|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা
|
পুর-উদ্যোগ |
অবশেষে আবাসন |
কৌশিক ঘোষ |
উত্তর কলকাতার বস্তির বাসিন্দাদের জন্য পুরসভার আবাসন নির্মাণের পরিকল্পনা অবশেষে বাস্তবায়িত হতে চলেছে। এত দিন জায়গার অভাবে উত্তর ও মধ্য কলকাতায় এ কাজ করা যায়নি। পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথমে মসজিদবাড়ি স্ট্রিটের কাটমারবাগান এলাকার বস্তিতে আবাসন তৈরি হবে। এ জন্য ওই বস্তির মানুষদের সাময়িক পুনর্বাসনে এগিয়ে এসেছেন এলাকার অন্য বাসিন্দারাই।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (বস্তি) অতীন ঘোষ বলেন, “জায়গার অভাবে এত দিন উত্তর এবং মধ্য কলকাতার বস্তিতে ওই আবাসন প্রকল্প গড়া যায়নি। এ বার প্রথমে উত্তর কলকাতার মসজিদবাড়ি স্ট্রিটে কাটমারবাগানে বস্তির মধ্যেই আবাসন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। টেন্ডার ডেকে দ্রুত কাজ শুরু হবে।”
পুরসভার বস্তি দফতর সূত্রে খবর, ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত এই বস্তিতে প্রায় ৬০ কাঠা জমির উপরে ৫০০টি ফ্ল্যাট তৈরি করার কথা। প্রশ্ন উঠেছিল, আবাসন নির্মাণের সময়ে বস্তির বাসিন্দাদের কোথায় পুনর্বাসন দেওয়া হবে? এর পরে বস্তির পাশেই স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর বাড়ির একাংশে বস্তির বাসিন্দাদের সাময়িক পুনর্বাসন দেওয়ার ব্যাপারে ওই ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলোচনা করেছে পুরসভা। পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রাথমিক ভাবে ওই ব্যবসায়ী রাজিও হয়েছেন। কেন্দ্রীয় সরকার অর্থ বরাদ্দ করলেই কাজ শুরু করা হবে বলে অতীনবাবু জানান। |
|
ওই ব্যবসায়ী, সন্দীপকুমার বাজোরিয়া বলেন, “মসজিদবাড়ি স্ট্রিটে কাটমারবাগান বস্তির পাশেই আমার বাড়ি রয়েছে। আবাসন গড়ার সময়ে ওই বাড়ির একাংশে বস্তির বাসিন্দাদের সাময়িক ভাবে রাখার ব্যাপারে পুর-আধিকারিক এবং কাউন্সিলরের সঙ্গে প্রাথমিক কথা হয়েছে। তবে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ব্যাপারে আমার কোনও আপত্তি নেই।”
স্থানীয় কাউন্সিলর তথা মেয়র পারিষদ (প্রিভেনশন অফ ফুড অ্যাডাল্টারেশন) পার্থপ্রতিম হাজারি বলেন, “যেখানে বস্তি রয়েছে, সেখানেই এই আবাসন নির্মাণ করা হবে। তাই বাসিন্দাদের সাময়িক পুনর্বাসন প্রয়োজন। এলাকার এক ব্যবসায়ী তাঁর বাড়িতে পুনর্বাসন দেওয়ার ব্যাপারে রাজি হয়েছেন। অতীনবাবুও জায়গাটি দেখে গিয়েছেন। খুব দ্রুত পুনর্বাসনের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।” স্থানীয় বাসিন্দা রাকেশ শর্মার কথায়: “এখানে আবাসন নির্মাণের জন্য অনেক দিন আগেই পুর-কর্তৃপক্ষকে বলেছিলাম। আবাসন তৈরি হলে এলাকার পরিবেশ আমূল বদলে যাবে।”
পার্থবাবু জানান, ২০১০-এ পুরসভায় তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাটমারবাগানে বস্তির বাসিন্দাদের জন্য বেসিক সার্ভিসেস ফর আর্বান পুওর (বিএসইউপি) প্রকল্পে আগেও আবাসন নির্মাণের পরিকল্পনা হয়েছিল। সেই আবাসনও বস্তিতেই তৈরি হওয়ার কথা ছিল। সাময়িক পুনর্বাসনের জন্য উত্তর কলকাতাতেই রেল এবং বন্দরের জমির কথা ভাবা হয়। কিন্তু রেল ও বন্দর কর্তৃপক্ষ রাজি না হওয়ায় প্রকল্প আটকে যায় বলে পার্থবাবুর দাবি। |
|
পুরসভা সূত্রে খবর, জওহরলাল নেহরু ন্যাশনাল আর্বান রিনিউয়াল মিশন-এর (জেএনএনইউআরএম) অন্তর্গত দারিদ্র দূরীকরণ প্রকল্পে গৃহনির্মাণের জন্য গত পুর-বোর্ডের আমলে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। এর মধ্যে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দক্ষিণ এবং পূর্ব কলকাতার গার্ডেনরিচ, রাজারঘাট এবং বেহালার ব্যানার্জিপাড়ায় গৃহনির্মাণ হয়। নতুন পুরবোর্ড এই বরাদ্দ থেকেই প্রায় ৬৮ কোটি টাকা নিয়ে পূর্ব কলকাতার ধারাপাড়া, মহেন্দ্র রায় লেন, পাগলাডাঙা এবং দক্ষিণ কলকাতার চেতলার সেনপল্লির বস্তিতে আবাসন প্রকল্প নির্মাণ করছে। পুরসভার বস্তি দফতরের এক আধিকারিক জানান, এই প্রকল্পের বাকি টাকা নতুন করে অর্থ বরাদ্দের সময়ে ‘অ্যাডজাস্ট’ করে নেওয়া হবে। সরকারি নিয়মানুযায়ী, এই প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার মোট খরচের ৫০ শতাংশ টাকা ধার্য করে। ২০ শতাংশ রাজ্য সরকার এবং বাকি টাকা কলকাতা পুরসভার দেওয়ার কথা।
অতীনবাবু বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার জেএনএনইউআরএম-এর অন্তর্গত রাজীব আবাসিক যোজনায় দরিদ্র মানুষের জন্য আবাসন গড়তে অর্থ বরাদ্দ করবে। তার আগে উত্তর এবং মধ্য কলকাতার বেশ কয়েকটি জায়গায় আবাসন নির্মাণ এবং পুনর্বাসনের জন্য জমি চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। পুরসভার সার্ভে দফতরকে এই কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
|
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
|
|
|
|
|