তৃণমূল বিক্ষোভে শান্তির জল সিপিএমের রাখি
রাখির কী মহিমা! সিপিএম-তৃণমূলের মধ্যেও সম্প্রীতির বাতাস বইয়ে দেয়!
যে সে সম্প্রীতিও নয়! একেবারে গলার শির ফোলানো বিক্ষোভের মুখে মোলায়েম স্নেহের প্রলেপ! গোঘাটের এক পঞ্চায়েত অফিস এমনই ‘আশ্চর্য’ দৃশ্যের জন্ম দিল!
হইচইটা বেধেছিল বৃহস্পতিবারের বারবেলায়। হুগলির গোঘাট ১ ব্লকের কুমুড়শা পঞ্চায়েত অফিসের সামনে অন্তত শ’তিনেক লোক। সকলেই তৃণমূলের। দাবি, একশো দিনের কাজে বকেয়া মজুরি দিতে হবে।
পঞ্চায়েত চালায় সিপিএম। বিক্ষোভের খবর পেয়ে মহিলা প্রধান এলেন ঘণ্টা দুই পরে। সমবেত গলার সুর চড়ল। স্লোগান উঠল, “তিন মাসের মজুরি বাকি কেন, প্রশাসন জবাব দাও!”
প্রধানের মুখে টুঁ শব্দ নেই। চেঁচামেচি কতটা কী শুনছেন বা শুনছেন না, তা-ও বোঝার জো নেই। হঠাৎই সকলকে চমকে দিয়ে প্লাস্টিকের প্যাকেট খুলে বের করে ফেললেন একখানা রাখি। যে বিক্ষোভকারীকে সামনে পেলেন, তাঁর হাত টেনে নিয়ে বেঁধে দিলেন পটাপট।
অঙ্কন: সুমন চৌধুরী
যাঁদের দলের এক মন্ত্রী নিয়ম করে বলে চলেছেন, ‘সিপিএমকে ঘৃণা করুন, ওদের মুখ দেখাও পাপ’, সেখানে এ হেন ঘটনার সামনে পড়ে তাঁরা তো থতমত! হঠাৎই বোধহয় এক জনের মনে পড়ে যায়, ‘দিদি’ বলেছেন রাখিবন্ধনে সামিল হতে। তাঁর উপরে আর কে! বুকের মধ্যে ভিতু-ভিতু ভাবটা কেটে যায়। বাঁকাচোরা ভুরুগুলো সোজা হতে থাকে। টুক করে হেসেও ফেলেন কেউ কেউ।
পঞ্চায়েতের প্রধান মালতী রায় তখন একের পর এক হাত টেনে নিয়ে রাখি বেঁধে চলেছেন। ‘দাদা’, ‘ভাই’ সম্বোধন করে কাছে ডেকে নিচ্ছেন দূরের লোকেদের। গোলমাল দেখে যাঁরা এত ক্ষণ অফিসে সিঁটিয়ে বসে ছিলেন, ডাকছেন সেই পঞ্চায়েত কর্মীদেরও। মেঘলা দুপুরে হঠাৎই যেন ভিজে হাওয়া বয়ে গিয়েছে। জুড়িয়ে গিয়েছে রাগের আঁচ। যেন কারও কোনও ক্ষোভ নেই। যেন স্রেফ রাখি বাঁধতেই সকলে জড়ো হয়েছিলেন।
গোলমালের খবর পেয়েই আগেভাগে রাখি এনে রেখেছিলেন?
মুখ টিপে হাসেন বছর চল্লিশের মালতীদেবী। তার পরেই কথা গুছিয়ে নিয়ে বলেন, “যার দলের রং যা-ই হোক না কেন, রাখিবন্ধনের মাহাত্ম্য তার অনেক উপরে। এলাকার দাদা-ভাই-বোনেদের হাতে আন্তরিক ভাবেই রাখি পরিয়েছি।” তৃণমূলের ব্লক নেতা মনোরঞ্জন পাল, প্রদীপ রায়েরা হাসিমুখে যোগ করেন, “আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও রাখিবন্ধন উৎসব পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমরাও প্রধান এবং আরও অনেককে রাখি পরিয়েছি।”
কিন্তু শ্রমিকদের দাবির কী হবে? প্রধানের জবাব, “ত্রুটি-বিচ্যুতি যে হয়েছে, তা স্বীকার করেছি সকলের সামনে। সোমবার সমস্যা সমাধানের জন্য মহকুমা স্তরের আধিকারিকেরা আলোচনায় বসবেন।” আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম নিয়োগীও তেমনই আশ্বাস দিয়েছেন। তৃণমূল নেতারা জানিয়েছেন, আলোচনায় কাজ না হলে প্রয়োজনে ফের আন্দোলন হবে।
ভবিষ্যতে কী হবে, সে পরের কথা। তবে সত্যি বলতে, বৃহস্পতিবারের মতো একটা দিন গোঘাট বেশি দেখেনি। এত লোক জড়ো হল। তবু পুলিশ-টুলিশ ডাকতে হল না। প্রশাসনকেও নাক গলাতে হল না। মিষ্টি-মুড়ি এল। সে সব খেতে খেতে বাড়ির দিকে পা বাড়ালেন সকলে। বলে গেলেন, “দাবি-দাওয়ার কথা আজ থাক।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.