লন্ডন অলিম্পিকে কী হবে, সেটা ভবিষ্যৎই বলবে। কিন্তু ‘আন্তর্জাতিক অঙ্ক অলিম্পিয়াড’-এ বাঙালির মেধার দাপট এ বারেও বজায় রইল।
গত বছর নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক অঙ্ক অলিম্পিয়াড’ থেকে সোনা এনেছিলেন ব্যারাকপুরের আকাশনীল দত্ত। রুপো জিতেছিলেন কৃষ্ণনগরের আকাশদীপ দে। ব্রোঞ্জ জিতেছিলেন শেওড়াফুলির দেবদ্যুতি বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার আর্জেন্তিনার মার্ডলপ্লাটা শহরে আয়োজিত একই প্রতিযোগিতা থেকে দেবদ্যুতি নিয়ে এলেন সোনা। আকাশদীপ ফের জিতলেন রৌপ্য-পদক।
চলতি মাসের ৯ এবং ১০ জুলাই মার্ডলপ্লাটায় বসেছিল অঙ্ক অলিম্পিয়াডের আসর। ১০৭টি দেশের ৫৪৮ জন প্রতিনিধি যোগ দেন। ভারতের ৬ প্রতিযোগীর মধ্যে এ রাজ্যের ছিলেন তিন জন। মোট ৪২ নম্বরের পরীক্ষার অঙ্ক অলিম্পিয়াডে ৩টি অঙ্ক দেওয়া হয়েছিল। সাড়ে চার ঘণ্টা করে দু’দিনে ৯ ঘণ্টার পরীক্ষা। চেনা পথের বাইরে মৌলিক পদ্ধতিতে অঙ্ক করাই পরীক্ষার মূল বৈশিষ্ট্য বলে জানিয়েছেন দেবদ্যুতিরা। |
শেওড়াফুলির বৌবাজারের বাসিন্দা দেবদ্যুতি। শ্রীরামপুরের চাতরা নন্দলাল ইনস্টিটিউটের এই ছাত্র এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে ৯০ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন। চেন্নাইয়ের ‘ম্যাথামেটিক্যাল ইনস্টিটিউট’-এ তিনি পড়াশোনা করবেন, যেখানে শুধু অঙ্ক নিয়েই গবেষণা হয়। দেবদ্যুতির বাবা বরুণকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মা চন্দনাদেবী দু’জনেই শিক্ষকতা করেন। দু’জনেরই বিষয় অঙ্ক। ছোট থেকেই বাড়িতে অঙ্কের পরিমণ্ডল পেয়ে যান দেবদ্যুতি। বরুণবাবু বলেন, “অনেক সময় দেখেছি, অঙ্ক করতে বসে তা না মিললে পরের দিন ভোরেও ছেলে সেই অঙ্ক নিয়ে বসে আছে।” আন্তর্জাতিক স্তরের সাফল্যেও বিচলিত না হয়ে দেবদ্যুতি বলেন, “অঙ্ক নিয়েই গবেষণা করতে চাই।”
ছাত্রের এই সাফল্যে শুক্রবার শ্রীরামপুরের চাতরা নন্দলাল ইনস্টিটিউট থেকে তাঁকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে দেবদ্যুতি সংবর্ধনা পান তাঁর ছেলেবেলার স্কুল ‘বাঞ্চ অব ফ্লাওয়ার্স’ থেকেও।
দেবদ্যুতির মতো অঙ্ক ধ্যানজ্ঞান আকাশদীপেরও। তিনিও অঙ্ক নিয়ে গবেষণা করতে চান। ইতিমধ্যেই ভর্তি হয়েছেন চেন্নাইয়ের ‘ম্যাথামেটিক্যাল ইন্সটিটিউট’-এ। এ বার সোনা জিততে না পারার দুঃখ যেমন রয়েছে, তেমনই আর্জেন্তিনায় গিয়ে মেসির সঙ্গে দেখার করার সুযোগ না হওয়ার দুঃখও কম নয় আকাশদীপের। কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুলের এই ছাত্র এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে রাজ্যে সপ্তম হয়েছেন। জেলায় প্রথম। আকাশদীপের কথায়, “ক্লাস নাইনে পড়তে পড়তেই আমি রিজিওনাল ম্যাথামেটিক্যাল অলিম্পিয়াডে সুযোগ পাই। অঙ্কই আমার সবচেয়ে পছন্দের বিষয়। ওই প্রতিযোগিতায় সফল হওয়ায় আমার কাছে আন্তর্জাতিক অঙ্ক প্রতিযোগিতায় যাওয়ার দরজা খুলে যায়।” এ বার প্রতিযোগিতায় নামার আগে মুম্বইয়ে ‘হোমি ভাবা সেন্টারে’ গিয়ে তিন সপ্তাহ অঙ্কের প্রশিক্ষণও নিয়েছেন আকাশদীপ। আকাশদীপের বাবা কৃষ্ণেন্দু দে রেলকর্মী। ছেলের সাফল্যে খুশি পিতার উচ্ছ্বাস, “ও তো মাধ্যমিকেও অঙ্কে ১০০-য় ১০০ পেয়েছিল!”
|