মাত্র ঘন্টা দুয়েকের বৃষ্টিতে হাঁটুজলে ডুবে যাচ্ছে কালনা মহকুমা হাসপাতাল। ফলে সমস্যায় পড়ছেন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়-স্বজনেরা। জল ডিঙিয়ে যেমন কাজে যোগ দিতে হচ্ছে চিকিৎসক, নার্স-সহ হাসপাতালের কর্মীদের, তেমনই বাড়ছে জীবানুবাহিত রোগের আশঙ্কা। সম্প্রতি হাসপাতালের ভিতর রোগী কল্যাণসমিতির বৈঠকেও জল জমার সমস্যা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা করা হয়। সমস্যার কথা স্বীকার করে হাসপাতাল সুপার অভিরূপ মণ্ডল বলেন, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সমস্যার কথা লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে। আশা করি দ্রুত সমস্যা মিটবে।”
বধর্মান, হুগলি ও নদিয়ার বিভিন্ন এলাকার মানুষ সারা বছর স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যাপারে এই হাসপাতালের উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে হাটকালনা পঞ্চায়েত এলাকার মধ্যেই রয়েছে হাসপাতাল ভবনটি। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রথমে এই ভবনটি কালনা শহরের ভিতরেই ছিল। কিন্তু রোগীর চাপ বাড়ায় পরিকাঠামো বাড়ানোর প্রয়োজন হয়ে পড়ে। প্রায় সাড়ে তিন দশক আগে শহরে ঢোকার মুখে প্রায় ১৫ বিঘা জমির উপর নতুন ভবন তৈরি হয়। কিন্তু ভবনটি এসটিকেকে রোড থেকে প্রায় তিন ফুট নিচু। কারিগরি এই সমস্যার কারণেই গোড়া থেকেই ভারি বর্ষায় জল জমে যায় হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায়। |
স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রথম দিকে হাসপাতালের সঙ্গে সংযোগকারী নালাগুলি পরিষ্কার থাকায় সমস্যা বড় আকার নেয়নি। জমা জল দ্রুত বেরিয়ে যেত বাইরে। মহকুমা হাসপাতালে ঢোকার মুখেই রয়েছে একটি লম্বা নালা। তার উপর আস্তে আস্তে তৈরি হতে থাকে দোকানপাট। এর সঙ্গে সঙ্গে বহু দোকানের বর্জ্যও ওই নালায় জমা হতে থাকে। ফলে নিকাশি নালাটির নানা অংশ বুজে যেতে থাকে ধীরে ধীরে। মাঝে মাঝে প্রশাসনিক অভিযান চালিয়ে তা পরিষ্কার করা হয় ঠিকই। কিন্তু তা খুব একটা ফলপ্রসূ হয়নি। বছর চারেক আগে হাসপাতালের ভিতরে জল ঢোকা বন্ধ করতে পূর্ত দফতর বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড উঁচু করার কাজ করে। তাতে কিছুটা সমস্যা মিটলেও এ বছর ফের বর্ষার শুরু থেকে বাইরের জমা জল ভিতরের ঘরে ঢুকতে শুরু করেছে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, সব থেকে বেশি জল জমেছে দু’টি এক্সরে রুমে। বিভাগীয় এক কর্মীর কথায়, “বাইরের নালাগুলি দিয়ে জল বেরোতে না পারায় এক্সরে রুমে নালার মুখ দিয়ে জল ঠেলে ঢুকে পড়ছে। ভিতরের বিভিন্ন বৈদ্যুতিন যন্ত্র রয়েছে। শট সার্কিট হওয়ার ভয় থেকে যাচ্ছে সবসময়ে।”
|
বর্তমানে সব থেকে বেশি জল হয়েছে হাসপাতালে ঢোকার প্রথম দরজাটিতে। এই দরজা দিয়েই ইমার্জেন্সি রোগীদের ভিতরে ঢোকানো হয়। হাসপাতালে কর্তব্যরত এক নার্সের কথায়, “ভারি বৃষ্টি হলেই প্রথম দরজায় হাঁটু জল দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে নোংরা জলের উপর দিয়ে হেঁটে ওয়ার্ডে ঢুকতে হচ্ছে।” তাঁর আশঙ্কা, নোংরা জমা জল থেকে জীবানুবাহিত রোগ ছড়াতে পারে। শহরের এক অ্যাম্বুল্যান্স চালক বিষ্ণু শীলও বলেন, “বর্ষায়ে হাসপাতালের প্রথম দরজার সামনে প্রায়ই জল জমে থাকে। জল পেরিয়ে রোগীদের ওয়ার্ড পেরনো বিরক্তিকর। মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর আত্মীয় বিকাশ মোদকের বক্তব্য, “সামনের দরজা দিয়ে ওষুধ-সহ নানা জিনিসপত্র আনতে হয়। বারবার জল পেরিয়ে আনাগোনা করতে নিজেরাই অসুস্থ হয়ে পড়ছি।”
কালনার মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচিও বলেন, “সমস্যাটি নিয়ে সুপারের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।”
|