কাউন্সিলররা কেউ দুর্নীতিতে জড়ালে তাঁকে গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) থেকে বের করে দেওয়া হবে বলে সতর্ক করলেন বিমল গুরুঙ্গ। মঙ্গলবার সকালে দার্জিলিংয়ের ভানু ভবনে জিটিএ’র চিফ এগজিকিউটিভ গুরুঙ্গ নির্বাচিত সদস্য এবং আধিকারিকদের নিয়ে প্রথম বৈঠক করেন। পাশাপাশি, কাজে ফাঁকি দেওয়া তিনি বরদাস্ত করবেন না বলে হুঁশিয়ারি দেন। সেই সঙ্গে তিনি যে দ্রুততার সঙ্গে পাহাড়ের স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল ফেরাতে চাইছেন, সে কথা বোঝাতে তাকদা ব্লকের টপলিং এলাকায় ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকায় ১০ শয্যার হাসপাতাল তৈরির সিদ্ধান্ত ঘোষমা করেন। সহ্গে সঙ্গেই টাকা অনুমোদন করে বুধবার থেকেই কাজ শুরুর নির্দেশ দেন গুরুঙ্গ। এ দিন গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) চালানোর জন্য উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেন বিমল গুরুঙ্গ। মঙ্গলবার জিটিএ’র প্রথম বৈঠকের পরে ওই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটির আমন্ত্রিত সদস্য হিসেবে ডুয়ার্সের আদিবাসী নেতা জন বার্লার নাম রয়েছে। এ ছাড়াও ওই তালিকায় তরাই ও ডুয়ার্সের আরও ৩ জনের নাম রয়েছে। কার্শিয়াং ও কালিম্পং থেকে ৪ জনকে আমন্ত্রিত সদস্য করা হয়েছে। এ ছাড়াও গুরুঙ্গ এদিন জিটিএ’ ডেপুটি চিফ এগজিকিউটিভ হিসেবে রমেশ আলের নাম ঘোষণা করেন। উপদেষ্টা কমিটির প্রধান হিসেবে ত্রিলোক দেওয়ান এবং এলবি পারিয়ারের নাম ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া ‘জিটিএ’ এগজিকিউটিভ কমিটির সদস্য হিসেবে ৭ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। সেখানে রোশন গিরি, বিনয় তামাং |
রয়েছেন। জিটিএ-এর চিফ এগজিকিটিউভ এ দিন বলেন, “সীমাহীন দুর্নীতির কারণে দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদকে পাহাড়ের মানুষ ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছেন। জিটিএ’তে যাতে দুর্নীতি প্রবেশ করতে না পারে সেটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। আর কেউ কাজে ফাঁকি দিলেও বরদাস্ত করা হবে না। যারা ওই সব কাজের সঙ্গে যুক্ত হবেন তাদের জিটিএ থেকে বের করে দেওয়া হবে।” তিনি সমস্ত সদস্যকে হুঁশিয়ারি করে দিয়ে জানান, জিটিএ’তে ‘একনায়কতন্ত্র’ চলবে না। এখানেও তিনি দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদ থেকে শিক্ষা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “একনায়কতন্ত্র চলার কারণে দার্জিলিং পার্বত্য পরিষদ থেকে বিমুখ হয়েছে পাহাড়বাসী। একনায়কতন্ত্র চলবে না। কোথাও কোনও সমস্যা হলে সবাই মিলে কাজ করতে হবে।” তিনি আরও জানান, দার্জিলিং পার্বত্য পরিষদে পার্বত্য পরিষদে এতদিন ধরে যে দুর্নীতি হয়েছে তার তদন্ত করা হবে। জিটিএ’র চিফ এগজিকিউটিভ হওয়ার পর এটি বিমল গুরুঙ্গের প্রথম সভা। প্রথম সভাতেই তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন ঠিক যে যে যে কারণে দার্জিলিং পার্বত্য পরিষদের বিরুদ্ধে পাহাড়বাসীর ক্ষোভ জমা হয়েছিল, সে সব দিক ভেবেই তিনি এগোতে চান। উন্নয়নের কাজেও যে গতি আনা হবে সেটাও স্পষ্ট করে দেন গুরুঙ্গ। তা ছাড়া দার্জিলিং পার্বত্য পরিষদ চলাকালীন যে সময় দুর্নীতি হয়েছে তার তদন্ত করা হবে বলেও তিনি জানান। তিনি বলেন, “একদিকে গোর্খাল্যান্ডের জন্য আন্দোলন হয়েছে। অনেক মানুষ শহিদ হয়েছেন। আরেকদিকে ডিজিএইচসিতে লাগাম ছাড়া দুর্নীতি হয়েছে। এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া হবে না। সমস্ত দুর্নীতির তদন্ত করে আইন মেনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” সভার পর সপার্ষদ বিমল গুরুঙ্গ লালকুঠিতে যান। সেখানে তাঁর উপস্থিতিতে একটি পুজো হয়। পুজোর পরে মোর্চার সাধারণ সম্পাদক তথা জিটিএ’র কাউন্সিলর রোশন গিরি জানান, আজ, বুধবার থেকে লালকুঠিতে অফিস শুরু করবেন বিমল গুরুঙ্গ। সেখানে জিটিএ’র প্রধান সচিবের অফিস রয়েছে। তিনি বলেন, “প্রশাসক হিসেবে কাজ শুরু করে দিয়েছেন বিমল গুরুঙ্গ। বুধবার থেকে তিনি অফিসে বসবেন। পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির প্রশাসন দেওয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।” আগামী ১০ অগষ্ট কলকাতায় রাজ্য সরকারের ‘জিটিএ’ প্রধানদের একটি বৈঠক হবে। ওই বৈঠকে জিটিএ’র প্রধান সচিব সহ এক প্রতিনিধি দল যোগ দেবেন। |