মণিপুরের এক অজ পাড়াগাঁয়ের মেয়ে লন্ডন অলিম্পিকে ভারতকে চতুর্থ পদক এনে দিলেন!
১১৬ বছরের আধুনিক অলিম্পিকের ইতিহাসে ভারতের সর্বাধিক পদক লাভের রেকর্ড ২০১২-তেই হল। এবং সেটা বছর পাঁচেকের যমজ পুত্রের মায়ের বজ্রমুষ্ঠিতে!
বাকি ভারতবর্ষের থেকে আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে অনেকটাই পিছিয়ে থাকা কাঙ্গাথেই গ্রামের স্কুল-ছুট দামাল কিশোরী রাস্তায় কোনও ছেলের টিটিকিরি শুনলে তার মুখে সপাটে ঘুসি চালাতে দ্বিতীয় বার চিন্তা করত না। বক্সিংয়ের প্রথম পাঠ ইভটিজার পিটিয়েই হয়তো শুরু মেরি কমের!
প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়ের বক্সিং-প্রেম সেখানকার আবহে এতটাই অপ্রত্যাশিত এমনকী নিন্দনীয়ও যে, মেরি কম বাবা-মায়ের কাছ থেকে তাঁর বক্সার হয়ে ওঠার কাহিনি লুকিয়ে রেখেছিলেন জীবনের প্রথম টুর্নামেন্ট জেতার আগে পর্যন্ত। বাবা খবরের কাগজে মেয়ের মণিপুর রাজ্য বক্সিং খেতাবের ট্রফি হাতে ছবি দেখে আবিষ্কার করেন মেরি কম একজন বক্সার! সতেরো বছরের সেই মেয়েই বারো বছর পর সোমবার লন্ডন গেমসে সেমিফাইনালে উঠে অলিম্পিক পদক জয় নিশ্চিত করে ফেললেন। বুধবার সেমিফাইনালে গ্রেট ব্রিটেনের নিকোলা অ্যাডামসের কাছে হারলেও মেরি অন্তত ব্রোঞ্জ পাচ্ছেনই। কারণ মেয়েদের বক্সিংয়ে দুই পরাজিত সেমিফাইনালিস্টকেই ব্রোঞ্জ পদক দেওয়া হচ্ছে। আর জিতে ফাইনালে উঠলে ভারতের জন্য অপেক্ষা করে থাকবে সোনা বা রুপো। তবে ব্রোঞ্জ নিশ্চিত করেই মেরি ইতিহাস গড়ে ফেলেছেন। অলিম্পিক অভিষেকেই পদক জেতার গৌরব খুব কম অ্যাথলিটের ভাগ্যে ঘটে। তা ছাড়া এই প্রথম একটি অলিম্পিকে দু’জন ভারতীয় মেয়ে পদক জেতার নজির গড়লেন। ব্যাডমিন্টনে সাইনা নেহওয়ালের সঙ্গে বক্সিংয়ে মেরি। |
জয় হো। তিউনিসিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারানোর পর। সোমবার লন্ডনে। ছবি: উৎপল সরকার। |
‘ম্যাগনিফিসেন্ট মেরি’র শেষ চারে পা রেখে দৃপ্ত মন্তব্য, “এখান থেকে আশা করি আমার স্বপ্ন সত্যি হয়ে উঠবে। যে দিন থেকে মেয়েদের বক্সিং অলিম্পিক ইভেন্টের মর্যাদা পেয়েছে, সে দিন থেকে স্বপ্ন দেখে এসেছি অলিম্পিক পদক জেতার। এবং এখন আমি তার জন্য তৈরি। জানি ব্রোঞ্জ পদক জিতে গেছি। তবে এতেই আমি সন্তুষ্ট নই। বুধবার চেষ্টা করব ব্রোঞ্জটাকে রুপোতে নিয়ে যাওয়ার। তার দু’দিন পর রুপোর পদকটাকে সোনার পদক করার চেষ্টা করব।” ৮৮’এর এশিয়াড সোনাজয়ী মণিপুরী বক্সার ডিঙ্গো সিংহকে দেখে অনুপ্রাণিত মেরি কম নিজের বিধ্বংসী পাঞ্চের রহস্যও ফাঁস করেছেন। “আমি ছোটবেলা থেকে ছেলে বক্সারদের সঙ্গে প্র্যাক্টিস করে এসেছি। ওরা অনেক বেশি লম্বা আর ভারী। ফলে রিংয়ে অনেক দ্রুত নড়াচড়া করতে হত, ঘুসিতে অনেক জোর আনতে হত, ডিফেন্স করার দক্ষতা অনেক বাড়াতে হত। মেয়েদের সঙ্গে লড়ার সময় আমি ওই সুবিধেগুলোই পেয়ে থাকি।”
এ দিন লন্ডনের এক্সেল এরিনাতে পাঁচ ফুট দু’ইঞ্চির লড়াইয়েও ওই দক্ষতাগুলো স্পষ্ট। তিউনিসিয়ার মারৌয়া রাহালি-র বিরুদ্ধে প্রায় হাসতে হাসতে ১৫-৬ পয়েন্টে জেতেন মেরি কম। প্রথম দু’রাউন্ড কিছুটা লড়েছিলেন সোনালি চুলের রাহালি। তবু মেরি এগিয়ে থাকেন ২-১ এবং ৩-২ পয়েন্টে। তৃতীয় রাউন্ডটা গত কালের মতোই আজও টার্নিং পয়েন্ট মেরি কমের লড়াইয়ের। ভারতের ‘পকেট সাইজ ডিনামাইট’-এর পাঞ্চ সরাসরি আছড়ে পড়ে প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখে। ওই রাউন্ডে ৬-১ পয়েন্ট মেরি কমের অনুকূলে। সেমিফাইনালে ওঠা এক রকম নিশ্চিত বুঝতে পেরে শেষ রাউন্ডে মেরি কম ডিফেন্স করেই কাটিয়ে দেন। তা সত্ত্বেও ৪-২ পয়েন্টে এগিয়ে থেকে সব মিলিয়ে ১৫-৬-এ জেতেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে দু’দিন দু’রকম স্ট্র্যাটেজিতে জিতলেন মেরি কম। প্রথম দিনের আক্রমণমুখী মেজাজের বদলে এ দিন তিনি রক্ষণ করতে করতে আচমকা প্রতিআক্রমণের রাস্তা নিয়েছিলেন। বক্সিংয়ে দীর্ঘদেহী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে জেতার যেটা অমোঘ স্ট্র্যাটেজি হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। যে জন্য রাহালির বিরুদ্ধে চারটে রাউন্ডেই মেরি কমকে বেশি করে দেখা গেছে বিপক্ষের শরীরের ভেতর ঢুকে গিয়ে ডিফেন্স করতে। রেফারি নিয়মমাফিক দুই প্রতিদ্বন্দ্বীকে আলাদা করে দেওয়ামাত্র রাহালির মুখ লক্ষ্য করে সঙ্গে সঙ্গে পাঞ্চ ছুড়েছেন মেরি কম। অপ্রস্তুত প্রতিপক্ষের মার হজম করা ছাড়া উপায়ই বা কী?
ঠিক যেন সেই অজ পাড়াগাঁয়ের কিশোরীর ঘুসি আছড়ে পড়েছে অলিম্পিকের রিংয়ে! তফাতের মধ্যে কাঙ্গাথেই গ্রামে মেরি কম নিজের সম্মান রক্ষা করতেন। লন্ডনে মেরি কম নিজের দেশের জন্য সম্মান আনলেন!
|
আজ |
হকি
ভারত বনাম বেলজিয়াম (রাত ৮-৩০) |
ডিসকাস থ্রো
বিকাশ গৌড়া (রাত ১২-১৫) |
ট্রিপল জাম্প
রেঞ্জিথ মহেশ্বরী (বিকেল ৩-১৫) |
|
গত কাল |
শ্যুটিং
হারলেন গগন নারঙ্গ, সঞ্জীব রাজপুত এবং মানবজিৎ সিংহ |
ডিসকাস থ্রো
ফাইনালে বিকাশ গৌড়া |
বক্সিং
সেমিফাইনালে মেরি কম |
|
|