এলাকার কর্তৃত্ব নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন জখম হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে কোচবিহারের শীতলখুচি চৌপথী লাগোয়া এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে। আহতদের মধ্যে ৭ জনকে শীতলখুচি ও মাথাভাঙা মহকুমা হাসপাতালে চিকিসাধীন রয়েছেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মাথাভাঙার সিআই সহ পদস্থ পুলিশ কর্তারা ঘটনাস্থলে রয়েছেন। কোচবিহারের পুলিশ সুপার প্রণব দাস বলেন, “দুপক্ষের মধ্যে গোলমালের জেরে উত্তেজনা ছড়ানোয় এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে।” পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রেই জানা গিয়েছে, শীতলখুচি ব্লক তৃণমূল সভাপতি ও তাঁর অনুগামী বলে পরিচিত যুব নেতা মদন বর্মন ও দলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির ব্লক কমিটির নেতা শায়ের আলি মিঁয়ার অনুগামীদের মতবিরোধ দীর্ঘদিনের। বুধবার রাতে আইএনটিটিইউসি’র একটি অফিস ভাঙচুরের অভিযোগকে কেন্দ্র করে যা চরম আকার নেয়।
আইএনটিটিইউসি’র স্থানীয় নেতৃত্বের অভিযোগ, শীতলখুচি সুপার মার্কেট চত্বরে সংগঠনের অফিসে বুধবার রাতে আচমকা হামলা ও ভাঙচুর একদল যুব তৃণমূল কর্মী। বৃহস্পতিবার রাখিবন্ধন উপলক্ষে সংগঠনের সদস্যরা ওই অফিসের সামনে জমায়েত হন। ওই যুব কর্মীরা তাঁদের ঢুকতে বাধা দেন। তা নিয়ে বাদানুবাদে উত্তেজনা ছড়ালে দুই পক্ষের সমর্থকরা লাঠিসোটা, ধারালো অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
আইএনটিটিইউসি’র শীতলখুচি ব্লক নেতা সাহের আলি মিঁয়া বলেন, “এলাকায় কর্তৃত্ব নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে যুব তৃণমূল নেতা মদন বর্মনের অনুগামীরা আমাদের অফিস ভাঙচুর করে। এমনকী, বৃহস্পতিবার সশস্ত্র জমায়েত করে ওরাই ওই অফিসে ঢুকতেও আমাদের সদস্যদের বাধা দেয়। বাধ্য হয়েই পাল্টা প্রতিরোধ করতে হয়েছে। ওই ঘটনায় আমাদের দুই জন সদস্য জখম হন। পুলিশকে সবই জানিয়েছি।
অন্যদিকে স্থানীয় তৃণমূল যুব কংগ্রেস নেতা মদন বর্মন অবশ্য ওই সব অভিযোগ নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাননি। মদনবাবু বলেন, “সায়ের আলির বক্তব্য নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। ওই ব্যাপারে যা বলার দলের ব্লক সভাপতি বা জেলা সভাপতি বলবেন।” তৃণমূলের শীতলখুচি ব্লক সভাপতি আবেদ আলি মিঁয়ার সঙ্গে মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।
তৃণমূল কংগ্রেসের শীতলখুচি ব্লক ও যুব তৃণমূল নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ মহলের অবশ্য পাল্টা অভিযোগ, গোটা ঘটনার জন্য আইএনটিটিইউসি নেতা সাহের আলি মিঁয়ার অনুগামীরা দায়ী। বুধবার শীতলখুচি কলেজে দুই দল ছাত্রের মধ্যে মারপিট হয়। ওই ঘটনায় সায়ের আলির ঘনিষ্ঠ একনেতার ছেলে নিগৃহীত হন। তার বদলা নিতে ওই দিন রাতে এলাকার বাসিন্দা অন্য এক ছাত্র ও তার পরিবারের লোকদের ওপর হামলা চালায় আইএনটিটিইউসি’র কিছু লোক। তার জেরে ক্ষুব্ধ জনতা আইএনটিটিইউসি’র অফিসে হামলা চালায়। তাঁরা কেউ যুব তৃণমূলের লোক নন।
বৃহস্পতিবার ফের ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাখিবন্ধনের দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে যাওয়া সাধারণ তৃণমূল সমর্থকদের ওপর ইনটাক সমর্থকেরা হামলায় চালায় বলে অভিযোগ। ওই সব ঘটনায় সব মিলিয়ে ৭ জন জখম হয়েছেন। শীতলখুচি ও মাথাভাঙা হাসপাতালে তাঁদের ভর্তি করানো হয়েছে। গোটা ঘটনায় অস্বস্তিতে পড়েছেন তৃণমূলের শীতলখুচির বিধায়ক তথা রাজ্যের বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন। বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন বলেন, “পার্টি নির্দেশের বাইরে গিয়ে যারা এ ধরণের গোলমাল করে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে। তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলব। পুলিশকেও আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে আরও সক্রিয় হতে হবে।” |