একটি পরিবারকে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের এক পঞ্চায়েত সদস্যের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার দুপুরে এসডিপিও (কাটোয়া) ধ্রুব দাসের কাছে এমন অভিযোগ করেছে কেতুগ্রামের সীতাহাটি পঞ্চায়েতের বেনেপাড়া গ্রামের ওই পরিবার। যদিও অভিমন্যু হালদার নামে ওই পঞ্চায়েত সদস্য ও তৃণমূল নেতৃত্ব এ রকম ঘটনার কথা অস্বীকার করেছেন।
এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ ওই পরিবারের তিন সদস্য অচিন্ত্যকুমার রায়, তাঁর স্ত্রী কল্পনাদেবী ও ছেলে বরুণ এসডিপিও-র সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা জানান, ২০০৫ সালের নভেম্বরে বরুণের সঙ্গে বিয়ে হয় গ্রামেরই বাসিন্দা স্বপ্নার। বিয়ের পরে স্বপ্নাদেবী আইসিডিএস কেন্দ্রে চাকরি পান। তার পর থেকেই ওই দম্পতির মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত গত ১৩ জুলাই কাটোয়া মহকুমা আদালতে বোঝাপড়ার মাধ্যমে বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে যায়।
ওই পরিবারের অভিযোগ, এর পর থেকেই তাঁদের সম্পত্তি স্বপ্নাকে লিখে দেওয়ার জন্য নানা রকম ভাবে ‘চাপ’ দেওয়া হতে থাকে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য অভিমন্যুবাবু দলবল নিয়ে তাঁদের বাড়িতে চড়াও হন বলে অভিযোগ ওই পরিবারের। এসডিপিও-র কাছে লিখিত অভিযোগে তাঁরা জানিয়েছেন, হেনস্থা ও মারধরের পাশাপাশি খুনের হুমকিও দেওয়া হয়। যাওয়ার আগে এলাকা ছাড়ার ‘ফতোয়া’ দেওয়া হয়। অচিন্ত্যবাবুর অভিযোগ, “সাত দিনের মধ্যে বাড়ি বিক্রি করে সেই টাকা অথবা বাড়ির মালিকানা স্বপ্নার নামে লিখে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।” কল্পনাদেবীর অভিযোগ, “বাড়িতে ঢুকে চুলের মুঠি ধরে আমাকে মারধর করা হয়।” তাঁরা এসডিপিও-কে জানান, ভয়ে বাড়ি ছেড়ে তাঁরা পাশের গ্রাম শাঁখাইয়ে চলে গিয়েছেন। বরুণবাবু বলেন, “আমি গৃহশিক্ষকতা করে সংসার চালাই। আমাদের এ ভাবে বাড়ি ছাড়ার পরিকল্পনা হবে, কখনও ভাবিনি।” তাঁর দাবি, এত দিন ভয়ে তাঁরা পুলিশকে ঘটনার কথা জানাননি। কিন্তু বাড়ি বাঁচাতে শেষ পর্যন্ত এসডিপিও-র দ্বারস্থ হয়েছেন।
স্বপ্নাদেবীর অবশ্য পাল্টা দাবি, “আমাকে দিয়ে জোর করে বিবাহবিচ্ছেদের কাগজপত্রে সই করানো হয়েছে। পণ বাবদ যা নিয়েছিল, তা-ও ফেরত দেয়নি ওরা। এখন আমাদের শুভানুধ্যায়ীদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করছে।” অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্যের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে পুলিশের কাছে তিনি দাবি করেছেন, পড়শিরা গোলমাল করে থাকতে পারে। কিন্তু এই ঘটনার সঙ্গে কোনও ভাবে তিনি যুক্ত নন। স্থানীয় তৃণমূল নেতা শ্যামল মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “ওই পঞ্চায়েত সদস্য খুবই শান্ত প্রকৃতির মানুষ। তিনি এ রকম আচরণ করতেই পারেন না। তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে।”
এসডিপিও বলেন, “ওই পরিবার যাতে শান্তিতে বাস করতে পারে তার ব্যবস্থা করা হবে। এ ছাড়া কেতুগ্রাম থানাকে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” |