ফের অশান্তি ছড়িয়ে পড়ায় চার জেলার ত্রাণ শিবিরগুলি থেকে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা থমকে গিয়েছে। কোকরাঝাড় ও চিরাং-এ ফের লাগু হয়েছে কার্ফু। কোকরাঝাড়, বাক্সা, ধুবুরিতে জারি হয়েছে সান্ধ্য কার্ফু। চলছে সেনাবাহিনীর ফ্ল্যাগ মার্চ। সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬১। প্রায় তিনশো ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া মানুষের সংখ্যা সাড়ে তিন লক্ষেরও বেশি। এ দিকে, ত্রাণ শিবিরগুলিতে স্বাস্থ্য পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। মূলত ছড়াচ্ছে পেটের রোগ ও ম্যালেরিয়া জ্বর। পানীয় জলের অভাব ও অপরিচ্ছন্নতা থেকেই মূলত রোগ ছড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন শিবিরে থাকা হাজার চারেক গর্ভবতী মহিলা ও আট হাজার শিশু। খোদ সরকারি হিসেবেই অসুস্থের সংখ্যা ৯৪ হাজার। মৃত অন্তত ১২।
কিন্তু সরকারিভাবে একাধিকবার সব শিবিরে পর্যাপ্ত খাদ্য, ওষুধ, পানীয় জল পাঠানো হচ্ছে বলে দাবি করা হলেও, শিবিরবাসীদের সিংহভাগই তা পাচ্ছেন না। দমবন্ধ অবস্থায়, ময়লা জলের ভরসায়, আধপেটা খেয়ে কোনওমতে বেঁচে রয়েছেন তাঁরা। অধিকাংশ শিবিরে ৪০০ জনের থাকার মতো পরিকাঠামো রয়েছে। কিন্তু থাকছেন গড়ে ২ হাজার মানুষ। একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা শিবিরগুলি ঘুরে এসে জানিয়েছে, ত্রাণ পাঠানো হচ্ছে শিবিরের ক্ষমতা অনুযায়ী। কিন্তু শিবিরগুলিতে আছেন তার পাঁচগুণ মানুষ। |
ত্রাণ শিবিরে বড়ো মহিলারা। সোমবার চিরাং জেলায়। ছবি: পিটিআই |
ফলে ত্রাণ সামগ্রী একেবারেই অপর্যাপ্ত। বিভিন্ন সংগঠনের দাবি, পরিস্থিতি এমন চলতে থাকলে সংঘর্ষে নিহতদের তুলনায় ত্রাণ শিবিরে মৃতের সংখ্যা বাড়বে।
এই অবস্থায় গত কাল সন্ধ্যায়, খোদ মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে লিখিত বিবৃতি পাঠিয়ে জানানো হয়, শিবিরবাসীদের যথাসম্ভব সেরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে অ-সরকারি সংগঠনগুলির সাহায্যও নেওয়া হবে। বিবৃতিতে স্পষ্ট বলা হয়, মুখ্যমন্ত্রী স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অবিলম্বে সংঘর্ষ-কবলিত এলাকাগুলিতে গিয়ে চিকিৎসা পরিষেবার তদারক করার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু তারপরেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী এলাকায় না যাওয়ায় ক্ষোভ বেড়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে উত্তর-পূর্বের সাংসদদের হামিদ আনসারির পক্ষে ভোট দেওয়ানো নিশ্চিত করার জন্যই ‘ম্যানেজার’ হিমন্তকে দিল্লিতে রেখে দেওয়া হয়েছে। আজ দিল্লিতে কংগ্রেসের মুখপাত্র রেনুকা চৌধুরী অবশ্য সে কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, “বড়োভূমি ও নামনি অসমের অবস্থা নিয়ে কংগ্রেস নেতৃত্ব অত্যন্ত চিন্তিত। খোদ প্রধানমন্ত্রী এলাকা সফর করেছেন। সব রকম সাহায্য করা হচ্ছে। শিবিরবাসীদের স্বাস্থ্যের বিষয়ে অবহেলা করার প্রশ্নই নেই। হিমন্ত শিবিরবাসীদের জন্য আরও কিছু ত্রাণ ও সুযোগ-সুবিধা কেন্দ্রের কাছ থেকে আদায় করবেন বলেই দিল্লিতে রয়েছেন।”
আজ মুখ্যমন্ত্রী জানান, প্রয়োজনমতো নতুন ত্রাণ শিবির খোলার জন্য অতিরিক্ত মুখ্যসচিব ও তিন জেলার ডিএমকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পুরনো শিবির থেকে অতিরিক্ত শরণার্থীদের নতুন শিবিরগুলিতে নিয়ে যাওয়া হবে।
বিটিএডির পরিস্থিতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব ক’টি বিভাগের কর্তাদের সঙ্গে আজ তরুণ গগৈ বৈঠক করেন। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ত্রাণ শিবিরগুলিতে প্রতি ১০০ জন পিছু একটি শৌচালয় ও আড়াইশো জন পিছু একটি জলের কলের ব্যবস্থা করার জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরী বিভাগকে তিনি নির্দেশ দেন। গর্ভবতী মহিলা, প্রসূতি, সদ্যোজাত ও শিশুদের প্রতি অতিরিক্ত নজর দিতে বলা হয়েছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ১০৪টি স্থায়ী পুলিশ পিকেটের তত্ত্বাবধান করবেন স্বরাষ্ট্রসচিব শৈলেশ। পরিস্থিতি সামলাতে রাজ্য সরকার পৃথ্বী মাঝির নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার যে বিশেষ প্রতিনিধিদল গড়েছে, তাদের চার সদস্য আজ ধুবুরি রওনা হয়েছেন। |