তাঁকে একদা সংসদে বয়কট শুরু করেছিল বিজেপি। টু-জি কাণ্ডে তাঁকে তো বটেই, কাঠগড়ায় তুলেছিল তাঁর পুত্রকেও। সেই পি চিদম্বরমই সংসদের বাদল অধিবেশনের আগে সচেষ্ট হলেন বিজেপির সঙ্গে সেতু মেরামতে। আজ সন্ধ্যায় লালকৃষ্ণ আডবাণীর বাসভবনে গিয়ে তাঁর সঙ্গে প্রায় চল্লিশ মিনিট বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। আগামী ৮ অগস্ট শুরু হচ্ছে সংসদের বাদল অধিবেশন। তার আগে আডবাণী-চিদম্বরম সাক্ষাৎকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, শুধু আডবাণী নন, আজ তাঁর স্ত্রী-কন্যার সঙ্গেও কথা বলেন চিদম্বরম। আডবাণীকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, প্রবীণ বয়সেও যে ভাবে তিনি অশান্ত কোকরাঝাড় সফর করে এসেছেন, তা দেখে তিনি চমৎকৃত। কোকরাঝাড় পরিস্থিতিতে আডবাণীর সফর ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী। যদিও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা চিদম্বরমের এই বৈঠক ও আডবাণী-স্তুতির অন্য তাৎপর্য দেখছেন। আর্থিক সংস্কারের লক্ষ্যে আসন্ন বাদল অধিবেশনে পেনশন বিল, বিমা বিল, ফরোয়ার্ড ট্রেডিং বিলের মতো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করাতে চাইছে কেন্দ্র। তার জন্য প্রয়োজন বিরোধীদের সঙ্গে কক্ষ-সমন্বয়, যে দায়িত্বটা বরাবর সামলাতেন সরকারের ‘মুশকিল আসান’ প্রণব মুখোপাধ্যায়। কিন্তু ইউপিএ জমানায় এই প্রথম বার কোনও অধিবেশনে পাওয়া যাবে না প্রণববাবুকে।
কংগ্রেস নেতৃত্ব চেয়েছিলেন প্রণববাবুর পর চিদম্বরমকেই লোকসভার নেতা করতে। বিজেপির আপত্তিতে তা সম্ভব না হওয়ায় সুশীলকুমার শিন্দেকে সেই পদে বসানো হয়। কিন্তু সমস্যা হল, কক্ষ-সমন্বয়ের ব্যাপারে শিন্দের তেমন বলার মতো কোনও ‘সাফল্য’ নেই। অন্য দিকে, সুষ্ঠু ভাবে অধিবেশন চালানোর পাশাপাশি সংসদের অর্থ বিষয়ক স্থায়ী কমিটিও সরকারের একটা বড় চিন্তা, যে হেতু এই অধিবেশনেই সংস্কারপন্থী বিলগুলি আনতে চাইছে সরকার। স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান বিজেপিরই যশবন্ত সিন্হা। শেষ পর্যন্ত তাই সার্বিক পরিস্থিতি সামাল দিতে নামতে হয়েছে সরকার পক্ষের নানা সঙ্কটের মুহূর্তে প্রণবের একদা ‘সহযোগী’ চিদম্বরমকেই। আর অর্থমন্ত্রী হওয়ার সুবাদে বিলগুলি পাশ করানোর গুরুদায়িত্ব তাঁর উপরেই তো বর্তাচ্ছে।
বস্তুত, মনমোহন সিংহ সরকার বিরোধী-শিবিরকে এখন এই বার্তাই দিতে চাইছে যে আর্থিক সঙ্কট থেকে দেশকে বার করে আনাটাই আপাতত অগ্রাধিকার। তাই শুধু বিরোধিতার স্বার্থে ‘ব্যক্তি চিদম্বরমে’র বিরোধিতা করে গেলে বিলগুলি পাশ করানো দুষ্কর হয়ে পড়বে। থমকে যাবে আর্থিক সংস্কার। তা ছাড়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিজেপির সঙ্গে নতুন করে ‘সেতু’ গড়ে তোলাটা ব্যক্তিগত ভাবেও চিদম্বরমের কাছে জরুরি, যখন তাঁর দু’জন বড় রাজনৈতিক ‘শত্রু’র ক্রমশ এনডিএ শিবিরে গুরুত্ব বাড়ছে। তাঁদের এক জন এডিএমকে নেত্রী জয়ললিতা, যিনি গত নির্বাচনে চিদম্বরমের বিতর্কিত জয়ের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে গিয়েছেন। অন্য জন সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। টু-জি মামলায় চিদম্বরমকে যারপরনাই অস্বস্তিতে ফেলেছেন এনডিএ-র এই শরিক নেতা। কাজেই অর্থমন্ত্রীর উপরে দ্বিমুখী আইনি চাপ রয়েছে। উপরন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন ‘হিন্দু সন্ত্রাস’ নিয়ে মন্তব্য করে সঙ্ঘ পরিবারের ক্ষোভও বাড়িয়েছিলেন তিনি।
ফলে এক দিকে ব্যক্তিগত রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা, অন্য দিকে সরকারের তরফে আস্থা অর্জনের দায় আডবাণীর সঙ্গে সাক্ষাতে চিদম্বরম এই দু’টি দিকই সামাল দিতে চাইলেন বলে মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা। |