অপ্রতিরোধ্য কোহলির ব্যাটে সিরিজ জয়
ক কথায় এই ম্যাচের নাম হতে পারে ‘গল্প হলেও সত্যি!’ এ হল ইচ্ছেপূরণের গল্প, অপেক্ষা আর ধৈর্যের জিতে যাওয়ার রূপকথা। ধারাবাহিকতার শেষ কথা হয়ে ওঠা অপ্রতিরোধ্য বিরাট কোহলি (১১৯ বলে ১২৮ নট আউট করে ম্যান অব দ্য ম্যাচ), ফিনিশারের ভূমিকায় নির্মম সুরেশ রায়না, এক ম্যাচ বাকি থাকতে সিরিজ জয়, সব কিছু ছাপিয়ে এই ম্যাচ আসলে তারুণ্যের স্পর্ধার হার না মানা জ্বলজ্বলে বহিঃপ্রকাশ। বিরাটের সঙ্গে থেকে ম্যাচ জিতিয়ে ফেরার সুযোগটা মনোজ মাঠে রেখে এলেন বটে, কিন্তু ৩৮ বলে ২১ রানের ইনিংসে প্রতিজ্ঞা ছিল। রোহিত শর্মা ফের ডুবিয়ে দিয়ে আসার পরে ‘হাল ছেড়ো না বন্ধু’ মনোভাব ছিল।
স্রেফ প্রতিভা যে কাউকে কোথাও পৌঁছে দেয় না, এই সিরিজে তার প্রমাণ রোহিত শর্মা। আর অনন্ত অপেক্ষা যে শেষমেষ ‘অবিচার’-এর কাহিনিতে চিরস্থায়ী আঁচড় কেটে দিতে পারে তার নমুনা বাংলার মনোজ তিওয়ারি।
আট মাস বাদে জাতীয় দলের হয়ে নেমে চার উইকেট এবং চাপের মুখে করা ২১ ছেড়ে দিয়ে ফিরে যাচ্ছি মঙ্গলবারের সকালে। সকাল সোয়া দশটায় টিম হোটেলের ব্রেকফাস্ট টেবিলে কনফ্লেক্সের বাটিতে চামচ ডুবিয়ে দিন্দা বলেছিলেন, “আজ খেলছিসই। মিলিয়ে নিবি!”
ঠিক উল্টো দিকে বসা যিনি, তিনি তখন গভীর মনোযোগ সহকারে পাকা পেঁপের টুকরো গলাধঃকরণ করতে করতে হেসেছিলেন, “কী রে দিন্দা, তুই কি জ্যোতিষী নাকি রে?”
ওটা রসিকতা। আজ সকাল সাড়ে ন’টা নাগাদ অধিনায়কের বার্তা পৌঁছে গিয়েছিল মনোজের কাছে। এ-ও জানতেন, বিতর্কিত রোহিত শর্মা নয়, তাঁকে খেলানো হচ্ছে লেগস্পিনার রাহুল শর্মার জায়গায়। টিম মিটিংয়ে পরিষ্কার ইঙ্গিত ছিল, চার জন বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে নামছে টিম, প্রয়োজনে তিন-চার ওভার বল করতে হতে পারে। প্রস্তুতি ছিল আগে থেকেই। বলছিলেন, “কে জানে, হয়তো বল করতে হতে পারে!”

সেঞ্চুরির পর। ছবি: রয়টার্স
শেষ দশ ইনিংসে কোহলি
• ১২৮ ন.আ., ৩৮, ১, ১০৬, ১৮৩, ৬৬, ১০৮, ১৩৩
• ন আ., ২১, ৬৬
• মোট
৮৫০
• গড়
১০৬.২৫
শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ গত ডিসেম্বরে, এর মধ্যে ১৪-টা ম্যাচ হয়ে গিয়েছে। আট মাস পরে প্রত্যাবর্তনের কাহিনি লিখতে হলে খুব অপরিণত লেখকও এমন চিত্রনাট্য লেখার আগে দু’বার ভাববে। মনোজ স্বয়ং কি ভেবেছিলেন? উইকেট স্লো, পঞ্চম বোলারের দশটা ওভার সহবাগ-রোহিত-মনোজের মধ্যে ভাগ করে দিতে চেয়েছিলেন ধোনি। আর সেখানে প্রথম ওভারেই কি না চন্ডীমলের উইকেট! মনোজের লেগস্পিন যে এভাবে সোনা ফলাতে পারে, কল্পনাতীত ছিল। জোরে বল করার চেষ্টা নেই, নিখুঁত লেংথে বল হাওয়ায় ভাসানো। ক্রিকেটের ভাষায় ফ্লাইট। ফিল্ড অনুযায়ী টানা বল করে যাওয়া। উইকেট আসতে লাগল একের পর এক। একটা দুটো নয়, চার-চারটে! আম্পায়ার বাদ না সাধলে একটা এলবিডব্লিউ নিশ্চিত পাওয়ার কথা ছিল। চার নম্বর উইকেটটা আসার পরে দু’দিকে ছড়িয়ে দিলেন হাত। ওই উত্তোলিত হাতে নিঃসন্দেহে উড়ল বাংলা ক্রিকেটের অদৃশ্য পতাকা।
টিমে জাহির, ইরফান, দিন্দারা থাকা সত্ত্বেও আট মাস বাদে টিমে ফেরা অনিয়মিত স্পিনার ৫০ নম্বর ওভার সহ টানা দশ ওভার বল করছে, এই দৃশ্য ভারতীয় ক্রিকেট ইদানিং দেখেনি। শেষ ওভারে ১৮ রান দিয়ে ফেলা নিয়ে তিনি যতটা দায়ী, তার চেয়ে বেশি অধিনায়ক ধোনি। সহজ বিকল্প ছিল জাহিরকে দেওয়া। ধোনি ঝুঁকিটা নিয়েছিলেন মনোজকে নিয়ে। কাজে আসেনি।
সে না আসুক, চার উইকেট তো টিমকে দিয়েছেন। অনিয়মিত স্পিনার হিসেবে চার উইকেট রোজ রোজ হবে না। কিন্তু মোদ্দা কথা হল, ২০১৫ বিশ্বকাপ যদি লক্ষ্য হয়, নতুন বিকল্প প্রেমদাসায় খুঁজে পেল ভারতীয় ক্রিকেট। মনোজ তিওয়ারির (১০-১-৬১-৪) লেগস্পিন। অনিয়মিত বোলার টিমে আরও গিজগিজ করছে, কিন্তু সবই ওই টেনে টেনে অফস্পিন। বৈচিত্র্য যে আনতে পারেন, প্রেমদাসায় ধোনি দেখলেন। দেখল ক্রিকেটবিশ্বও। তিন পেসার জাহির-ইরফান-দিন্দা মিলে করলেন মাত্র ১৮ ওভার। তাতেও একমাত্র সফল বাংলার দিন্দা। ১৮ ওভারে ৯১-০ থেকে দিলশানের উইকেট তুলে প্রথম ধাক্কাটা তো দিন্দাই দিয়েছিলেন। নিয়মিত ১৩৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় বল করছেন।
২৫১-এর পরে এই ব্যাটিং লাইন আপ নিয়ে ম্যাচ হারলে সেটা অঘটন হত। প্রথম ওভারে গম্ভীরকে বোল্ড করার পরে প্রেমদাসায় উল্লাসের ঝড় বইলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। সহবাগ ৩৪ করে ফিরলেও হয়নি। কারণ এই মুহূর্তে টিমের এক নম্বর ম্যাচ উইনার সহ অধিনায়ক বিরাট কোহলি। শেষ দশ ইনিংসে পাঁচটা সেঞ্চুরি, তিনটে হাফ সেঞ্চুরি। ওয়ান ডে-তে ১৩-টা সেঞ্চুরি হয়ে গেল। মাত্র ৮৬ ম্যাচে। ওয়ান ডে ইতিহাসে এই কৃতিত্ব কারও নেই। এই ধারাবাহিকতা গত এক দশকে ওয়ান ডে-তে কেউ দেখাননি। সঙ্গে ম্যাচ জেতানোর দোসর ছয় নম্বরে রায়না (৫১ বলে ৫৮ নট আউট)। একটা ক্যাচ পড়লেও ঠিক কাজের কাজটা করে দিয়ে গেলেন।
সব শেষে এই ম্যাচ আসলে তারুণ্যের জয়গাথা। দুপুরে মনোজ তিওয়ারির, রাতে বিরাট কোহলির। কোনও সন্দেহ নেই, সহ-অধিনায়কের মুকুটটা যোগ্য তরুণের হাতেই গিয়েছে।

কলম্বোর স্কোর

শ্রীলঙ্কা
থরঙ্গা স্টা. ধোনি বো অশ্বিন ৫১
দিলশান ক ধোনি বো দিন্দা ৪২
থিরিমান্নে বো অশ্বিন ৪৭
চণ্ডীমল ক ইরফান বো মনোজ ২৮
জয়বর্ধনে ক ধোনি বো সহবাগ ৩
ম্যাথেউজ ক কোহলি বো মনোজ ১৪
মেন্ডিস বো মনোজ ১৭
পেরেরা ক রায়না বো মনোজ ২
হেরাথ ন.আ. ১৭
মালিঙ্গা ন.আ. ১৫
অতিরিক্ত ১৫,
মোট ২৫১-৮।
পতন: ৯১, ১০২, ১৫২, ১৫৫, ১৯০, ২১৩, ২১৮, ২১৯।
বোলিং: জাহির ৬-০-৩৬-০, ইরফান ৬-০-২৭-০, দিন্দা ৬-০-২৮-১,
কোহলি ২-০-৭-০, সহবাগ ৮-১-৩৮-১, অশ্বিন ১০-১-৪৬-২,
মনোজ ১০-১-৬১-৪, রোহিত ২-০-৬-০।

ভারত
গম্ভীর বো মালিঙ্গা ০
সহবাগ ক পরিবর্ত বো ম্যাথেউজ ৩৪
কোহলি ন.আ. ১২৮
রোহিত এলবিডব্লিউ প্রদীপ ৪
মনোজ এলবিডব্লিউ মেন্ডিস ২১
রায়না ন.আ. ৫৮
অতিরিক্ত ১০
মোট ২৫৫-৪।
পতন:০, ৫২, ৬০, ১০৯।
বোলিং: মালিঙ্গা ৮-১-৪১-১, পেরেরা ৬-০-৫১-০, ম্যাথেউজ ৬-১-১৮-১,
প্রদীপ ৮-০-৫২-১, হেরাথ ৭-০-৪৪-০, মেন্ডিস ৬-০-৩৭-১, দিলশান ১.২-০-১০-০।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.