আর্সেনিকে উজাড় গ্রাম, মিলছে না পরিস্রুত জল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • পূর্বস্থলী |
আর্সেনিকোসিস রোগে মৃত ও আক্রান্তদের তালিকা তুলে দিয়ে মহকুমাশাসকের কাছে পরিস্রুত পানীয় জল ও এলাকায় উন্নত চিকিৎসা পরিকাঠামোর দাবি জানালেন পূ্র্বস্থলী ব্লকের কল্যাণপুর গ্রামের বাসিন্দারা। কালনার মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি বলেন, “বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”
স্থানীয় সূত্রে খবর, মাজিদা পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এই গ্রামটিতে প্রায় বারো’শ মানুষ বাস করেন। অধিকাংশেরই জীবিকা চাষ-আবাদ বা খেতমজুরি। গরীব এই গ্রামটিতে বহু বছর ধরেই আর্সেনিকোসিস রোগের প্রকোপ। বুধবার গ্রামবাসীদের একাংশ মহকুমাশাসককে লিখিত ভাবে জানান, গ্রামের নলকূপের বিষাক্ত জল পান করে ২০০৪ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ৩৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত দু’মাসে মৃত্যু হয়েছে ৭ জনের। শরীরে ঘা নিয়ে বর্তমানে গ্রামের ১৭ জন শয্যাশায়ী। তাঁদের দাবি, আক্রান্তদের অনেকেই মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। গ্রামবাসীদের ক্ষোভ, গ্রামে বহু বছর ধরে আর্সেনিকের প্রকোপ থাকলেও এলাকার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা হাসপাতালে কোন ও চিকিৎসা হয় না রোগের। ঘটি-বাটি বিক্রি করে কলকাতায় যেতে হয় চিকিৎসা করাতে। অর্থাভাবে বহু মানুষই ব্যর্থ হয় চিকিৎসা বন্ধ রাখতে। বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করাই একমাত্র ভবিতব্য হয়ে দাঁড়ায়।
কল্যাণপুর গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ শেখ জানান, কাছাকাছি কোমলনগর গ্রামে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর একটি জলপ্রকল্প তৈরি করেছে। সেখান থেকে ভাগীরথীর জল শোধন করে ব্লকের বেশির ভাগ মৌজাতেই বিলি করা হয়। অথচ আর্সেনিকোসিসের প্রকোপ থাকা সত্ত্বেও ওই সুবিধা থেকে এই গ্রাম বঞ্চিত। তাঁর কথায়, “পরিস্রুত পানীয় জের জন্য গ্রামবাসীরা রাস্তা অবরোধ-সহ নানা প্রতিবাদের রাস্তায় নেমেছেন। তাতে আশ্বাস মিললেও কোনও কাজ হয়নি।” অপর এক গ্রামবাসী আবদুল রহিম মণ্ডলের বক্তব্য,“বহু বছর ধরে আর্সনিকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হচ্ছে এই গ্রামে। ফলে বহিরাগতদের কাছেও গ্রাম সম্পর্কে বাইরের মানুষের ধারণা খারাপ হয়ে গিয়েছে। গ্রামে ছেলে-মেয়ের বিয়ে দিতে গেলেও তারা দশবার ভাবে।”
গ্রামবাসীরা জানান, কাছাকাছি সিংহারি গ্রামে জনস্বাস্থ্য কারিগরির একটি জল প্রকল্প রয়েছে। সেখান থেকে আর্সেনিক মুক্ত জল সরবাহ করার জন্য পাইপলাইনও বসে গ্রামে। কিন্তু তাতে মুসলিমপাড়ায় জল পৌঁছয় না। বাধ্য হয়ে গ্রামের মেয়ে বউদের বেশ খানিকটা দূরে রেলের টিউবওয়েল থেকে জল আনতে যেতে হয়। কিন্তু বিকেল হতেই লম্বা লাইন পড়ে যাওয়ায় অনেকেই দূরে না যেতে পেরে গ্রামের দূষিত জলই পান করতে বাধ্য হন। অপরিস্রুত সেই জল থেকে সংক্রমণ হয় আর্সেনিকের। ফলে বেড়েই চলে আর্সেনিকোসিস আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গ্রামবাসীরা জানান, সহিদুল শেখ নামে এক কিশোরের কথাও। আর্সেনিকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তার বাবা-মা সহ গোটা পরিবারেরই। মহকুমাশাসকের সঙ্গে আলোচনা চলাকালীন গ্রামবাসীরা ওই কিশোরটির কথা জানান সুমিতাদেবীকেও। প্রশাসন যাতে ওই কিশোরের দায়িত্ব নেয়, সেই আবেদনও করেন তাঁরা। মহকুমাশাসক জানান, সহিদুলকে সরকারি হোমে রাখার ব্যাপারে গ্রামবাসীদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। |