গোষ্ঠী সংঘর্ষ শুরু হওয়ার সময়ে যথেষ্ট নিরাপত্তা রক্ষী ছিল না বলেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দেরি হয়ে যায়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম সোমবার সংঘর্ষ কবলিত কোকরাঝাড় ও চিরাং জেলার দু’টি গ্রাম ও দু’টি ত্রাণ শিবির সফর করে এ কথা বলেন। রাতে রাজভবনে তিনি অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারপরে তিনি বলেন, “এই তিক্ততা এক বড় ধরনের শিক্ষা দিল। শাসন করার জন্য অসম দেশের সবচেয়ে জটিল রাজ্য। এখানে একদিকে বহু ভাষা গোষ্ঠী, উপজাতির বাস। সেই সঙ্গে রয়েছে শরণার্থী ও অনুপ্রবেশের মতো বিষয়। রয়েছে সন্ত্রাস। সকলকে নিয়ে সম্প্রীতি বজায় রাখার সংস্কৃতি আমাদের রপ্ত করতেই হবে।”
এ দিন, গগৈ গিয়েছিলেন ধুবুড়ির শরণার্থী শিবিরগুলিতে। সেখানে বোড়োল্যান্ড স্বায়ত্তশাসিত পরিষদ এলাকা থেকে তাঁদের গ্রামগুলি বার করে আনার দাবি জানালেন গোষ্ঠী সংঘর্ষে ক্ষতিগ্রস্ত অ-বোড়োরা। তাঁদের অভিযোগ, পরিষদের আওতাভুক্ত হওয়ার পর থেকেই কোকরাঝাড়ে তাঁরা আর সুরক্ষিত নন। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য পনেরো দিনের মধ্যে তাঁদের গ্রামের ফেরানোর আশ্বাস দিয়েছেন। সংঘর্ষে মৃতদের পরিবার পিছু ৮ লক্ষ টাকা করে এবং আহতদের ১ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা হবে। যাঁদের বাড়িঘর পুড়েছে, তাঁরাও ক্ষতিপূরণ পাবেন। বিভিন্ন গ্রামে পুলিশ ক্যাম্প বসানোর আশ্বাসও দিয়েছে অসম সরকার। এ দিন কোকরাঝাড়ে দু’টি শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করেন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণীও। আজ, মঙ্গলবার ধুবুরি যাচ্ছেন চিদম্বরম।
কোকরাঝাড়ে হেলিকপ্টার থেকে নেমে তাঁর ও উত্তরপূর্ব বিকাশ মন্ত্রী পবন সিংহ ঘাটোয়ার জন্য ৩৮টি গাড়ির কনভয় দেখে চিদম্বরম থমকে যান। বিরক্ত চিদম্বরম অবিলম্বে গাড়ির সংখ্যা কমাতে বলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমে তিতাগুড়ি ত্রাণ শিবিরে আসেন। সেখানে বড়ো ও রাজবংশী সম্প্রদায়ের সঙ্গে কথা বলেন। এর পর তাঁরা ভোটগাঁও শিবিরে শরণার্থীদের অবস্থা দেখে আসেন। সংঘর্ষ কবলিত বামুনগাঁও ও জিয়াগুড়ি গ্রাম ঘোরার পরে, কোকরাঝাড় সার্কিট হাউসে যান তিনি। তারপরে তিনি বলেন, “ত্রাণ শিবিরে থাকা মানুষজন নিজেদের ঘরে ফিরতে চান। কিন্তু, ফিরে গিয়ে তাঁরা নিরাপদ থাকবেন কি না, নিশ্চিত নন। তাঁদের বাড়িও ভেঙে গিয়েছে। আমি, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তরফে, তাঁদের নিরাপত্তা ও বাড়ি বানিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছি।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেনে নেন যে সেনাবাহিনী আসতে দেরি হয়েছে। তিনি বলেন, “১৯ জুলাই যখন সংঘর্ষ শুরু হয়, তখন তা নিয়ন্ত্রণ করার মতো যথেষ্ট পুলিশ সেখানে ছিল না। পরে ধাপে ধাপে নিরাপত্তা রক্ষী গিয়েছে এবং পরিস্থিতিও নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছে।” সেনা নামাতে দেরি হওয়া নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য চাপানউতোর নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক সূত্রে এ দিন বলা হয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নিয়মানুযায়ী সেনা তলব করতে হলে রাজ্যকে প্রথমে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে চিঠি পাঠাতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, প্রতিরক্ষা মন্ত্রককে জানাবার পরে, সেনাবাহিনীকে প্রয়োজনমতো নির্দেশ দেওয়া হয়। অসমের ক্ষেত্রে, স্থানীয় সেনাকর্তারা সেই নিয়মই অনুসরণ করেছেন। রাজ্য সরকারের চাহিদামতো, সংঘর্ষ থামাবার জন্য
অবিলম্বে, নিজে থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে, অসমের সেনাকর্তারা
জওয়ানদের কোকরাঝাড় পাঠাতে পারতেন না। রাতে গুয়াহাটিতে সংঘর্ষে জঙ্গি যোগাযোগ নিয়ে তিনি বলেন, “পৃথক বড়োল্যান্ডের জন্য আন্দোলন করা সংগ্রামপন্থীদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে সেটা জানা কথা। এলাকার কোথায় কী ভাবে নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে আনতে হবে, রাজ্য সরকার তার খসড়া বানিয়েছে।” |