স্টার্টিং ব্লক থেকে ছিটকে বেরোল আটটা শরীর। অলিম্পিক এরিনা এবং টিভি সেটের সামনে বসে থাকা কোটি কোটি মানুষ দশটা সেকেন্ড নিঃশ্বাস নিতেও ভুলে গিয়েছিলেন। সময় যেন থেমে গিয়েছিল।
তারপরেই অলিম্পিক স্টেডিয়াম ভরে উঠল একটা শব্দে: বোল্ট, বোল্ট, বোল্ট।
একশো মিটার ফাইনাল ছিল সম্রাটকে চ্যালেঞ্জ জানানোর রেস। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল, চ্যাম্পিয়নদের অত সহজে সিংহাসনচ্যূত করা যায় না। কোথায় গেলেন ব্লেক, যাঁকে ধরা হচ্ছিল সম্ভাব্য চ্যাম্পিয়ন হিসাবে? ফাইনালে ৯.৬৩ সেকেন্ড সময় করে আবার একশো মিটারে অলিম্পিক সোনা জিতে নিলেন উসেইন বোল্ট। যা বোল্টেরই নতুন অলিম্পিক রেকর্ড। বেজিং অলিম্পিকে তাঁর সময় ছিল ৯.৬৯ সেকেন্ড। কিন্তু নিজের বিশ্বরেকর্ড (৯.৫৮) ভাঙতে পারেননি। রুপো জিতলেন জামাইকারই ইয়োহান ব্লেক। ব্রোঞ্জ যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিন গ্যাটলিন। ফাইনালে আট জনের মধ্যে সাত জনই দশ সেকেন্ডের কমে দৌড়লেন। আর এক জামাইকান আসাফা পাওয়েল শেষ করলেন আটে।
সেমিফাইনালটা একটু অন্য রকম ছিল। এক বার পিছনে তাকিয়ে দেখেছিলেন। গতিটা একটু স্লো করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তাতেও ১০ সেকেন্ডের কম সময়ে সেমিফাইনালে জিতে একশো মিটারের ফাইনালে উঠতে বোল্টের সমস্যা হয়নি। সময় ৯.৮৭ সেকেন্ড।
আর ব্লেক? সেমিফাইনালে তাঁর সময় ছিল ৯.৮৫। |
সেমিফাইনালে নিজের সেরাটা তিনি দেবেন না, এটা বোঝাই গিয়েছিল। এর আগে বোল্ট বলেছিলেন, তাঁর র্স্টাটটা নয়, শেষ ৫০ মিটারই আসল। এ দিনও শুরুতে একটু পিছিয়ে ছিলেন। কিন্তু মাঝপথে গতি বাড়িয়ে টপকে যান বাকিদের। এতটাই সহজে যে মাথা ঘুরিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীদের দেখে নিতে সমস্যা হয়নি কোনও। ফাইনালটা কঠিন ছিল। কিন্তু বোল্ট যে অন্য ধাতুতে গড়া।
অলিম্পিকের ১০০ মিটার এবং ২০০ মিটারে পরপর দু’বার সোনা জেতা। কার্ল লুইসের পর আর কারও এই কৃতিত্ব নেই। ঠিক এই কৃতিত্বের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন বিশ্বের দ্রুততম মানব। সেই স্বপ্নের দিকে এক ধাপ এগিয়ে গেলেন বোল্ট।
রবিবার ভারতীয় সময় গভীর রাতে বোল্টের সেমিফাইনাল শুরুর আগেই আর এক কিংবদন্তির বিদায় দেখে নিয়েছিল অলিম্পিক। সর্বকালের সেরা অলিম্পিয়ান বলে যাকে ধরা হচ্ছে সেই মাইকেল ফেল্পস। গোটা বিশ্ব তখন থেকেই উদগ্রীব ছিল, আর এক কিংবদন্তির ভাগ্যে কী হয় দেখতে। বোল্টের সমস্যা ছিল, চোট এবং খারাপ ফর্ম। বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্লেকের সামনে এই বোল্ট কতটা কী করেন, সেটাই ছিল প্রশ্ন। বোল্টের সাম্রাজ্যে ব্লেক আরও একটা ধাক্কা দিয়েছেন জামাইকার ট্রায়ালে দু’বারই তাঁকে হারিয়ে। ব্লেকের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ জানানোর জন্য ছিলেন জাস্টিন গ্যাটলিন, টাইসন গে-রাও। কিন্তু চ্যালেঞ্জের জবাব ছিল বোল্টের কাছে। সিডনি অলিম্পিকে ১০০ মিটারে সোনাজয়ী মরিস গ্রিন তো আবার পরিষ্কার তাঁর ফেভারিট বেছে নিয়েছিলেন রেস শুরুর আগেই। এবং সেই ফেভারিট মোটেও বোল্ট ছিলেন না। “উসেইন ওর সেরাটা দেবে নিঃসন্দেহে কিন্তু জিতবে শেষ পর্যন্ত ব্লেকই,” বলেছিলেন গ্রিন। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী অবশ্য মিলল না।
|
একশোর প্রথম তিন |
বোল্ট
৯.৬৩ সেকেন্ড |
ব্লেক
৯.৭৫ সেকেন্ড |
গ্যাটলিন
৯.৭৯ সেকেন্ড |
ফাইনালে ৮ জনের ৭ জনই ১০ সেকেন্ডের কমে দৌড়ন। |
|