‘সেরা’র শিরোপা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আজ ফের জঙ্গলমহলে
বিভিন্ন রাজ্যের মাওবাদী প্রভাবিত জেলায় উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ কেন্দ্রীয় অর্থ সদ্ব্যবহারের নিরিখে প্রথম স্থান অধিকার করেছে পশ্চিমবঙ্গ। ইউপিএ-র বৃহত্তম শরিকদলের সরকারকে দেওয়া যোজনা কমিশনের এই ‘স্বীকৃতি’কে সঙ্গী করেই আজ, মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুর সফরে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ক্ষমতায় আসার পরে এ নিয়ে তৃতীয় বার। উত্তরে দার্জিলিং পাহাড়ে জিটিএ গঠনে সাফল্য অর্জনের পরে এ বার জঙ্গলমহলের একদা মাওবাদী-ঘাঁটি বেলপাহাড়িতে তিনি জনসভাও করবেন।
অন্ধ্র-ছত্তীসগঢ়-মহারাষ্ট্র, কিংবা পড়শি বিহার-ঝাড়খণ্ড-ওড়িশায় বিচ্ছিন্ন মাওবাদী-হামলায় এখনও ছেদ পড়েনি। ব্যতিক্রম পশ্চিমবঙ্গ। এ রাজ্যের একদা মাওবাদী-কবলিত জঙ্গলমহলের তিন জেলায় (পশ্চিম মেদিনীপুর-বাঁকুড়া-পুরুলিয়া) গত প্রায় দেড় বছর যাবৎ মাওবাদী কার্যকলাপ কার্যত স্তব্ধ বলে প্রশাসনের দাবি। এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে ওখানে কেন্দ্রীয় অর্থে মূলত মমতা সরকারের আমলে যে উন্নয়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, সাফল্যের নিরিখে দেশের ৯টি রাজ্যের মধ্যে তা শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা আদায় করে নিয়েছে।
মাওবাদী প্রভাবিত ৯টি রাজ্যের ৬০ জেলায় মূলত পরিকাঠামো উন্নয়নের লক্ষ্যে যোজনা কমিশনের টাকায় বিশেষ প্রকল্প (ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকশন প্ল্যান, সংক্ষেপে আইএপি) শুরু হয়েছে ২০১০-১১ অর্থবর্ষে। গোড়ায় পশ্চিমবঙ্গের একমাত্র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা ছিল তার আওতায়। গত অর্থবর্ষে (২০১১-১২) অন্তর্ভুক্ত আরও ১৮টি জেলার মধ্যে ঠাঁই পেয়েছে বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া। আইএপি’তে পানীয় জল, ক্ষুদ্র সেচ, রাস্তা-কালভার্ট, বাজার, স্কুলে অতিরিক্ত ক্লাসঘর কিংবা লোধা সম্প্রদায়ের জন্য আবাসন তৈরির মতো কাজ চলছে।
এবং প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে যোজনা কমিশনের গত ২৩ জুলাইয়ের পর্যালোচনায় পশ্চিমবঙ্গ ‘প্রথম’ স্থান পেয়েছে। পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, পশ্চিম মেদিনীপুরে গত দু’বছরে কাজ হয়েছে ৯৫%। আর গত এক বছরে বাঁকুড়া-পুরুলিয়ায় ৭৪.৭২%। দু’টি ক্ষেত্রেই তালিকার ৯ রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সবার উপরে বলে ঘোষণা করেছে দিল্লি।
‘উন্নয়নযজ্ঞে শীর্ষস্থান’ দখলের পাশাপাশি মাওবাদীদের ‘আত্মসমর্পণ’ এবং জঙ্গলমহলের যুবকদের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও মমতা সরকারের তৎপরতা ‘নজিরবিহীন’ বলে সরকারি সূত্রের দাবি। প্রশাসনিক সূত্রের খবর: আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের জন্য পুনর্বাসন প্যাকেজ ঘোষিত হওয়ার পরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকারের জমানায় বন্দুক ছেড়ে মূল স্রোতে ফিরতে চেয়েছিলেন সাকুল্যে তিন জন। সেখানে গত দেড় বছরে আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীর সংখ্যা ৩২। যে তালিকায় সুচিত্রা মাহাতো, জাগরী বাস্কে, রাজারাম বা সুশীল মাহাতোর মতো নেতা-নেত্রীরা রয়েছেন। অন্যতম শীর্ষ মাওবাদী নেতা কিষেণজির মৃত্যু ও তেলুগু দীপক বা বিক্রমের মতো নেতার গ্রেফতারিকেও জঙ্গলমহলে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বড় পদক্ষেপ হিসেবে ব্যাখ্যা করছে রাজ্য প্রশাসন। স্বরাষ্ট্র-সূত্রের খবর: আত্মসমর্পণকারীদের ৩০ জনকে পুনর্বাসন প্যাকেজে ঘোষিত নগদ ৫০ হাজার টাকা, ২ লক্ষ টাকার ব্যাঙ্ক আমানত, দু’বছরের জন্য মাসিক দু’হাজার টাকার ভাতা প্রদান শুরু হয়েছে। বাকি দু’জনের বিষয়টি আপাতত বিবেচনাধীন।
এ হেন ‘সাফল্য-চিত্রের’ পটভূমিতে মুখ্যমন্ত্রীর তৃতীয় সফরে আরও কিছু প্রাপ্তির সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে জঙ্গলমহলে। বস্তুত মহাকরণের ইঙ্গিত, পাহাড়ে জিটিএ গঠনের দিনই মমতা যে ভাবে সেখানে বেশ কিছু উন্নয়ন প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন, জঙ্গলমহলেও তার পুনরাবৃত্তি হতে পারে। কিন্তু আগে দু’বার জঙ্গলমহল সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সব মিলিয়ে যে প্রায় ৩৫টি প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছিলেন, সেগুলোর কী হাল?
তিন জেলা প্রশাসনের বক্তব্য: গোড়ায় তেমন অগ্রগতি না-হলেও গত ক’মাসে ছবিটা বদলেছে। রাজ্যর পরিকল্পনা দফতরের দাবি: অন্তত ২৭টি প্রকল্পে কাজের বরাত দেওয়া হয়ে গিয়েছে। বাকিগুলোয় বরাত-প্রক্রিয়া চলছে, যার মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরেই ২২টি। সরকারি এক মুখপাত্রের দাবি, “বিভিন্ন প্রকল্প রূপায়ণের স্বার্থে খাস জমি অত্যন্ত দ্রুততায় সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আগামী দু’-আড়াই বছরে যাবতীয় প্রকল্প শেষ হবে। সব মিলিয়ে খরচ ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ছ’শো কোটি টাকা, যার সংস্থান রাজ্যই করবে।”
মুখ্যমন্ত্রী তো জঙ্গলমহলের দশ হাজার ছেলেমেয়ের জন্য পুলিশের চাকরির প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন?
ওই উদ্যোগটিরও যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে বলে সরকারের দাবি। সূত্রের তথ্য: পদের সংখ্যা দশ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫৭০০। এর মধ্যে ৫ হাজার হোমগার্ড নিয়োগপত্র পেয়ে গিয়েছেন। ৫ হাজার জনকে নিয়োগপত্র দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। একই সঙ্গে জুনিয়র কনস্টেবলের পাঁচ হাজার পদের জন্য নিয়োগপত্র পাঠানো শুরু হয়েছে। কনস্টেবলের ৭০০ পদে আদিবাসী প্রার্থীদের নিয়োগপত্র শিগগিরই দেওয়া হবে।
‘পরিবর্তিত’ জঙ্গলমহলে একেও বড় সাফল্য হিসেবে দেখছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।

প্রতিশ্রুতির হাল-হকিকত
ওয়ার্ক অর্ডার
• লালগড়-নয়াগ্রাম-শালবনিতে কলেজ
• রামগড়ে পলিটেকনিক
• ১৭টি মেয়ে হস্টেল
• শালবনি-ঝাড়গ্রামে স্টেডিয়াম
• ঝাড়গ্রামে স্পোর্টস অ্যাকাডেমি ও পুরনো স্টেডিয়াম সংস্কার
• ৩৫টি ক্ষুদ্রসেচ প্রকল্প
• বিনপুর-ধেড়ুয়ায় বড় জলপ্রকল্প
• মেদিনীপুরে ৩৯টি ছোট জলপ্রকল্প
• সুবর্ণরেখায় নয়াগ্রাম সেতু
• লালগড়ে কংসাবতী সেতু
• লালগড়-নেতাই সড়ক।
বরাত-প্রতীক্ষায়
• শালবনিতে আইটিআই
• নয়াগ্রামে স্টেডিয়াম
• লালগড়ে অনুব্রতী প্রশিক্ষণ কলেজ



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.