বদলে গেল কি বর্ষার ‘রুটিন’, প্রশ্ন সেটাই
র্ষা বললেই আম বাঙালির মনে আষাঢ়-শ্রাবণের অঝোর ধারা। কিন্তু গত কয়েক বছরের পর্যবেক্ষণ বলছে, আষাঢ় তো দূর অস্ৎ, শ্রাবণেও ভারী বর্ষার দেখা নেই।
খনার বচনে আছে, ‘আষাঢ়ের পঞ্চ দিনে, রোপণ করে ধানে।’ আষাঢ়ের গোড়াতেই ধান রোপণের সেই সময়সূচি মেনেই কৃষিজীবীরা এ যাবৎ চলে এসেছেন। কিন্তু এ বছর শ্রাবণেও আমনের বীজতলা তৈরি করতে পারেননি অনেকে।
শ্রাবণের মাঝামাঝি এসেও দক্ষিণবঙ্গ-সহ দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের কৃষকদের চিন্তায় ফেলেছে বৃষ্টির আকাল। বঙ্গোপসাগরেও নিম্নচাপের দেখা নেই। আলিপুর হাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, সাধারণ ভাবে জুলাই মাসে ৩-৪টি নিম্নচাপ পায় দক্ষিণবঙ্গ। কিন্তু এ বছর একটিও মেলেনি। মুখ ফিরিয়ে রয়েছে নিম্নচাপ অক্ষরেখাও।
তবে কি বর্ষা তার সাবেকি রুটিন পাল্টে পিছিয়ে যাচ্ছে?
আশঙ্কাটা উড়িয়ে দিচ্ছেন না আবহবিদদের একাংশ। তাঁরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে দেশের পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে বর্ষা শেষ হতে হতে অক্টোবর হয়ে যাচ্ছে। এক আবহবিজ্ঞানীর দাবি, “জুনের বৃষ্টির পরিমাণ আগের থেকে কমেছে। সর্বাধিক বৃষ্টি হচ্ছে অগস্ট-সেপ্টেম্বরে।” ওই বিজ্ঞানীদের মতে, আগে বর্ষা থাকত প্রায় সাড়ে তিন মাস। এখন থাকছে তিন মাসেরও কম। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক এবং বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির ব্যবস্থাপক জয়শ্রী রায়ের কথায়, “এটা আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা। জলবায়ু পরিবর্তনের ইঙ্গিতও মিলছে।”
আশঙ্কায় কৃষিবিজ্ঞানীদের একাংশও। তাঁরা বলছেন, দেশের ৬০ শতাংশ কৃষিজমিতে বর্ষার জলে সেচের কাজ চলে। তাই বৃষ্টির পরিমাণের দিকে তাকিয়েই কৃষি-নির্ঘণ্ট তৈরি হয়। কিন্তু বর্ষার এই ‘বদলের’ জেরে কৃষিকাজের বরাবরের নির্ঘণ্টও ভেস্তে যেতে বসেছে।
আদি বর্ষা মঙ্গল
আষাঢ়ের পঞ্চ দিনে
রোপণ করে ধানে
বাড়ে তার কৃষিবল
কৃষিকার্য তার সফল
শ্রাবণে বয় পুবে বায়
হাল ছেড়ে চাষা বাণিজ্যে যায়
ভাদ্র আশ্বিনে বহে ঈশান
কাঁধে কোদাল নাচে কৃষাণ।
- খনার বচন
আষাঢ়ে পূরিল মহী নবমেঘজল
বড় বড় গৃহস্থের টুটিল সম্বল
শ্রাবণে বরিষে ঘন দিবস রজনী
সিতাসিত দুই পক্ষ একুই না জানি।
- চণ্ডীমঙ্গল
আষাঢ়ে বাদল নামে, নদী ভর-ভর
মাতিয়া ছুটিয়া চলে ধারা খরতর
দুই কূলে বনে বনে প’ড়ে যায় সাড়া,
বরষার উৎসবে জেগে ওঠে পাড়া।
- সহজ পাঠ
অবশ্য বর্ষার রুটিন তথা নির্ঘণ্ট বদলেছে এমন কথা এখনই ঘোষণা করতে চাইছেন না আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীরা। তাঁরা বলছেন, প্রতি বছরই বর্ষার চরিত্রে বদল দেখা যায়। কিন্তু নির্ঘণ্ট বদলে গিয়েছে কি না, তা বলার সময় আসেনি। পুণের আবহাওয়া পূর্বাভাস দফতরের অবসরপ্রাপ্ত ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল অর্ধেন্দুভূষণ মজুমদার জানান, ১০০ বছরের গড় বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা ইত্যাদি দেখে বর্ষার নির্ঘণ্ট তৈরি হয়। তিনি বলেন, “গত ক’বছরের পরিসংখ্যান দেখেই বর্ষার নির্ঘণ্টে স্থায়ী বদল হয়েছে, এমন বলা উচিত নয়। আরও কয়েক বছর বর্ষার গতিপ্রকৃতি দেখা দরকার।”
এই খামখেয়ালিপনায় ‘এল নিনো’র প্রভাব রয়েছে কি?
প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের আবহাওয়ার বিশেষ অবস্থা ‘এল নিনো’। উত্তপ্ত সমুদ্রপৃষ্ঠের সংস্পর্শে গরম হয়ে উপরে উঠে যাওয়া হাওয়ার স্রোত এলোমেলো করে দেয় মৌসুমি বায়ু-সহ ওই এলাকার বিভিন্ন নিয়মিত বায়ুপ্রবাহকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এ দেশে বর্ষা আসার পথে ‘এল নিনো’ প্রভাব ফেললেও বর্ষা এসে যাওয়ার পরেও সামগ্রিক ভাবে তার প্রভাব থাকে কি না, সেটা জানা যায়নি। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলছেন, “এর আগে ‘এল নিনো’র বছরগুলিতে বৃষ্টি কম হয়েছে। কিন্তু বর্ষার সঙ্গে তার সরাসরি সম্পর্ক এখনও নিশ্চিত নয়।”
তা হলে এ বছর বর্ষার ভবিতব্য কী?
মৌসম ভবন জানিয়েছিল, গোটা দেশে স্বাভাবিকের ৯৬% থেকে ১০৪% বৃষ্টিপাত হবে। কিন্তু জুলাইয়ের ২৭ তারিখ পর্যন্ত গোটা দেশে বৃষ্টি হয়েছে ৩০৯.৯ মিলিমিটার, স্বাভাবিকের তুলনায় ২২% কম। আবহবিজ্ঞান দফতরের ডিরেক্টর জেনারেল এল এস রাঠৌর অবশ্য আশ্বাস দিচ্ছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই পূর্ব, মধ্য ভারত এবং গাঙ্গেয় সমভূমিতে বর্ষা সক্রিয় হবে। ফলে বর্ষা জোরালো হতে সেই অগস্ট।
অর্থাৎ,পরিবর্তনের ইঙ্গিত। কিন্তু তা শেষ পর্যন্ত ‘বরাবরের রুটিন’ হয় কি না, সেটাই দেখার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.