‘দুর্নীতি’তে অভিযুক্ত বিমান মন্ত্রকের এক পদস্থ অফিসার বেকসুর খালাস পেয়ে গেলেন সেন্ট্রাল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুন্যাল (ক্যাট)-এ। কোনও প্রমাণ্য নথি বা চার্জশিট ছাড়াই ওই অফিসারকে যে ভাবে অভিযুক্ত করা হয়েছিল, তা দেখে ট্রাইব্যুনালও বিস্ময় প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী। অভিযোগ নাকচ করে তাঁকে অবিলম্বে কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
কলকাতায় বিমান মন্ত্রকের অধীনস্থ ব্যুরো অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন সিকিউরিটি (বিসিএএস)-র অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার সুব্রত লোধের বিরুদ্ধে ব্যুরো-কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ছিল, বিমানবন্দরে ঢোকার ছাড়পত্র দেওয়ায় তিনি ‘অনিয়ম’ করেছেন। এ নিয়ে ক্যাটে মামলা করেছিলেন সুব্রতবাবু। তাঁর কৌঁসুলি কল্যাণ সরকার জানিয়েছেন, ব্যুরোর তরফে পেশ করা কাগজপত্র দেখে ট্রাইব্যুনালের দুই বিচারক চম্পক চট্টোপাধ্যায় ও নবনীতকুমার রীতিমতো অবাক হয়ে গিয়েছেন। কারণ, সুব্রতবাবুর বিরুদ্ধে চার্জশিট বা অভিযোগের কোনও প্রামাণ্য নথি নেই। রয়েছে শুধু হাতে লেখা কয়েকটা কাগজ!
ফলে অভিযোগ ধোপে টেকেনি। কিন্তু সুব্রতবাবুর বিরুদ্ধে কেন অভিযোগ এনেছিলেন বিসিএএস-কর্তৃপক্ষ? এ প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে ফোন রেখে দিয়েছেন বিসিএএসের ডিজি জি এস মালহি। ব্যুরোর আইনজীবীরাও প্রশ্নটি এড়িয়ে গিয়েছেন। অন্য দিকে কল্যাণবাবুর দাবি, “বিমানবন্দরে ঢোকার ছাড়পত্র মঞ্জুরের বিনিময়ে কিছু অফিসার বিভিন্ন ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকেন, যা বন্ধ করতে চেয়েছিলেন সুব্রতবাবু।” উল্লেখ্য, ইদানীং একাধিক ভারতীয় বিমানসংস্থা যখন ঘোরতর আর্থিক সঙ্কটের মুখে, তখনই বিমান পরিবহণক্ষেত্রের বিভিন্ন কর্তাব্যক্তির বিরুদ্ধে উঠে আসছে পরের পর দুর্নীতির অভিযোগ। এমনকী, দেশে বিমান পরিবহণের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিজিসিএ-র ৮ কর্তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি স্বজনপোষণের অভিযোগ এনেছে কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স বিভাগ। এরই মধ্যে সরে যেতে হয়েছে ডিজিসিএ-র সর্বময় কর্তা ভরত ভূষণকে। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে।
সুব্রতবাবু ২০০৭-এ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর থেকে বিসিএএসে ডেপুটেশনে এসেছিলেন। বিসিএএসে স্থায়ী নিয়োগের জন্য তাঁর আবেদন মঞ্জুর হয় ২০১০-এর সেপ্টেম্বরে। কিন্তু ২০১১-র এপ্রিলে ব্যুরো সুব্রতবাবুকে আচমকা চিঠি দিয়ে জানায়, তাঁকে পুরনো সংস্থায় ফিরে যেতে হবে। ‘কারণ’ হিসেবে তাঁর বিরুদ্ধে ওই অনিয়মের অভিযোগের কথা বলা হয়েছিল। চিঠি পেয়ে ক্যাটে যান সুব্রতবাবু। কল্যাণবাবুর কথায়, “ডেপুটেশন শেষ হওয়ার আগে ওঁকে স্থায়ী ভাবে বিমান মন্ত্রকে নিয়েও নেওয়া হয়েছে। এখন উনি ফেরত যাবেন কী করে, সেটাও আমাদের বোধগম্য হয়নি।”
সুব্রত লোধ মামলায় ক্যাটের এ হেন রায়ের পরে বিসিএএস কী করবে? ব্যুরোর আইনজীবী লক্ষ্মীকান্ত চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মামলাটি তাঁরা উচ্চতর আদালতে নিয়ে যাবেন কি না, কর্তৃপক্ষ তা এখনও ঠিক করেননি। |