ছোটবেলায় একটা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে খুব উঠত। মেয়েটা নাকি বড়দের একদম মানে-টানে না। কোর্টের বাইরে এমনিতে শান্ত। কিন্তু র্যাকেটটা হাতে তুলে নিলেই কেমন একটা খুনে মেজাজের হয়ে যায়। তখন তার একটাই মন্ত্র: ‘মার দুঙ্গি’। উল্টো দিকে কে, পাত্তাই দেয় না।
কোর্টের ভিতরের এই মেজাজই আজ অলিম্পিক সেমিফাইনালে তুলে দিল সাইনা নেহওয়ালকে। প্রথম বারের জন্য।
এক দিকে হাঁটু মুড়ে বসে কোর্ট চাপড়াচ্ছেন সাইনা। কোর্টের বাইরে দু’হাত তুলে দাঁড়িয়ে পুলেল্লা গোপীচন্দ। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত অলিম্পিকটা ভাল কাটেনি ভারতের। কিন্তু ওই একটা ছবি যেন সব কিছু বদলে দিল। হারের কালো মেঘ চিরে আবার পদকের স্বপ্ন দেখা শুরু হয়ে গেল ভারতের। |
লক্ষ্যের দিকে আরও এক ধাপ। বৃহস্পতিবার কোয়ার্টার
ফাইনালে জয়ের পরে সাইনা। ছবি: উৎপল সরকার |
সাইনা-পদক এবং ভারতের মাঝে এখন দাঁড়িয়ে চিনের প্রাচীর। অলিম্পিকে সাইনা চতুর্থ বাছাই। তাঁর আগের তিন জনই চিনের। আর শুক্রবার সেমিফাইনালের লড়াইয়ে সাইনাকে খেলতে হবে বিশ্বের এক নম্বর প্লেয়ার, চিনেরই ওয়াং ইহানের বিরুদ্ধে। যাঁর সঙ্গে এখনও পর্যন্ত পাঁচে পাঁচটাই হেরেছেন সাইনা। সেমিফাইনালে জিতলে পৌঁছে যাবেন সোনা-রুপোর লড়াইয়ে। আর হেরে গেলে ব্রোঞ্জ জেতার আরও একটা সুযোগ থাকবে সাইনার সামনে। শনিবার দুই পরাজিত সেমিফাইনালিস্টের লড়াই জিততে পারলে চলে আসবে ব্রোঞ্জ। তবে এ দিন পারুপল্লি কাশ্যপ কোয়ার্টার ফাইনালে হেরে যাওয়ায় পুরুষদের ব্যাডমিন্টনে ভারতের চ্যালেঞ্জ শেষ হয়ে গেল। “অলিম্পিক সেমিফাইনালে ওঠাটা আমার জীবনের বড় স্বপ্ন ছিল। গত বার কোয়ার্টার ফাইনালে এগিয়ে থেকেও হেরে গিয়েছিলাম....যন্ত্রণাটা এখনও আছে,” ম্যাচের পর শিশুর মতো উচ্ছল শোনাচ্ছিল সাইনাকে। ম্যাচ যত এগিয়েছে, তত দর্শক সমর্থন বেড়েছে সাইনার জন্য। “মনে হচ্ছিল প্রায় ভারতেই খেলছি। লন্ডনে অলিম্পিক হওয়াতে খুব ভাল হয়েছে,” বলছিলেন তিনি। দু’বারের অল ইংল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন টাইন বনকে এ দিন যখন প্রথম গেমে ২১-১৫ উড়িয়ে দিলেন সাইনা, মনে হচ্ছিল লড়াইটা একপেশেই হতে যাচ্ছে। বেশ কিছু ডাবল ফল্ট করেছেন ডেনমার্কের তারকা। এমনকী স্ম্যাশগুলোও ঠিকঠাক পড়ছে না। কিন্তু দ্বিতীয় গেমে ছবিটা বদলে যেতে শুরু করল। শুরু থেকেই ৩-০ এগিয়ে যান বন। একটা সময় ২০-১৭ দাঁড়িয়ে তিনটে গেম পয়েন্ট পেয়ে গিয়েছিলেন সাইনার প্রতিদ্বন্দ্বী। মনে হচ্ছিল, ম্যাচ তিন গেমে চলে যাবে। কিন্তু এই সাইনা যে বদলে গিয়েছেন। ‘মার দুঙ্গি’ মনোভাব তো আছেই, তার সঙ্গে মিশেছে পরিণতি বোধটাও। দুইয়ের মিশেলে অপ্রতিরোধ্য সাইনা ওই কুড়িতেই আটকে রেখে দিলেন বনকে। দ্বিতীয় গেম জিতে নিলেন ২২-২০। সাইনার স্ম্যাশটা এ দিন বন নেটে মারার সঙ্গে সঙ্গে অলিম্পিক ইতিহাসে ঢুকে গেল হায়দরাবাদের ২২ বছরের তরুণীর নাম। প্রথম ভারতীয় হিসাবে যিনি অলিম্পিক ব্যাডমিন্টন সেমিফাইনালে ওঠার ছাড়পত্র পেয়ে গেলেন।
চার বছর আগে বেজিংয়ে কোয়ার্টার ফাইনালেই থেমে যেতে হয়েছিল ভারতীয় তরুণীকে। এ দিন ম্যাচ শুরুর আগেও অনেকে ভয় পেয়েছিলেন, সাইনা না আবার চাপের শিকার হয়ে যান। কিন্তু এই সাইনা যে অনেকটাই বদলে গিয়েছেন। অলিম্পিকে আসার আগে বলেছিলেন, “মানসিক ভাবে আমি এখন দারুণ শক্তিশালী। কোর্টের উল্টো দিকে কে আছে, ভাবি না। শুধু নিজেকে বলি, আমি যখন ১৩ বছরের ছিলাম, ২৩-২৪ বছরের প্রতিদ্বন্দ্বীদের হারিয়েছি। তা হলে এখন কেন জিতব না?”
শুক্রবার দুপুরে টিভি খুলে বসার সময় এই কথাটাই নিশ্চয়ই বারবার বলবে গোটা দেশ: ‘কেন সাইনা জিতবে না?’
|
আজ সাইনা |
কখন: দুপুর দেড়টার পর।
বিপক্ষ: ওয়াং ইহান (চিন)
প্রতিপক্ষ সম্পর্কে টুকিটাকি: ওয়াং বিশ্বর্যাঙ্কিংয়ে এক নম্বর। বিশ্বকাপ, উবের কাপ, সুদিরমান কাপ, বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ প্রায় সব বড় টুর্নামেন্টেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার অভিজ্ঞতা আছে।
গোপীচন্দ কী বলছেন: “এই অলিম্পিকে অনেককেই দেখছি নার্ভ হারিয়ে ম্যাচ হারতে। সাইনাকে শুক্রবার নার্ভ ঠিক রাখতে হবে।”
সাইনা বনাম ওয়াং: পাঁচ বারের সাক্ষাতে সাইনা হেরেছেন পাঁচ বারই সাম্প্রতিক বড় টুর্নামেন্টে সাইনা- চলতি বছরে জিতেছেন সুইস ওপেন গ্রাঁ প্রি, তাইল্যান্ড ওপেন গ্রাঁ প্রি এবং ইন্দোনেশিয়া ওপেন সুপার সিরিজ। |
|