স্টেশনের ‘পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে’ ঘোষণা শুনলেই কান পাতছিল বছর বারোর স্কুলপড়ুয়াটি। শিয়ালদহ থেকে তখন শুধু ছাড়ছে ‘কল্যাণী স্পেশাল।’ “ট্রেন না-পেলে বাড়ি ফিরব কী করে?” পাশে দাঁড়ানো বাবাকেই শেষে প্রশ্নটা করল শাশ্বত। জবাব দিতে পারলেন না ‘ট্যাক্স ট্রাইব্যুনালের’ কর্মী, জনাইয়ের বাসিন্দা তুষার মুখোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার দুপুরে স্টেশনের সামনে তখন বাস-ভ্যান-ট্যাক্সির গাদাগাদি ভিড়। প্ল্যাটফর্মের বদলে তুমুল ভিড় জমে রয়েছে ধর্মতলা, হাওড়ার বাসস্ট্যান্ডে। ভিন জেলা, শহরতলির জনতা সড়কপথেই বাড়ি ফিরতে মরিয়া। শেয়ার গাড়ির চাহিদা তুঙ্গে। একটা ফাঁকা গাড়ি দেখলেই তার গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন প্রায় পঞ্চাশ জন!
|
ট্রেন বন্ধ। বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় নিত্যযাত্রীরা। মঙ্গলবার শিয়ালদহ স্টেশনে রাজীব বসুর তোলা ছবি। |
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের জেরে শিয়ালদহ-হাওড়ায় রেল-পরিষেবা থমকে যাওয়ায় নিত্যযাত্রীদের এ দিন এমনই দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। দেশের পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুতের গ্রিড বসে যাওয়ার পরেই পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব রেলের পুরো এলাকায় ওভারহেড তারে বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যায়। হাওড়া-শিয়ালদহ থেকে ট্রেন চলাচল থমকে যায়। দিল্লি-মুম্বই-চেন্নাইগামী ট্রেন রওনা দিতে পারেনি। বন্ধ হয়ে যায় উত্তরবঙ্গমুখী ট্রেনও। মাঝরাস্তায় আটকে যায় রাজধানী, দুরন্ত, জনশতাব্দীর মতো গুরুত্বপূর্ণ এক্সপ্রেস। লোকাল ট্রেন পরিষেবা বন্ধ থাকায় অফিস-ফেরত মানুষ, পড়ুয়াদের দুর্ভোগের চূড়ান্ত হয়। স্টেশন ছাড়িয়ে ভিড় নেমে আসে রাস্তায়। ধর্মতলা থেকে শুরু করে হাওড়ার কোনা
এক্সপ্রেসওয়ে সর্বত্র দেখা যায় বাস- গাড়ির অপেক্ষায় তিতিবিরক্ত মানুষের দীর্ঘ লাইন।
পরিবহণ দফতর জানাচ্ছে, ভিড় সামলাতে এ দিন বিকেল থেকে বেশি সংখ্যক সরকারি বাস রাস্তায় নামানো হয়েছিল। পরিবহণ সচিব বি পি গোপালিকা জানান, রানাঘাট, ক্যানিং, ডায়মন্ড হারবার রুটে বেশি বাস চালানো হয়েছে। |
হাওড়া থেকে উলুবেড়িয়া, চুঁচুড়ার বাসও বেশি ছেড়েছে। দিনভর কাজ করা পরিবহণকর্মীদের পরে ‘ইনসেনটিভ’ (উৎসাহভাতা) দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন সচিব।
রেল সূত্রের খবর: এ দিন বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ সিইএসসি রেলকে ১০ মেগাওয়াট ‘বিশেষ’ বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা করার পরে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। প্রথমে শিয়ালদহ মেন লাইনে। কিছুক্ষণ পরে পরে কল্যাণী স্পেশ্যাল ছাড়তে থাকে। তার পরে নৈহাটি। কিন্তু সন্ধে ইস্তক লালগোলার ট্রেন না-পেয়ে হা-পিত্যেশ অপেক্ষায় রইলেন কয়েকশো যাত্রী। রেল-সূত্রে জানানো হয়, বিপর্যয়ের জেরে এ দিন সব মিলিয়ে পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্ব রেলের মোট প্রায় দেড়শোরও বেশি মেল-এক্সপ্রেস বিভিন্ন স্টেশনে বা মাঝ রাস্তায় কয়েক ঘণ্টা করে আটকে ছিল। এমনকী, পূর্ব উপকূল (ভুবনেশ্বর) রেলেরও প্রায় ১৩টি মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে পড়ে। রেল সূত্রের খবর, ভিড় সামলাতে এ দিন শিয়ালদহ থেকে দূরপাল্লার কয়েকটি ট্রেন কিছু দূরত্ব পর্যন্ত লোকাল ট্রেনের মতো চালানো হয়। রাজধানী চালানো হয় ডিজেল ইঞ্জিন দিয়ে। কলকাতার মেট্রো অবশ্য শিবরাত্রির সলতের মতো সারা দিন পরিষেবা বজায় রেখেছে। |
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে |
• ট্রেন চালাতে ডিজেল ইঞ্জিন
• সিইএসসি’র বিদ্যুতে কল্যাণী শাখায় ট্রেন
• অতিরিক্ত সরকারি বাস
• হাসপাতালে জেনারেটর ভাড়া
• জরুরি ছাড়া সব অস্ত্রোপচার বাতিল
• সরকারি অফিসে তাড়াতাড়ি ছুটি |
|
বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের জেরে মঙ্গলবার দুপুর ১টা নাগাদ হাওড়া ও শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে যেমন আচমকা আঁধার নেমে এসেছিল, তেমন স্টেশনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও কাজ করেনি। ক্লোজড-সার্কিট ক্যামেরা, স্ক্যানার মেশিন বন্ধ হয়ে যায়। টিকিট কাউন্টারের যন্ত্রও বিকল হয়ে পড়ে। কর্মীরা মোমবাতি জ্বালিয়ে বসে ছিলেন। বিকেল পাঁচটার পর থেকে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে থাকে। |