আগে নিজেই ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন। এ বার সরকারি নির্দেশে ছাড়তে হচ্ছে। তবে তাঁর নিরাপত্তা কমানো নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁরই ‘পরামর্শে’ সিপিএমও এ নিয়ে সরকারি ভাবে প্রতিবাদের পথে যাচ্ছে না।
বাম মহলেরই একাংশের ব্যাখ্যা, রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনকে ঘিরে কংগ্রেসের সঙ্গে ‘দূরত্বে’র (পরমাণু চুক্তির প্রশ্নে সমর্থন প্রত্যাহার যার মূল কারণ) উপর যে ‘সাময়িক সেতু’ তৈরি হয়েছে, তাকে এই নিরাপত্তার প্রশ্নে নষ্ট হতে দিতে চাইছেন না সিপিএম নেতৃত্ব। বুদ্ধবাবুর নিরাপত্তা কমানো নিয়ে প্রতিবাদের দিকে না-যাওয়ার নেপথ্যে এই রাজনৈতিক সমীকরণ কাজ করে থাকতে পারে বলে ওই সূত্রের অভিমত। ঘটনাচক্রে, বুদ্ধবাবু নিজেই রাষ্ট্রপতি পদে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থনের সিদ্ধান্তের মূল প্রবক্তা।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা ‘জেড প্লাস’ থেকে ‘জেড’-এ নামিয়ে আনার সুপারিশ করেছে সংশ্লিষ্ট রিভিউ কমিটি। নেতা-মন্ত্রী-সাংসদ-সহ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের নিরাপত্তার বহর বিবেচনার জন্য ওই কমিটিতে কেন্দ্র ও রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর এবং দুই স্তরের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা থাকেন। সব পক্ষের মতামতের ভিত্তিতে কমিটি সুপারিশ চূড়ান্ত করে। সরকারি সূত্রের খবর, বুদ্ধবাবুর ক্ষেত্রে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরই নিরাপত্তা কমানোর পক্ষে মত দিয়েছিল। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা তাতে আপত্তি করেনি। সেই মর্মেই সুপারিশ করেছে কমিটি।
রাজ্য সরকার প্রধান বিরোধী দলের ‘আপত্তি’ গ্রাহ্য করবে না বলে ধরে নিলেও অন্তত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে দরবার করার সুযোগ এ ক্ষেত্রে সিপিএমের ছিল। যে হেতু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার এক্তিয়ার তাদেরই। কিন্তু খোদ বুদ্ধবাবু এ নিয়ে হইচইয়ের পক্ষপাতী নন। ‘বুদ্ধ-ঘনিষ্ঠ’, সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, “উনি নিজেই মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফার (গত বছর বিধানসভা ভোটে বামফ্রন্ট সরকার বিদায় নেওয়ায়) পর নিরাপত্তা বলয় নিতে চাননি। তাঁকে নিরাপত্তা নিতে বলা হয়েছিল। এখন আবার অন্য কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বুদ্ধবাবু নিজে কিছু বলতে যাননি। আমরাও কিছু বলছি না।” কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের বক্তব্য, “আমরা এ নিয়ে হইচই করতে যাচ্ছি না। যদি রাজনৈতিক কারণে এমন সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে, মানুষ বুঝতে পারবেন!”
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এখনও পর্যন্ত তাঁর জন্য আগেকার বরাদ্দ বুলেটপ্রুফ গাড়িতেই বাড়ি থেকে আলিমুদ্দিন যাতায়াত করছেন। নিরাপত্তা ‘জেড’ ক্যাটিগরিতে চলে আসার ফলে এখন থেকে তাঁর কনভয়ে আর জ্যামার এবং কম্যান্ডো থাকবে না। নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যাও আগের চেয়ে কমবে। ঠিক হয়েছে, নির্দিষ্ট সময় অন্তর কলকাতায় এক জন সিনিয়র আইপিএস অফিসার এবং জেলা-সফরে গেলে সংশ্লিষ্ট এসপি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার বহরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। প্রসঙ্গত, বুদ্ধবাবু তালিকার বাইরে যাওয়ার পর রাজ্যে একমাত্র মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই ‘জেড প্লাস’ ক্যাটিগরিতে থাকলেন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী হিসেবে প্রণব মুখোপাধ্যায়ও ‘জেড প্লাস’ পেতেন। তবে রাষ্ট্রপতি হয়ে যাওয়ার পরে তাঁর বিষয়টি পৃথক হয়ে যাবে।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের প্রশ্ন, “বুদ্ধবাবু যখন বুলেটপ্রুফ গাড়ি-সহ যাবতীয় নিরাপত্তা ফিরিয়ে দিয়েছিলেন, তখন যে সরকার ছিল, এখনও তারাই আছে। মুখ্যমন্ত্রী না-থাকায় ‘থ্রেট পারসেপশন’ যদি কমে আসে, তা হলে তখনও তা-ই ছিল। অথচ তখন নিরাপত্তা অপরিবর্তিত রাখতে বলে এখন আবার কমানোর সুপারিশ কেন, খুব একটা পরিষ্কার নয়।”
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতরের এক আধিকারিক অবশ্য বলছেন, “বুদ্ধবাবু এখন মূলত কলকাতার মধ্যেই যাতায়াত করেন। দূরে কোথাও যান না। যে সব জেলায় সাম্প্রতিক কালে গিয়েছেন, সেখানে তেমন বিপদের আশঙ্কা নেই বলে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর মনে করেছে। তা ছাড়া, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীও তাঁর নিরাপত্তার জন্য কোনও আবেদন করেননি।” |