এমু-র খামার খুলে ডানা মেলছে স্বপ্ন
তুন স্বপ্ন, নতুন পরিকল্পনা, নতুন সব-কিছুই। নতুন প্রাণের ওঁরা বিশ্বাস করেন, পরিকল্পনা আর পরিশ্রমেই হাতের মুঠোয় আসে সাফল্য। তাই ‘নতুন কিছু’ খুঁজেই ঝুঁকির ব্যবসায় নেমেছেন ওঁরা আট জন। ওড়িশা-ঘেঁষা পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন-২ ব্লকের প্রত্যন্ত সন্তোষপুর গ্রামের আট উদ্যোগপতি খুলে ফেলেছেন এমু-পালনের খামার। আর মাত্র আট মাসেই সাড়া মিলছে আশাতীত।
গত বছরের মাঝামাঝি বডোদরা বেড়াতে গিয়েছিলেন সন্তোষপুরের বাসিন্দা অলোকেশ প্রধান। সেখানেই তিনি দেখেন এমু পাখির খামার। কথায় কথায় জানতে পারেন, গাছের মধ্যে নারকেল যেমন লাভজনক, তেমনই এমু-র ডিম, মাংস থেকে শুরু করে চামড়া, নখ, পালকসমস্তটাই বিক্রয়যোগ্য। পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া, বীরভূম ও হুগলিতে এমুর তিনটি খামার খুলেছে ইতিমধ্যে। অলোকেশবাবু বলেন, “গ্রামের সাত জনের সঙ্গে এ নিয়ে প্রাথমিক কথা বলে বডোদরার কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করি। তারা সাহায্যের আশ্বাস দেওয়ায় আর দেরি করিনি।” গণিতে সাম্মানিক-স্নাতক অলোকেশবাবুর সঙ্গী হয়েছেন তাঁর গ্রামেরই রাজু প্রধান, কালীকৃষ্ণ সাউ, মানিক গিরি, বিশ্বনাথ মাইতিরা। আট জনে মিলে গত অক্টোবরে খুলে ফেলেন এমু পালনের খামার। অলোকেশবাবুর বাড়ি-লাগোয়া জমিতেই শেড তৈরি করে ১২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৪০টি চার বছর বয়সের পাখি এনে লালন-পালন শুরু হয়। পাখিগুলির পরিচর্যার জন্য নিয়োগ করা হয় গ্রামেরই শম্ভু মান্ডি, স্বপন দাসকে।
ছবি তুলেছেন কৌশিক মিশ্র।
মানিক গিরি, রাজু প্রধানরা বলেন, “এই পাখি-পালনে ঝামেলা কম, লাভ বেশি। এদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। এরা হিংস্রও নয়।” কালীকৃষ্ণ, বিশ্বনাথরা জানান, এমুর প্রজনন-কাল বর্ষা ও শীতের মাঝে। প্রতিটি স্ত্রী-পাখি বছরে গড়ে ৩০টি করে ডিম পাড়ে। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে এরা কালচে-সবুজ রঙের ডিম দেয়। প্রতিটি ডিমের ওজন গড়ে ৭০০ গ্রাম। নির্দিষ্ট মেশিনে রাখলে দু’মাসের মধ্যে ডিম ফুটে ৫০০-৬০০ গ্রামের শাবকের জন্ম হয়। নিয়মিত এদের স্নান করাতে হয়। দু’বেলা মোট ৬০০ গ্রাম করে খাবার খায় প্রতিটি পাখি। শিলিগুড়ি থেকে আনা শুকনো খাবার ছাড়াও টাটকা সবজি দেওয়া হয়।
এমু-র গড় আয়ু ২৫ বছর। মাত্র ১৪ মাস বয়স থেকেই এরা ডিম দিতে শুরু করে। ২১ বছর বয়স পর্যন্ত ডিম দেয়। ডিম দেওয়ার আগে পর্যন্ত এমুর মাংস হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। প্রত্যেকটি ডিমের দাম ১৫০০ টাকা। এমুর মাংসে চর্বি ও কোলেস্টেরল প্রায় নেই বললেই চলে। তাই বিদেশে চাহিদা বেশি। পূর্ণবয়স্ক এমুর চামড়া থেকে শৌখিন ব্যাগ তৈরি হয়। এমুর চর্বি থেকে নিষ্কাশিত তেলের মূল্য কেজি প্রতি ৬০০০ টাকা। হাড়ের গুঁড়ো থেকে ওষুধ, নখ থেকে গহনা, ঘর সাজানোর শৌখিন সামগ্রী, পালক ও মল থেকেও মাছের খাবার তৈরি হয়। ইতিমধ্যে অলোকেশবাবুরা প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা দিয়ে ডিম ফোটানোর মেশিনও কিনে এনেছেন। ওই মেশিনে এমু ছাড়াও অবশ্য হাঁস-মুরগির ডিম ফুটিয়ে অতিরিক্ত আয়ের সুযোগ পেয়েছেন। এই ক’মাসেই এমুর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৬৫। লক্ষ্য অবশ্য পাঁচশো জোড়া পাখির খামার করা। ইতিমধ্যেই বাচ্চা পাখি, ডিম ও মাংসের বরাত আসতে শুরু করেছে।
বডোদরার যে খামার দেখে যাত্রা শুরু, তার মালিক বিনয় শর্মা জানান, মাত্র বছর ছয়েক আগে ভারতে এমু-খামারের ব্যবসা শুরু হয়। অন্ধ্রপ্রদেশ ও গুজরাতে এই ব্যবসার ইতিমধ্যেই প্রসার ঘটেছে। নাবার্ড-সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাওয়ারও সুযোগ থাকায় এবং প্রচুর লাভের সম্ভাবনায় এই ব্যবসায় আগ্রহ বাড়ছে দিনদিন। বিপণনের জন্য ছোট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিচ্ছেন বড় ব্যবসায়ীরা। ফলে ঝামেলা কম। এমুর মাংসের চাহিদা তৈরি হচ্ছে ভারতেও।
বৃষ্টিতে পালক ছড়িয়ে আনন্দে ভেজে এমুরা। তা দেখতে গ্রাম তো বটেই আশপাশের জেলা, এমনকী কলকাতা থেকেও অনেকে আসছেন সন্তোষপুরে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.