মিলনের বার্তা সব দলের
বৈপরীত্যের ছবি রাখি-উৎসবে
রাখি বন্ধন উৎসবের টুকরো টুকরো ছবিতে ধরা পড়ল বৈপরীত্য। এক দিকে, সিপিএমের জনপ্রতিনিধিদের দূরে রেখেই বৃহস্পতিবার শিলিগুড়িতে রাখী বন্ধন উৎসব পালন করার অভিযোগ উঠেছে। অন্য দিকে, রাজগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক রাখি পরান পঞ্চায়েতে সমিতির সিপিএমের সভাপতিকে। রাজ্য সরকারের নির্দেশে এ দিন শিলিগুড়ি মহকুমার চারটি ব্লকেই যুব কল্যাণ দফতরের উদ্যোগে রাখি বন্ধন উৎসব পালন করা হয়। উৎসবে অংশ নেওয়ার জন্য পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, কর্মাধ্যক্ষ, সদস্য ছাড়াও এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানদেরও চিঠি দিয়ে আমন্ত্রণ জানানো হয়। অভিযোগ উঠেছে, কংগ্রেস পরিচালিত মাটিগাড়া, নকশালবাড়ি এবং ফাঁসিদেওয়ায় বেছে বেছে সিপিএম সদস্যদেরই ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়নি। অন্য দিকে ব্যতিক্রম খড়িবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতি। সিপিএম পরিচালিত ওই পঞ্চায়েত সমিতির সব দলের সদস্যদেরই আমন্ত্রণ জানানো হয়। বিরোধী কংগ্রেসের সদস্যরাও অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। বিপরীত চিত্র দেখা গিয়েছে জলপাইগুড়িতে। সেখানে রাজগঞ্জের তৃণমূল বিধায়ক রাখি পরান পঞ্চায়েতে সমিতির সিপিএমের সভাপতিকে। সরকারি রাখি বন্ধন অনুষ্ঠানে এমন রাজনৈতিক সৌজন্যের ছবি দেখে হাততালি দেন সাধারণ বাসিন্দারা।
শিলিগুড়ির ঘটনায় সিপিএম রাজ্যের শাসক জোটের বিরুদ্ধে ‘সংকীর্ণ’ রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছে। অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছেন ফাঁসিদেওয়ার কংগ্রেস বিধায়ক তথা রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী সুনীল তিরকি এবং মাটিগাড়া নকশালবাড়ির বিধায়ক শঙ্কর মালাকার। সুনীলবাবু বলেন, “কলকাতায় রয়েছি। কী হয়েছে জানি না। ফিরে গিয়ে খোঁজ নেব।” তবে মাটিগাড়া নকশালবাড়ির কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্কর মালাকার সাফ বলেছেন, “অনুষ্ঠানের আয়োজক যুব কল্যাণ দফতর। আমন্ত্রণ জানানোর কাজ তাঁরাই করেছেন। কেন সিপিএমের জনপ্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি সেই ব্যাখ্যা তাঁদেরই দেওয়া উচিত।”
অন্য দিকে, সিপিএমের দার্জিলিং জেলার ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকার বলেন, “রাখি বন্ধন এমন একটা উৎসব যা মানুষকে সংকীর্ণতার উর্ধ্বে তুলে ধরে। কিন্তু এই রাজ্য সরকার তো সংকীর্ণ দলবাজিই করছে। সুতরাং এমন সরকারের কাছে আমাদের দলের জনপ্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ না-জানানোর সংকীর্ণতা অপ্রত্যাশিত নয়। তবে মানুষ এ সব দীর্ঘদিন মেনে নেবেন না।”
যুব কল্যাণ দফতর সূত্রেও জানা গিয়েছে, প্রতিটি ব্লকের যুব কল্যাণ আধিকারিকদেরই অনুষ্ঠান পরিচালনার জন্য আহ্বায়ক নিযুক্ত করে কমিটি তৈরি করা হয়েছিল। ব্লক যুব কল্যাণ আধিকারিকেরাই আমন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করেন। কেন সিপিএম সদস্যরা আমন্ত্রণপত্র পাননি তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ফাঁসিদেওয়ার ব্লক যুব কল্যাণ আধিকারিক রঞ্জু শেরপা বলেন, “পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম জনপ্রতিনিধিদের আমন্ত্রণপত্র না-পাওয়ার কোনও কারণ আমার কাছেও স্পষ্ট নয়। আমি প্রত্যেককে আমন্ত্রণ জানিয়েছি।” যদিও পঞ্চায়েত সমিতির সিপিএম সদস্য হেমন্ত রায় সাফ জানিয়েছেন, তাঁকে কেউ ওই অনুষ্ঠানের জন্য আমন্ত্রণ জানায়নি। তিনি ওই অনুষ্ঠানের ব্যাপারে এ দিন বিকেল পর্যন্ত কিছুই জানতেন না।
মাটিগাড়া ও নকশালবাড়ির ব্লক যুবক কল্যাণ আধিকারিক মাসাউর রহমান অবশ্য দাবি করেছেন, “খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হয়। এমন হতে পারে যে যাঁকে আমন্ত্রণপত্র বিলির দায়িত্ব দেওয়া হয় তিনি পৌঁছতে পারেননি। এর মধ্যে অন্য কোনও উদ্দেশ্য খোঁজা ঠিক হবে না।” মাটিগাড়া পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি তথা সদস্য সিপিএমের নীলিমা গুহনিয়োগী দাবি করেন, “আমায় কেউ ওই অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কিছু জানায়নি। সেই কারণে যেতেও পারিনি।”
এ দিন মহকুমার চার ব্লকে যে অনুষ্ঠান হয় সেখানে নকশালবাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষরা হাসপাতালের রোগীদের রাখি পরিয়ে দেন। মাটিগাড়ায় কয়েকশো মহিলাকে সামনে রেখে পদযাত্রা হয়। খড়িবাড়ি ও ফাঁসিদেওয়ায় স্কুলের মেয়েরা রাখি পরিয়ে দেয় সহপাঠীদের। মাটিগাড়া ব্লক কমিউনিটি হলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে এলাকার বিধায়ক শঙ্কর মালাকার বলেন, “রাখী বন্ধন সৌভ্রাতৃত্বের অনুষ্ঠান। একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, কেবল রাখি বন্ধন উৎসব করলেই হবে না। নারী নির্যাতন বন্ধে সবাইকে উদ্যোগী হতে হবে। মহিলাদেরও সংরক্ষণের সুবিধা নিয়ে আরও বেশি করে প্রশাসনিক কাজে অংশ নিতে হবে।” পূর্বাঞ্চল কল্যাণ আশ্রমের পক্ষ থেকেও এ দিন রাখি বন্ধন উৎসব উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠান হয়।
সরকারি নির্দেশ মতোই রাজগঞ্জ বিডিও অফিসের সামনে রবীন্দ্রনাথের ছবিতে মালা দিয়ে শুরু হয় রাখি বন্ধন অনুষ্ঠান। সেখানে সিপিএম সভাপতির দেওয়া রাখি পরে তৃণমূল বিধায়ক বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই রাখি বন্ধন অনুষ্ঠান চলছে বাংলা জুড়ে। রাজ্যে শান্তি সম্প্রীতি বজায় রাখতে এমন অনুষ্ঠান আগে কখনও হয়নি। সিপিএমের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বলেন, “রাখির উৎসবে রাজনীতি নয়। একসময়ে বাংলাই রাখি পরিয়ে দেশের অখন্ডতা রক্ষা করে। এই উৎসব শান্তির, মিলনের।”
রাখির দিনে ভিন্ন চিত্র জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানাতেও। প্রতিদিনের মতো এ দিন সকালেও কাঁচুমাচু মুখে জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানায় হাজিরা দিতে এসেছিলেন বিশু। মাস খানেক আগে চুরির অভিযোগে ধরা পড়ে জামিনে মুক্তি পেয়ে আদালতের নির্দেশেই রোজ থানায় হাজিরা দেন। থানায় এসে একটি সই করেই প্রতিদিন দ্রুত থানা থেকে চলে যায় সেনপাড়ার বাসিন্দা বিশু। এদিনও হাজিরা খাতায় সই করে সবে পেছন ঘুরেছে, হঠাৎ দারোগা বাবুর গম্ভীর ডাক, “বিশু, এদিকে আয় তো...” ফ্যাকাশে মুখে বিশু গুটি গুটি পায়ে সামনে যেতেই হতবাক। দারোগা বাবু লাড্ডু এগিয়ে দিচ্ছেন। কদিন আগেই যে দারোগাবাবুর কাছে খুব একচোট হয়েছিল। তাঁর হাতে লাড্ডু দেখে চোখ ছানাবড়া। দারোগাবাবু আলোয়াল আহমেদ ভরসা দিয়ে বলেন, “ভয় নেই রে। রাখীর দিনে থানায় এসেছিস, তাই একটু মিষ্টিমুখ।”
ঘাবড়ে গিয়েছিলেন সদ্য ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে পেশাদারি সংস্থায় কর্মরত সায়ন চক্রবর্ত্তীও। মোবাইল ফোন নিয়ে অভিযোগ জানাতে থানায় ঢুকতেই দু’দিক থেকে প্রায় দৌড়ে এলেন দুই মহিলা কনস্টেবল। একজনের হাতে রাখি, অন্যজনের মিষ্টি। মিষ্টি মুখে সায়ন বললেন, “পুলিশের এমন ব্যবহার ভালই তো।” কোতোয়ালি থানার উল্টোদিকে রাস্তায় পুরসভা ও যুব কল্যান দফতরের উদ্যোগে তৈরি রাখি উৎসবের অনুষ্ঠানে মাইকে ডিএসপি হরিপদ শীকে রাখী পরাতে গিয়ে হুমড়ি খেলেন পুরসভার কাউন্সিলররা। আবেগতাড়িত হয়ে ডিএসপি হরিপদবাবু পাশে দাঁড়ানো আইসিকে নির্দেশ দিলেন সকলের জন্য মিষ্টি আনতে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.