শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট নিয়ে রাজ্য সরকারকে হলফনামা দিয়ে তাদের বক্তব্য জানানোর নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। সোমবার হাইকোর্টের বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত ওই আদেশ দেন। চার সপ্তাহের মধ্যে রাজ্য সরকারকে হলফনামা জমা দিতে হবে। তা পাওয়ার পরে দু’সপ্তাহের মধ্যে আবেদনকারীরা উত্তর দেবেন। ছয় সপ্তাহ পরে মামলাটির চুড়ান্ত শুনানি হবে। ইতিমধ্যে রবিবার মুখ্যমন্ত্রী শিলিগুড়ি কমিশনারেট উদ্বোধন করেছেন।
শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেট গঠন নিয়ে ওই মামলাটি দায়ের করেছেন জলপাইগুড়ি জেলা যুব কংগ্রেস সভাপতি তথা আইনজীবী সৈকত চট্টোপাধ্যায় সহ দু’জন। আবেদনকারীদের তরফে জলপাইগুড়ি জেলার ভক্তিনগর থানাকে ওই কমিশনারেটের আওতায় আনা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। মামলাকারীদের বক্তব্য, অন্য জেলার থানাকে শিলিগুড়ি কমিশনারেটে অন্তর্ভুক্ত করায় ভক্তিনগর এলাকার বাসিন্দাদের ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে শিলিগুড়ি আদালতে যেতে হবে। দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে যেতে হবে জলপাইগুড়ি আদালতে। |
উচ্চ আদালতে শুনানি পর্বে রাজ্য সরকারের পক্ষে আইনজীবী প্রদ্যুম্ন সিংহ বলেন, “এই সমস্যা নিয়ে জনস্বার্থের মামলা করা যায়। রিট পিটিশন করা যায় না। তিনি আবেদনটির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।” আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী অরুণাভ ঘোষ বলেন, “আবেদনকারীরা এলাকার মানুষ, তাঁরা এই মামলা করতেই পারেন।” যে ভাবে পুলিশ কমিশনারেট হয়েছে তাতে আইনি সঙ্কট দেখা দেবে বলেও অরুণাভবাবুর আশঙ্কা। শুনানি পর্বে রাজ্যের গভর্নমেন্ট প্লিডার (জি পি) অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় বিচারপতিকে সরকারের একটি রিপোর্ট দেখান। যদিও সেই রিপোর্টে কী আছে তা বিচারপতি বা জি পি কেউ প্রকাশ করেননি। অশোকবাবু জানান, হলফনামায় রাজ্য সরকার সব প্রশ্নের জবাব দেবে। বিচারপতি মামলাটিকে বিচারের জন্য গ্রহণ করেন।
আদালত মামলাটি বিচারের জন্য গৃহীত হওয়ার পরে সৈকতবাবু বলেন, “গত রবিবার রাতে তড়িঘড়ি কমিশনারেট উদ্বোধন হয়েছে। উদ্বোধনের ওপরে স্থগিতাদেশ চাওয়ার প্রশ্ন ছিল না। তবে কমিশনারেটের বৈধতা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে। মামলাটি হাইকোর্ট বিচারের জন্য গ্রহণ করায় আমরা সন্তুষ্ট।”
এই অবস্থায় ভক্তিনগর থানাকে শিলিগুড়ি কমিশনারেটের আওতায় নেওয়ার বিরোধিতায় সোমবার কর্মবিরতি পালন করে জলপাইগুড়ি বার আসোসিয়েশন। তাতে সামিল হন জলপাইগুড়ির তৃণমূল আইনজীবী সেলের সদস্যরাও। ওই আইনজীবী সংগঠনের জলপাইগুড়ি শাখার সভাপতি কৃশানু ব্রজবাসী বলেন, “মঙ্গলবার শহরে আইনমন্ত্রী আসছেন। তাঁর কাছ থেকে পুরো বিষয়টি জানব। তবে তার আগে বাসিন্দাদের ভাবাবেগের কথা মাথায় রেখে কর্মবিরতিতে সামিল হয়েছি।” তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলার সভাপতি চন্দন ভৌমিক বলেন, “পরিষেবা বন্ধ রেখে আন্দোলনের আমরা পক্ষপাতী নই। শুধু একদিনের কর্মবিরতিতেই আইনজীবী সেলের সদস্যরা সামিল হয়েছেন।” বার অ্যাসোসিয়েশন সূত্রেও জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে কর্মবিরতি তুলে নেওয়া হচ্ছে। বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অভিনন্দন চৌধুরী বলেন, “রিলে অনশন চলছেই। কিন্তু কর্মবিরতি তুলে নেওয়া হয়েছে।”
ভক্তিনগর থানায় রবিবার থেকেই খুশির মেজাজ। শিলিগুড়ি আদালতের আইনজীবীদের একাংশ মিষ্টিও বেলান। তৃণমূল আইনজীবী সেলের শিলিগুড়ি শাখার পক্ষ থেকেও রাজ্যকে ধন্যবাদ জানিয়ে ব্যানার টাঙানো হয়। তৃণমূল আইনজীবী সেলের শিলিগুড়ি শাখার সভাপতি পীযূষ ঘোষ বলেন, “রাজ্য শিলিগুড়িকে কমিশনারেট ঘোষণা করে, ভক্তিনগর থানাকে অন্তর্ভুক্ত করায় এলাকার বাসিন্দারা স্বস্তিতে।” বৃহত্তর শিলিগুড়ি নাগরিক মঞ্চের যুগ্ম আহ্বায়ক রতন বণিক ও সুনীল সরকারও সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান। |