অর্ধেক দেশ যখন অন্ধকারে ডুবে, তখন বিদ্যুৎ মন্ত্রক ছাড়লেন সুশীলকুমার শিণ্ডে। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রদবদলে তাঁর ঠাঁই হল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে পালানিয়াপ্পন চিদম্বরম গেলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ছেড়ে যাওয়া অর্থ মন্ত্রকে। আর বিদ্যুৎ মন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পেলেন কোম্পানি বিষয়ক মন্ত্রী বীরাপ্পা মইলি।
প্রণববাবুর বিদায়ের পরে মন্ত্রিসভার রদবদল অনিবার্যই ছিল। আগামী সপ্তাহে সংসদের বাদল অধিবেশন শুরুর আগে সেটা সেরে ফেললেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তবে কংগ্রেস সূত্রের মতে, আরও এক দফা রদবদল হবে সংসদের অধিবেশন শেষ হওয়ার পরে। প্রণববাবুর জায়গায় লোকসভার নতুন নেতার নামও ঘোষণা করতে হবে। সেই দায়িত্ব সম্ভবত পেতে চলেছেন শিণ্ডে। শীঘ্রই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সংসদ বিষয়ক কমিটির বৈঠক ডেকে
এই ঘোষণা করা হবে বলে কংগ্রেস ও সরকারি সূত্রের খবর।
প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার পরে প্রাথমিক ভাবে অর্থ মন্ত্রক নিজের কাছেই রেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি যে সেই দায়িত্ব চিদম্বরমকে দেবেন, তার ইঙ্গিত কিছু দিন ধরেই পাওয়া যাচ্ছিল। |
|
|
পি চিদম্বরম |
সুশীলকুমার শিণ্ডে |
|
কংগ্রেস শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, আর্থিক মন্দার বাতাবরণে এক জন পূর্ণ সময়ের অর্থমন্ত্রী প্রয়োজন। কারণ, সংস্কার কর্মসূচিকে ত্বরান্বিত করে বাজারকে দ্রুত বার্তা দেওয়া এখন সব থেকে জরুরি কাজ। অর্থ মন্ত্রকের আমলাদের সঙ্গে বৈঠক করে সেই কাজের সুর প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে বেঁধে দিয়েছেন ঠিকই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে নিয়মিত ভাবে অর্থ মন্ত্রকের কাজ পর্যালোচনা করা সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে বাজারকে চাঙ্গা করার জন্য এক জন কার্যকরী মন্ত্রী প্রয়োজন।
তবে প্রশ্ন হল, কেন বেছে বেছে চিদম্বরমকেই সেই দায়িত্ব দেওয়া হল? সরকারের এক শীর্ষ মন্ত্রীর কথায়, তাঁর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সি রঙ্গরাজন বা যোজনা কমিশনের উপাধ্যক্ষ মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়ার মতো কাউকে অর্থমন্ত্রী করতে পারলে হয়তো মনমোহন আরও খুশি হতেন। কিন্তু কংগ্রেসের মধ্যে দাবি ছিল এক জন রাজনীতিককেই অর্থমন্ত্রী করতে হবে। সেই বিচারে চিদম্বরমই মনমোহনের প্রথম পছন্দ। কারণ প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক দর্শনের সঙ্গে চিদম্বরমের দৃষ্টিভঙ্গির বিশেষ ফারাক নেই। তিনিও ঘোরতর সংস্কারপন্থী।
বস্তুত, তাঁকে যে অর্থমন্ত্রী করা হবে, সেই ইঙ্গিত চিদম্বরমকে আগেই দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সূত্রের খবর, সেই ইঙ্গিত পেয়ে চিদম্বরমও সক্রিয় হয়ে উঠেছিলেন। এবং তাঁর ইচ্ছাতেই অর্থ বিষয়ক সচিব পদে নিয়োগ করা হয়েছে অরবিন্দ মায়ারামকে। ইউপিএ-র প্রথম জমানায় চিদম্বরম যখন অর্থমন্ত্রী ছিলেন, তখন মায়ারাম ছিলেন অর্থ মন্ত্রকের যুগ্ম সচিব।
অর্থমন্ত্রী বাছার কাজটা সনিয়া গাঁধী-মনমোহন সিংহ যতটা সহজে করতে পেরেছেন, বিকল্প স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বাছার কাজটা তত সহজে হয়নি। শিণ্ডেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করার কারণ ব্যাখ্যা করে কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, শিণ্ডেকে লোকসভার নেতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কংগ্রেস হাইকম্যান্ড। কোনও সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা না থাকলেও সাধারণ ভাবে অর্থ, প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র বা বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীকেই লোকসভার নেতা করা হয় (অবশ্যই যদি প্রধানমন্ত্রী লোকসভার সদস্য না
হন)। সেই পরম্পরা মানতেই শিণ্ডেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা হল। শিণ্ডে দু’বার মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। অন্ধ্রপ্রদেশের রাজ্যপালও ছিলেন। সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি সংসদ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাজ সামলাতে পারবেন বলেই আশা করছে
কংগ্রেস হাইকম্যান্ড।
তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শিণ্ডে কতটা সফল হবেন, তা নিয়ে কংগ্রেসের একাংশের মধ্যেই সংশয় রয়েছে। তাঁদের মতে, তুলনায় অনেক বেশি কার্যকরী হতে পারতেন গুলাম নবি আজাদ। কিন্তু তিনি নিজেই মনে করেন, কাশ্মীর সমস্যা না মেটা পর্যন্ত কোনও কাশ্মীরিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী করা ঠিক হবে না। তবে মাওবাদী সমস্যা নিয়ে চিদম্বরমের আগ্রাসী মনোভাবে কংগ্রেসের যে অংশ ক্ষুব্ধ, তাঁরা মন্ত্রী বদলে খানিকটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন। তাঁদের আশা, শিণ্ডে হয়তো সে রকম আগ্রাসী হবেন না। |