পুলিশি অ-সহযোগিতায় ভূমিরাজস্ব কমার আশঙ্কা
রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা বেড়েছে দ্বিগুণ। কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুরে বেআইনি খাদান বন্ধের উপযুক্ত পরিকাঠামো নেই। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে পুলিশি অসহযোগিতার অভিযোগও। ফলে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
কয়েক দিন আগে খড়্গপুর লোকাল থানা এলাকার আজমগড়ে তল্লাশি চালাতে গিয়েছিলেন ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের আধিকারিকেরা। গিয়ে দেখেন, ১৩টি গাড়িতে বেআইনি ভাবে বালি তোলা হচ্ছে। কিন্তু একটি গাড়িও আটক করতে পারেননি ওই আধিকারিকেরা। কেন? জেলা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক অরিন্দম দত্তের দাবি, “পুলিশি অসহযোগিতার কারণেই গাড়ি আটক করা যায়নি। ১৩টি গাড়ি ধরতে পারলে সরকারের কয়েক লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় হত।” প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সকাল সাড়ে দশটায় খড়্গপুর লোকাল থানায় পুলিশি-সাহায্য চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ গিয়ে পৌঁছয় বেলা সাড়ে ১২টায়। ৬-৭ কিলোমিটার যেতে ২ ঘণ্টা লাগায় পুলিশ। আর সেই সুযোগে বেআইনি গাড়িগুলি চম্পট দেয়। যাতে এ ব্যাপারে পুলিশ সক্রিয় ভূমিকা নেয়, সে জন্য জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত ভাবে জানানোর পরিকল্পনাও নিয়েছে প্রশাসন। ভূমি সংস্কার দফতরের অভিযোগ, কেবলমাত্র গড়বেতা থানা ছাড়া জেলার আর কোনও থানা থেকেই সে ভাবে পুলিশি সাহায্য মিলছে না। ফলে বেআইনি কারবার বন্ধও করা যাচ্ছে না।
রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরেই ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর থেকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। চলতি আর্থিক বছরে জেলায় লক্ষ্যমাত্রা ৬৫ কোটি টাকা! অথচ, এই দফতরে ২০০৯-’১০ আর্থিক বছর থেকে ২০১১-’১২ —এই তিন বছর মিলিয়েই সরকার রাজস্ব পেয়েছিল মাত্র ২৭ কোটি টাকা! চলতি বছরে লক্ষ্যমাত্রা-পূরণ করতে হলে যে বেআইনি খাদান-বন্ধের পাশাপাশি প্রতিটি খাদানেই নিয়ম মেনে কাজ হচ্ছে কি না দেখা দরকার--সেটা বলাই বাহুল্য। এ নিয়ে কয়েক মাস আগে থেকেই জেলা-প্রশাসন পদক্ষেপ শুরু করে। কাঁসাই নদী থেকে বেআইনি বালি তোলা বন্ধের পাশাপাশি জেলার প্রতিটি ব্লকে বেআইনি খাদান বন্ধে উদ্যোগী হয় প্রশাসন। তা করতে গিয়ে ইতিমধ্যেই জেলা ভূমি ও ভমি সংস্কার দফতরই (ব্লক ও মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর বাদ দিয়ে) গত তিন মাসেই ৪ কোটি ১৩ লক্ষ টাকা রাজস্ব আদায় করেছে। যার বেশিরভাগই বেআইনি বালি, মাটি ও পাথর নিয়ে যাওয়া গাড়ি থেকে জরিমানার অর্থ বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই দফতরের আধিকারিকেরা বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছেন। ভূমি সংস্কার দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৯-১০ আর্থিক বছরে জেলায় রাজস্ব পাওয়া গিয়েছিল ৭ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা। ২০১০-১১ আর্থিক বছরে তার থেকে ১ কোটি টাকারও বেশি কম আদায় হয়। রাজস্ব পাওয়া গিয়েছিল ৬ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা! অভিযোগ, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের উদাসীনতার কারণেই সে-বার ভাল রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়নি। সরকারকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দিনের পর দিন খাদান চালিয়েছেন এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ীও। তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদও হয়েছে। প্রতিবাদের ফলে ২০১১-১২ আর্থিক বছরে রাজস্ব-আদায় কিছুটা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ কোটি ৩৩ লক্ষ টাকার মতো। এ বার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য করা হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা! এত টাকা রাজস্ব আদায় সম্ভব কি না, তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন উঠেছে। তবে ৩ মাসে জেলা সদর থেকেই ৪ কোটি টাকারও কিছু বেশি জরিমানা ও অন্যান্য রাজস্ব আদায় হয়েছে। দফতরের আশা, পুলিশি সাহায্য পেলে জেলা জুড়ে বেআইনি খাদান বন্ধে আরও কড়া হওয়া সম্ভব। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কিছু ব্যক্তি প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই খাদান চালাচ্ছেন। কিন্তু অভিযোগ, দিনে ২-৩ গাড়ি বালি বা পাথর নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজস্ব জমা দিয়ে ২৫-৩০ গাড়ি মাল নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফলে, রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এই গাড়িগুলি ধরার জন্যেই তল্লাশির প্রয়োজন। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের দাবি, দফতরে এমনিতেই কর্মী কম। তা ছাড়াও বেআইনি কাজ করার জন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা দল বেঁধে থাকেন। তাই দফতরের কর্মীদের পক্ষে পুলিশি সাহায্য ছাড়া কাজ করা কঠিন। তাই এ বার থেকে যাতে পুলিশি সাহায্য মেলে সে জন্য পশ্চিম মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকে লিখিত ভাবে জানানো হবে এবং থানা সাহায্য না-করলেও অভিযোগ দায়ের করা হবে বলে অতিরিক্ত জেলাশাসক জানিয়েছেন। পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরীর বক্তব্য, ভূমি-দফতর জানালে উপযুক্ত ব্যবস্থা করা হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.