দুটো আলাদা রাজ্য। দুটো আলাদা ঘটনা। কিন্তু অদ্ভুত মিল সাহস আর অন্যকে বাঁচানোর অদম্য প্রয়াসে। অন্যকে বাঁচাতে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে জলে ঝাঁপ দিলেন দুই শিক্ষক।
মণিপুরে জলে ডুবে যেতে থাকা একটি গাড়ির দুই যাত্রীকে বাঁচিয়েছেন এক জীবন বিজ্ঞান গবেষক। অন্য দিকে, মিজোরামে সাঁতার না জেনেও পুকুরে ডুব দিয়ে দুই স্কুলছাত্রকে বাঁচিয়েছেন এক স্কুল শিক্ষক। এলাকাবাসীর কাছে বীরের মর্যাদা পাচ্ছেন প্রথম জন। রাজ্য সরকারের থেকে পুরস্কার পেতে চলেছেন দ্বিতীয় জন।
গত কাল, মণিপুরের নুপি কেইথালে, নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ২৫ ফুট গভীর নাগা নালায় পড়ে যায় একটি অল্টো গাড়ি। গাড়ি চালাচ্ছিলেন লেইতাংথেম মেমা নামে এক মহিলা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর বন্ধু আকাশিনী ওক্রাম। উল্টোদিক থেকে আসা একটি অটোকে পাশ কাটাতে গিয়েই ঘটে বিপদ। নাগা নালার অদূরেই পারিবারিক মুদির দোকানে বসেছিলেন মণিপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন বিজ্ঞান বিভাগের গবেষক ঘনশ্যাম। গাড়িটি নালায় পড়ে যেতে দেখেই দোকান ছেড়ে দৌড়ে আসেন তিনি। প্রাণভয় তুচ্ছ করে ঝাঁপিয়ে পড়েন জলে। জলের ভিতরেই গাড়ির দরজা খুলে মেমাকে টেনে বের করেন। আকাশিনীকেও তুলে আনেন। ততক্ষণে মেমা অনেকটা জল খেয়ে ফেলেছেন। জলেই মেমাকে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দেন ঘনশ্যাম। ততক্ষণে উপর থেকে কেউ মই নামিয়ে দিয়েছেন। তার সাহায্যেই দু’জনকে উপরে তুলে আনা হয়। ঘটনার পর থেকে এলাকা জুড়ে বীরের মর্যাদা পাওয়া বছর আঠাশের ঘনশ্যাম বলেন, “দেখলাম সবাই দাঁড়িয়ে রয়েছে। চোখের সামনে ডুবে যাচ্ছেন দু’জন। কিছু না ভেবেই ঝাঁপিয়ে পড়লাম। ওদের যে বাঁচাতে পেরেছি এটাই যথেষ্ট।”
দ্বিতীয় ঘটনাটি মিজোরামের লুংলে জেলার। ১৩ জুলাই বাড়ির পাশে গাড়ি সাফ করছিলেন রাংটে সরকারি স্কুলের বছর তিরিশের শিক্ষক জিরথানেংগা। তখনই তাঁর কানে আসে বাচ্চাদের চীৎকার। দৌড়ে গিয়ে দেখেন দুই কিশোর পুকুরে ডুবে যাচ্ছে। পাড়ে দাঁড়িয়ে ভয়ে চেঁচাচ্ছে কয়েকজন। জিরথানেংগা নিজে সাঁতার জানেন না। কিন্তু, আশপাশে বড় অন্য কেউ না থাকায় তিনি নিজেই জলে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রথমে কোনও মতে লালনুনমাওইয়া নামে এক কিশোরকে জল থেকে ওঠান। তাঁর কথায়, “এক জনকে তোলার পরেই আমার দম বেরিয়ে আসছিল। কিন্তু ভাবলাম আমি ফের চেষ্টা না করলে আরেকটা ছেলে মরে যাবে। তাই আবার ঝাঁপালাম।” কিন্তু, সাঁতার না জেনে জলের তলা থেকে কী ভাবে কিশোরকে উদ্ধার করলেন?
তিনি বলেন, “সাঁতার নয়। জলে নেমে পুকুরের একদম তলায় চলে গিয়েছিলাম। সেখানেই পাঁক ও উদ্ভিদ আঁকড়ে হামাগুড়ি দিয়ে রোলুজুয়ালা নামে অন্য কিশোরের পা দেখতে পাই। ততক্ষণে সে জ্ঞান হারিয়েছে। কী ভাবে যে ওকে টেনে তুলেছি নিজেই জানি না। জলের উপরে উঠে ছেলেটিকে দেখে ভাবলাম বুঝি মরেই গিয়েছে। পেটে চাপ দিয়ে দিয়ে জল বের করার পরে মুখে শ্বাস দিলাম। আর এতেই কাজ হল।” এই বীর শিক্ষকের নাম জেলাশাসকের কাছে পাঠিয়েছে ইয়ং মিজো অ্যাসোসিয়েশন। জেলাশাসক তাঁকে পুরস্কৃত করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। |