সরকারি নির্দেশ অমান্য করে নিজের গাড়িতে লালবাতি লাগানোর অভিযোগ উঠেছে সদ্য দায়িত্ব নেওয়া উত্তর দিনাজপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বিরুদ্ধে। সোমবার সকালে এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায় রায়গঞ্জের কর্ণজোড়ায় প্রশাসনিক মহলে। বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্ণমেন্ট এমপ্লয়িজ। এ দিন সকালে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের গাড়িতে লালবাতি নজরে আসতেই এমপ্লয়িজের তরফে জেলা পরিষদের সভাধিপতির কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। এ দিন দুপুরে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের গাড়ির চালক গাড়ি থেকে তড়িঘড়ি লালবাতি খুলে নিয়েছেন। এই বিষয়ে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বিপ্লবকান্তি দাশগুপ্ত বলেন, “মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিসেবে আমি গাড়িতে লালবাতি পাই বলেই আমার ধারণা ছিল। তবে কে আমার গাড়িতে লালবাতি লাগিয়েছেন ও খুলে নিয়েছেন তা আমার জানা নেই। জেলা প্রশাসনের আধিকারিকেরা গাড়িতে লালবাতি না লাগানোর নির্দেশ দিলে লাগাব না। আসলে দায়িত্ব নিয়ে জানতে পেরেছি জেলা স্বাস্থ্য দফতরে অনেক অনিয়ম চলছে। এসব অনিয়মের প্রতিবাদ করাতেই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে।” জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় দেড় বছর আগে রায়গঞ্জের মধ্যমোহনবাটি এলাকার বাসিন্দা তথা পরিবহণ ব্যবসায়ী সৌমিক ঘোষের একটি অ্যামবাসেডর ভাড়া নিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। সেই থেকেই ওই গাড়িটি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের গাড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ওই গাড়ির চালক মাধব বর্মন বলেন, “আমি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের গাড়ির চালক হলেও কে গাড়িতে লালবাতি লাগিয়েছেন তা জানি না। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকই হয়তো গাড়ির মালিককে লালবাতি লাগাতে বলেছিলেন। তবে স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের নির্দেশে লালবাতি খুলে নিয়েছি।” গাড়ির মালিক সৌমিকবাবু জানান, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দফতর থেকেই তাঁর কাছে একটি লালবাতি চেয়ে পাঠানো হয়েছিল। তিনি বলেন, “সেই মতো এদিন চালককে দিয়ে লালবাতি পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। দফতরের আধিকারিকেরাই লালবাতি লাগিয়েছেন।” জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোক্তার আলি সর্দার বলেন, “মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বেআইনিভাবে নিজের গাড়িতে লালবাতি লাগিয়েছেন বলে অভিযোগ পেয়েছি। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী তিনি গাড়িতে লালবাতি লাগাতে পারেন না। ভবিষ্যতে যাতে এরকম ঘটনা না ঘটে সে জন্য মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে সতর্ক করে দিয়েছি।” জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়াও ঘটনাটি শুনেছেন। তিনি বলেন, “বিষয়টি শুনেছি। খোঁজ নিয়ে দেখছি। সরকারি নির্দেশের বাইরে জেলা প্রশাসনের কোনও আধিকারিক যাতে বেআইনিভাবে গাড়িতে লালবাতি না লাগান সেই ব্যাপারে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।” প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল, জেলাশাসক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি, পুলিশ সুপার, জেলা দায়রা বিচারক, মন্ত্রী ও বিধানসভার স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যানরা ছাড়া সরকারি কোনও আধিকারিকই গাড়িতে লালবাতি লাগাতে পারেন না। গত ১২ জুলাই তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অজয় চক্রবর্তী বদলি হন। বিপ্লবকান্তিবাবু মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দায়িত্ব নেন। বিদায়ী ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অজয়বাবু বর্তমানে মুর্শিদাবাদের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি প্রায় পাঁচ মাস উত্তর দিনাজপুরের ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দায়িত্বে ছিলাম। তবে দায়িত্বে থাকাকালীন আমি কোনওদিনও গাড়িতে লালবাতি লাগাইনি।” কনফেডারেশন অফ স্টেট গভর্ণমেন্ট এমপ্লয়িজের জেলা সম্পাদক সুযশ মুখোপাধ্যায় বলেন, “জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও ওষুধের অভাব রয়েছে। বিভিন্ন হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিষেবা ভেঙে পড়েছে। অথচ বিপ্লবকান্তিবাবু মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দায়িত্ব নিয়েই নিজের ক্ষমতা জাহির করতে বে আইনিভাবে গাড়িতে লালবাতি লাগিয়েছিলেন। আমরা জেলা পরিষদের সভাধিপতির কাছে অভিযোগ জানাতেই তিনি গাড়ি থেকে লালবাতি খুলে নিয়ে এখন বাঁচার চেষ্টা করছেন। আমরা লালবাতি লাগানো সহ তাঁর গাড়ির ছবি তুলে রেখেছি। ওই ছবি সহ আমরা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাচ্ছি। তিনি জানান, সরকারি নির্দেশ অমান্য করে জেলার আর কোনও আধিকারিক লালবাতি লাগানো গাড়িতে চড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন কিনা তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।” |