বিবেক মেলার পরে এ বার রাখিবন্ধন।
অনুষ্ঠান ‘সফল’ করার জন্য রাজ্যের যুব কল্যাণ দফতর প্রতিটি ব্লক ও পুর এলাকায় যে-নির্দেশিকা পাঠিয়েছে, তা মানতে গিয়ে ফাঁপরে পড়েছেন স্থানীয় স্তরের আয়োজকেরা। ওই দফতর অনুষ্ঠান-পিছু যে-টাকা বরাদ্দ করেছে, এই বাজারে তাতে কী ভাবে অনুষ্ঠান করা সম্ভব, তা নিয়ে সংশয়ে ব্লক ও পুর-প্রশাসনের আধিকারিকেরাই।
যুব কল্যাণ দফতরের নির্দেশ, শহরের কোনও জনবহুল এলাকায় ৩০০ বর্গফুটের প্যান্ডেল করতে হবে। তাতে ৩০ বর্গফুটের ফ্লেক্স থাকবে। ওই ফ্লেক্সে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি ‘ডিসেন্ট’ বা ‘দৃষ্টিনন্দন’ ছবি রাখতে হবে। থাকবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবিও। অনুষ্ঠানের জন্য এক হাজার রাখি কিনতে হবে। ডাকতে হবে স্থানীয় স্কুল-কলেজের ছেলেমেয়েদের। থাকতে হবে সাধারণ মানুষকেও। সেই সঙ্গে শিক্ষা-সংস্কৃতি ও ক্রীড়া ক্ষেত্রে বিশিষ্টজনদের আমন্ত্রণ জানাতে হবে। থাকবেন বিধায়কেরাও। অনুষ্ঠান শেষে সকলকে মিষ্টিমুখ করাতে হবে।
কাল, বৃহস্পতিবার রাজ্যের প্রতিটি ব্লক ও পুর এলাকায় এ ভাবেই ‘রাখিবন্ধন উৎসব’ পালন করবে যুব কল্যাণ দফতর। ১৯০৫-এর ১৬ অক্টোবর বঙ্গভঙ্গের দিনে রাখিবন্ধনের ডাক দিয়ে পথে নেমেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। |
রাখি নির্দেশ |
• সব ব্লক, পুরসভার কেন্দ্রীয় স্থলে মাইকের ব্যবস্থা-সহ ৩০ ফুট লম্বা ও ১০ ফুট চওড়া মঞ্চ
• ১০ ফুট লম্বা এবং ৩ ফুট চওড়া মুখ্যমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত ফ্লেক্স-ব্যানার
• মালা দেওয়া রবীন্দ্রনাথের ছবি
• প্রতি কেন্দ্রে অন্তত এক হাজার রাখি
• জনতাকে রাখি পরানোর জন্য যত বেশি সম্ভব স্কুলছাত্রী, স্থানীয় মহিলাদের উপস্থিতি
• জনপ্রতিনিধি-সহ স্থানীয় সংস্কৃতি, শিক্ষা এবং ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতি
• গানের সঙ্গে সময়োপযোগী বক্তৃতা
• রাখি পরানোর পরে মিষ্টিমুখ
• প্রতি কেন্দ্রকে ছ’হাজার টাকা করে সাহায্য |
|
সে-দিনটি অবশ্য রাখি পূর্ণিমা ছিল না। রাজ্য সরকার রাখিবন্ধন উৎসবের মাধ্যমে সম্প্রীতির বার্তা দিতে চাইলেও তা পালিত হচ্ছে রাখি পূর্ণিমার দিনেই।
গত বছর প্রতিটি ব্লকে ‘বিবেক মেলা’র আয়োজন করেছিল যুব কল্যাণ দফতর। তখন ব্লক-পিছু লক্ষাধিক টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। এ বার দেওয়া হচ্ছে ছ’হাজার টাকা করে। রাজ্যের ৩৪১টি ব্লক এবং কলকাতা পুরসভা-সহ ১৩২টি পুরসভার জন্য প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে যুব কল্যাণ দফতর। সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিবেক মেলার মতো রাখিবন্ধন উৎসবে এত টাকা খরচ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের মধ্যেই।
এত কম টাকায় অনুষ্ঠান ‘সফল’ করতে গিয়ে ফাঁপরে পড়েছেন বিভিন্ন ব্লক ও পুরসভার কর্তৃপক্ষ। পশ্চিম মেদিনীপুরের একটি ব্লকে অনুষ্ঠানের জন্য মঙ্গলবার স্থানীয় বাজারে রাখির দাম জানতে গিয়েছিলেন এক কর্মী। তিনি দেখেন, ছোট রখির দাম ৩-৪ টাকা। পাতে দেওয়ার মতো মিষ্টির দাম কমপক্ষে চার টাকা। প্যান্ডেল, মাইকের জন্য খরচ পড়বে দু’হাজার টাকা। ফ্লেক্সে অন্তত ৩০০ টাকা। সব মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার টাকার ধাক্কা! ওই আধিকারিকের কথায়, “ছ’হাজারে সব কিছু করা খুব মুশকিল।” জঙ্গলমহল এলাকার এক বিডিও বলেন, “সব জিনিসেরই দাম বেড়েছে। ছোট রাখি কিনতেই পাঁচ টাকা পড়ে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে সমস্যা তো হচ্ছেই। কী আর করা যাবে! ‘মুখ রাখতে’ রাখি আর মিষ্টির মাপ ছোট করতেই হচ্ছে।”
সরকারি নির্দেশ মেনে মুর্শিদাবাদের ২৬টি ব্লক এবং সাতটি পুরসভাতেও রাখি উৎসব পালনে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। জেলা যুব আধিকারিক দেবব্রত বিশ্বাস বলেন, “মঞ্চে চেয়ারের উপরে রবীন্দ্রনাথের ছবি রাখা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর ছবি রাখার কথাও বলা হয়েছে।” তবে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর কোন ছবি মঞ্চে রাখা হবে, তা ঠিক করে উঠতে পারেনি জেলা প্রশাসন। দেবব্রতবাবু বলেন, “মাইক-প্যান্ডেলের ভাড়া মিটিয়ে হাতে কত থাকবে, জানি না। এর পরে নিশ্চয়ই রাজভোগ খাওয়ানো যাবে না! তাই বোঁদে দেওয়া হবে।” বহরমপুর ব্লকের ভারপ্রাপ্ত যুব অফিসার বিভাসকুমার চন্দ্র বলেন, “অনুষ্ঠানের জন্য রবীন্দ্রনাথ ও মুখ্যমন্ত্রীর ছবি তৈরি করতে দেওয়া হয়েছে।” কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান কংগ্রেসের অসীম সাহা অবশ্য মঙ্গলবারেও রাখিবন্ধন উৎসব পালনের কোনও সরকারি নির্দেশিকা পাননি বলে জানান। তিনি বলেন, “সরকারি নির্দেশিকা হাতে পেলে বোর্ড অফ কাউন্সিলের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেব।” নদিয়ার গয়েশপুরের পুরপ্রধান সিপিএমের গোপাল চক্রবর্তী অবশ্য বলেছেন, “সোমবারেই চিঠি পেয়েছি। এই অল্প সময়ে এবং অল্প টাকায় যেটুকু
করা যায়, চেষ্টা করব।” |