যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েন বারাসতের তিলোত্তমা রায়। বাবা বাইরে থাকেন। ক্লাস শেষ করে বারাসত স্টেশনে এসে নামতেন রাত ৮টা-সাড়ে ৮টা নাগাদ। মা পল্লবী রায় মেয়ের জন্য অপেক্ষা করতেন স্টেশনে। প্রতি মুহূর্তে অস্বস্তি নিয়ে পেরিয়ে যেতেন পথটা। কিন্তু এ ভাবে কত দিন চলতে পারে? তিলোত্তমা এখন তাই হস্টেলে থাকেন। সপ্তাহান্তে বারাসতে ফেরেন, দিনের আলো থাকতে থাকতেই।
পল্লবীদেবীর কথায়, “প্রতিদিনই নিরাপত্তার অভাব বোধ করেছি। আর ঝুঁকি নিতে পারছিলাম না। কষ্ট হলেও তাই হস্টেলে রেখেছি মেয়েকে।”
নিউ ব্যারাকপুরের আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র কলেজের ছাত্রী অরিন্তিকা রায়চৌধুরী বলছেন, “স্টেশন থেকে নামার পরে আমার একার পক্ষে ওই পথে ফেরা সম্ভব হয় না। অপেক্ষা করে থাকি আরও কয়েক জন মহিলা ও পুরুষের জন্য। দল বেঁধে ফিরি।” |
বারাসত স্টেশন চত্বরের এখনকার পরিবেশের ছবিই ফুটে উঠেছে পল্লবীদেবী ও অরিন্তিকার বক্তব্যে। যে-এলাকা সম্পর্কে নিরাপত্তাহীনতার এই অভিযোগ, তার চৌহদ্দি মাত্র এক কিলোমিটার। অর্থাৎ এক কিলোমিটার ব্যাসের এলাকাই ত্রাস বারাসতের বাসিন্দা, বিশেষত মহিলাদের কাছে। অভিযোগ, সন্ধ্যা নামলেই এলাকায় দাপিয়ে বেড়ায় মদ্যপ যুবকের দল। গত দেড় বছরে রিঙ্কু দাস থেকে শুরু করে বহু তরুণীই ওই এলাকায় শ্লীলতাহানির শিকার হয়েছেন। দুষ্কৃতীদের হাত থেকে দিদি রিঙ্কুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রাজীব দাস। শুক্রবার রাতে এক কিশোরীর শ্লীলতাহানি ও প্রতিবাদ করায় তাঁর বাবাকে মারধর ওই এলাকার সাম্প্রতিকতম ঘটনা।
ওইটুকু এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়া যাচ্ছে না কেন? উত্তর ২৪ পরগনার এসপি চম্পক ভট্টাচার্যের কথায়, “যথেষ্ট নিরাপত্তা আছে।”
তা হলে এমন ঘটনা ঘটছে কেন? নিরাপত্তাই যদি থাকবে, কেন বারাসত ছেড়ে হস্টেলে থাকবেন তিলোত্তমা? অরিন্তিকা স্টেশন থেকে একা ওই পথে বাড়ি ফিরতে সাহস পান না কেন? সদুত্তর দিতে পারেননি চম্পকবাবু।
শুক্রবারের ঘটনায় সে-রাতেই দু’জন ধরা পড়েছিল। কিন্তু রবিবার রাত পর্যন্ত আর কাউকে ধরা যায়নি। ওই ঘটনার প্রতিবাদে নেমেছেন স্থানীয় বাসিন্দা এবং ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা-কর্মীরা। ছাত্রী-নিগ্রহের পরিপ্রেক্ষিতে শনিবার স্থানীয় বিধায়ক ও তৃণমূল নেতা চিরঞ্জিতের মন্তব্য নিয়েও প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। নিরাপত্তার দাবিতে রবিবার রাতে মোমবাতি নিয়ে মিছিল করেন স্থানীয় মানুষ। পরিস্থিতি বুঝে তৃণমূলও চিরঞ্জিতের ওই বক্তব্যের দায় নিতে চাইছে না। সেই কারণেই এ দিন দলের পক্ষ থেকে সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন জানান, ওই মত দলের নয়। চিরঞ্জিত এক জন প্রতিষ্ঠিত অভিনেতা। ওই মতামত তাঁর ব্যক্তিগত।
এ দিনই বেলা ১১টায় স্টেশনের পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীরা দেখেন, লাইন ধরে ন’পাড়ার দিক থেকে হনহনিয়ে হেঁটে আসছেন এক যুবক। ছুরি হাতে এক মহিলা তাঁকে ধাওয়া করছেন। প্ল্যাটফর্মের কাছে পৌঁছে যুবকের নাগাল পেয়ে মহিলা তাঁকে ছুরি দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। যাত্রীরা উদ্ধার করেন যুবককে। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। মনে করা হয়েছিল, শ্লীলতাহানির প্রতিবাদে নেমেছেন ওই মহিলা। গ্রেফতারের পরে রোকেয়া বিবি নামে ওই মহিলা অবশ্য জানান, আক্রান্ত হোসেন বারি তাঁর স্বামী। রোকেয়ার অভিযোগ, স্বামীর অবৈধ সম্পর্কের জন্যই হামলা চালিয়েছেন তিনি। |