নামনি অসমের গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনার তদন্তের ভার কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর (সিবিআই) হাতে তুলে দিল অসম সরকার। এই ঘটনার পিছনে ‘অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত শক্তির ইন্ধন ছিল’ বলে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ জানান। বস্তুত রাজ্য সরকারের মতো কেন্দ্রও মনে করছে, নতুন করে ওই এলাকায় হিংসা ছড়িয়ে পড়ার পিছনে বাইরের কোনও শক্তির হাত থাকতেই পারে। গত কালই কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের আমলাদের এ বিষয়ে কথা হয়েছে। কেন্দ্রের স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংহের বক্তব্য, তদন্ত করে হিংসার ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করা হবে। আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে জানা গিয়েছে, তদন্তভার এখনই হাতে নেওয়ার ব্যাপারে সিবিআইকে নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তবে তার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ও সিবিআইয়ের একটি যৌথ দল নামনি অসনে যাবে। তারা এ সংক্রান্ত সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখবে। তার পরেই ঠিক হবে, সিবিআই কী ভাবে এফআইআর তৈরি করে তদন্তভার হাতে নেবে, কী হবে তাদের তদন্তের ‘টার্মস অফ রেফারেন্স’। |
উল্লেখ্য, এই জাতি সংঘর্ষের পিছনে কাদের ইন্ধন রয়েছে তা নিয়ে যুযুধান দুই গোষ্ঠীরই মানুষদের পরস্পর বিরোধী অভিযোগ ক্রমশই বাড়ছিল। আসলে অসমের আর পাঁচটি সংঘর্ষের মতো এ ক্ষেত্রেও শেষ পর্যন্ত আঙুল সেই বহু চর্চিত ‘অনুপ্রবেশ’ নামক জুজুর দিকে উঠেছে। ‘অনুপ্রবেশ’-কে হাতিয়ার করে প্রচারে নেমে পড়েছে এই এলাকায় সক্রিয় সঙ্ঘ পরিবারের সদস্যরাও। বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী, কিংবা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের প্রবীণ তোগাড়িয়া, সকলেই অনুপ্রবেশকে দায়ী করে রাজ্যের ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে গিয়েছেন। শিবিরের একাংশে বহিরাগত অনুপ্রবেশকারীরা আশ্রয় নিয়েছেন বলে যে রটনা শুরু হয়েছে তার প্রেক্ষিতে গগৈ আজ বলেন, “অন্য রাজ্য থেকে ও বড়োভূমি সংলগ্ন অঞ্চল থেকে মানুষ এসে অবৈধভাবে শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে বলে আমরা রিপোর্ট পেয়েছি। শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত প্রত্যেকের পরিচয় ভাল করে যাচাই করে, শুধুমাত্র ভারতীয় নাগরিকদেরই আমরা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করব।” কেন্দ্রীয় সরকার মনে করছে, অসমে গোষ্ঠী-সংঘর্ষের পিছনে বহুদিন ধরে তৈরি হওয়া বিভিন্ন কারণ থাকলেও, হঠাৎ করে খুনোখুনি শুরু হওয়ার পিছনে নির্দিষ্ঠ কোনও গোষ্ঠীর প্ররোচনা বা ষড়যন্ত্র থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। বিদেশি মদতপুষ্ট শক্তির পাশাপাশি স্থানীয় জঙ্গি সংগঠন, এমনকি রাজনৈতিক স্বার্থেও এই প্ররোচনা দেওয়া হয়ে থাকতে পারে। সেই কারণে যখন ত্রাণ শিবির থেকে স্থানীয় মানুষদের বাড়িতে পাঠানোর চেষ্টা চলছে, তখন ফের অশান্তি তৈরির চেষ্টা হচ্ছে।
এ দিকে, দ্বিতীয় দফায় নতুন করে কোকরাঝাড়, ধুবুরি ও চিরাং জেলার কিছু কিছু অংশে সংঘর্ষ শুরু হওয়ায় প্রশাসন উদ্বিগ্ন। গত ২৪ ঘন্টায় আরও চার জনের মৃত্যুর খবর এসেছে। মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া সরকারি হিসেবে এখনও পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা ৭৩। এর মধ্যে সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা ৫৭। বিভিন্ন ত্রাণ শিবিরে অসুস্থ হয়ে এখনও পর্যন্ত ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত কাল কোকরাঝাড় রানিগুলি এলাকায় আরও তিনজনকে মারায়, আগুনে ঘি পড়ে। পুলিশ জানায়, গত রাতে গ্রামরক্ষী বাহিনীকে লক্ষ্য করে অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতীরা এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। এতে তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা যান। জখম হন ২ জন। আজ সকাল ৯টা নাগাদ তিনটি দেহ নিয়ে বিলাসিপাড়ার লক্ষ্মীগঞ্জে জড়ো হন নিহতদের পরিবার ও সংলগ্ন শিবিরের শরণার্থীরা। অবরোধ করা হয় জাতীয় সড়ক। পরে পুলিশ ও প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্তারা এসে দোষীদের শাস্তির আশ্বাস দেওয়ায় অবরোধ ওঠে। দেহ তিনটি নিয়ে পরিবারের লোকেরা ধুবুরি রওনা হন। কিন্তু ততক্ষণে ধুবুরির বাকি ত্রাণ শিবিরগুলিতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। গৌরীপুরের মুরালিয়াঘাটে বেলা ১০টা নাগাদ শরণার্থীরা রাস্তা অবরোধ করেন। আটকে দেওয়া হয় সব গাড়ি। এমনকী সংবাদমাধ্যমের গাড়ি আটকে সাংবাদিকদের মারধরও করা হয়। আগুন লাগানো হয় একটি গাড়িতে। গৌরীপুর থানার ওসিও মার খান। পুলিশ ও আধা-সেনার বিরাট বাহিনী অবরোধ হঠাতে শূন্যে প্রায় ১০০ রাউন্ড গুলি চালায়। অবরোধের জেরে ধুবুরিগামী তিনটি মৃতদেহ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা ফের বিলাসিপাড়ায় ফিরে আসেন। সেখানেও শুরু হয় পথ অবরোধ। পরিস্থিতি সামলাতে বেলা ১২টা থেকে ধুবুরি, বিলাসিপাড়ায় কার্ফু জারি করা হয়। |