শতাংশই তাপবিদ্যুৎ। বাকিটা জলবিদ্যুৎ। রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, প্রতি বছর কয়লার দাম বাড়ায় তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বাড়ছে। সেই বোঝা গিয়ে চাপছে গ্রাহকদের ঘাড়ে। আবার দেশের তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলি অনেক সময় চাহিদা মতো কয়লা পাচ্ছে না। ওই কর্তার দাবি, ভবিষ্যতে এই সমস্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলেই জলবিদ্যুৎ কেনার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে।
জলবিদ্যুৎ কেনার সুবিধা কী?
যে কোনও নতুন জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে বিদ্যুতের দাম প্রথম দিকে কিছুটা বেশি হলেও পরে তা কমতে থাকে। কারণ জলবিদ্যুতের কাঁচামাল প্রাকৃতিক জল হওয়ায় উৎপাদন খরচ বছর বছর বাড়ে না। বাজারে বিদ্যুৎ বিক্রি করে প্রকল্পের খরচ উঠে গেলে, তখন অনেকটা কম দামেই বিদ্যুৎ বিক্রি করতে পারে উৎপাদক সংস্থাগুলি। আগাম চুক্তি করে কম দামের ওই বিদ্যুৎ পাওয়ার কৌশলই নিতে চায় রাজ্য। বিদ্যুৎ দফতর সূত্রে খবর, কমপক্ষে ২০-২৫ বছরের জন্য এই চুক্তি করা হবে।
এক বিদ্যুৎ কর্তা বলেন, “আগামী দিনে রাজ্যের গ্রিডে ৭০ শতাংশ তাপবিদ্যুৎ ও ৩০ শতাংশ জলবিদ্যুতের জোগান রাখতে চাই আমরা। তাই এখন থেকেই আমরা নতুন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলির সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার জন্য আলোচনা শুরু করেছি।”
রাজ্যের এখন নিজস্ব জলবিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১৭০ মেগাওয়াটের মতো। প্রয়োজন মেটাতে সিকিম ও ভুটান থেকেও জলবিদ্যুৎ কেনা হয়। উত্তরবঙ্গের তিস্তা ও রঙ্গিত নদীর উপরে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার নিজস্ব দু’টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ আগামী আর্থিক বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। ওই দু’টি কেন্দ্র থেকে রাজ্য প্রতি দিন ২৬০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ পাবে। এ ছাড়াও তিস্তা বাজারে কেন্দ্রীয় সংস্থা এনএইচপিসি (ন্যাশনাল হাইড্রো পাওয়ার কর্পোরেশন) নতুন দু’টি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি করছে। সেগুলি থেকেও ২৯২ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ মিলবে, যার পুরোটাই রাজ্য কিনে নেবে বলে ইতিমধ্যেই চুক্তি করে ফেলেছে।
কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রকও এখন জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দিতে চাইছে। কেন্দ্রীয় সংস্থা সেন্ট্রাল ইলেকট্রিসিটি অথরিটি মনে করছে, আগামী দিনে সারা দেশে আরও দশ লক্ষ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। এ ছাড়াও ভুটানে ২০২০ সালের মধ্যে যাতে বাড়তি ১০ হাজার মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হয়, তার জন্য উদ্যোগী হয়েছে দুই দেশের সরকার। সে ক্ষেত্রে ভুটানে উৎপন্ন জলবিদ্যুতের অনেকটাই পশ্চিমবঙ্গ কিনতে পারবে বলে বিদ্যুৎ কর্তারা আশাবাদী। |