সম্পাদকীয় ১...
জট যখন জটিল
ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মেঘ কিছুতেই কাটিতেছে না। ‘পুবে তাকাইবার’ নীতি অনুসরণ করিতে গিয়া মায়ানমার-সহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সহিত ভারত সম্পর্কের উন্নতি ঘটাইতে ইদানীং কিছুটা তৎপর। অথচ সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশী এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত-আটটি অঙ্গরাজ্যের সহিত অভিন্ন সীমান্তের অংশীদার বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ার কথা যেন দিল্লির কর্তাদের মনেই থাকে না। তাই প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সফর তিস্তার জলের ভাগ এবং ছিটমহল হস্তান্তর লইয়া যে প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশকে দিয়াছিল, তাহার রূপায়ণের চেষ্টা এখনও দিল্লির তরফে দেখা যায় না। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত হিসাবে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ ঢাকা সফরে গিয়াছেন বটে, তবে বাংলাদেশের ক্ষোভ তাহাতে প্রশমিত হইবে কি?
তিস্তার জলের দাবি এবং ছিটমহল হস্তান্তর--দুইটি বিষয়ই সরাসরি পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট। তাই এই দুই প্রশ্নেই রাজ্যের শাসক দলের আগাম অনুমোদন আবশ্যক। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের সহিত চুক্তি সম্পাদনের সময় কেন্দ্রীয় সরকারের সে কথা খেয়াল হয় নাই। ফলে শেষ মুহূর্তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র আপত্তিতে সব বানচাল হইয়া যায়। ইউপিএ-র প্রধান শরিক কংগ্রেস নেতৃত্বের ভ্রান্ত দৃষ্টিভঙ্গিই ইহার কারণ। জোট সরকার চালাইতে গিয়াও জোটধর্ম পালন না-করা, একতরফা ভাবে যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ নীতিগত ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়া তাহার পর জোটের ঘাড়ে সেগুলি কার্যকর করার দায় চাপানো ইহা কোয়ালিশন রাজনীতির পরিপন্থী। নদীর জল বণ্টন সর্বদাই একটি কণ্টকিত বিষয়। একই দেশের দুইটি অঙ্গরাজ্য কর্নাটক এবং তামিলনাড়ুর মধ্যেও কাবেরীর জলের ভাগ লইয়া কাজিয়া এখনও অমীমাংসিত। সেখানে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সহিত তিস্তার জল লইয়া দ্বন্দ্ব তো আরও জটিল হইবেই। গঙ্গার জলবণ্টনের সময় রাজ্য সরকারের সহিত আগাম পরামর্শ ও আলোচনার ভিত্তিতে যে ভাবে কেন্দ্র সিদ্ধান্তে পৌঁছাইয়াছিল, তিস্তার বেলায় তাহা হইবে না কেন? তাহার পরেও গত কয়েক মাসে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সহিত বাংলাদেশকে দেয় জলের ভাগ এবং হস্তান্তরযোগ্য ছিটমহল লইয়া কেন্দ্র অর্থপূর্ণ আলোচনা করিয়াছে বলিয়া মনে হয় না। জয়রাম রমেশকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করিতে মনমোহন সিংহ ঢাকা পাঠাইয়াছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্মতি আদায় করিতে তিনি কাহাকে পাঠাইলেন?
অথচ রাজ্যের সম্মতি ছাড়া এই বণ্টন বা হস্তান্তর অসম্ভব। আবার বাংলাদেশকে ক্ষুব্ধ রাখাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। ইতিমধ্যেই মায়ানমারের সহিত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সেতু গড়িয়া তুলিতে টালবাহানার মূল্য নয়াদিল্লিকে দিতে হইতেছে। সেখানে অঞ্চলের বৃহৎশক্তি চিন তাহার বিপুল আর্থিক ক্ষমতা লইয়া তেল ও প্রাকৃতিক সম্পদের নিষ্কাশনে প্রভূত বিনিয়োগ ঘটাইয়া মৈত্রী, শুভেচ্ছা ও সহযোগিতার পরাকাষ্ঠা রচনা করিয়াছে। বাংলাদেশের সঙ্গেও চিনের সুসম্পর্ক রহিয়াছে। নয়াদিল্লির দ্বারা উপেক্ষিত ও বঞ্চিত বাংলাদেশ চিনের দিকে ঝুঁকিয়া পড়িতেই পারে। সে ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলঙ্কার মতো চিনা মিত্রদের দ্বারা বেষ্টিত ভারত আরও অবরুদ্ধ হইয়া পড়িতে বাধ্য। বিশেষত ভুটানের মতো নয়াদিল্লির উপর একান্ত ভাবে নির্ভরশীল দেশও যখন আলাদা ভাবে বেজিংয়ের সহিত নিবিড় সম্পর্ক গড়িতে তৎপর। ছিটমহল ও তিস্তার জল লইয়া জট খুলিতে নয়াদিল্লির আগ্রহের তাই আরও স্পর্শগ্রাহ্য প্রমাণ চাই। কেবল মৌখিক অঙ্গীকারে চিঁড়া ভিজিবার নয়। আর জোটধর্ম ও যুক্তরাষ্ট্রীয়তার কর্মনীতি অনুসরণ করিয়া পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়াও এই কূটনৈতিক অভিযানে সাফল্য পাওয়া দুষ্কর। জট অতএব বেশ জটিলই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.