এক হাত লম্বা লেজ নিয়ে দিব্যি ঘরসংসার করছেন চান্দ্রে ওঁরাও।
আলিপুরদুয়ারের নাগরাকাটায় হীরালাল ওঁরাও চা বাগানে জল দেওয়ার কাজ করতেন। স্ত্রী অরুণা ছিলেন বাগানের শ্রমিক। তাঁদের ছেলে চান্দ্রে। ১৯৭৬ সালে রামনবমীর দিন চান্দ্রে জন্মালেন। শরীরে একটা লেজ নিয়ে। গোটা এলাকায় রটে গেল, স্বয়ং বজরঙ্গবলী মর্তে নেমে এসেছেন। লেজওয়ালা চান্দ্রে নাগরাকাটার গ্যাংরাপাড়া চা বাগান এলাকায় ‘সেলিব্রিটি’ হয়ে গেলেন। ছত্রিশ বছর পরেও দেশবিদেশ থেকে গবেষক ও তথ্যচিত্র নির্মাতারা তাঁকে দেখতে আসেন নাগরাকাটায়। অনেকে বজরঙ্গবলী মনে করে ভক্তি করেছেন। কিন্তু ঠাট্টা তামাশাও কম সইতে হয়নি। একটু বড় হওয়ার পর বাবা নিয়ে গিয়েছিলেন বাগানের হাসপাতালে। কিন্তু লেজ কাটাতে রাজি হননি চান্দ্রে-ই। তিনি বলেন, “তখন লেজটাকে আমি ভালবেসে ফেলেছি। ডাক্তারবাবুরা শহরে গিয়ে অপারেশন করাতে বললেন। আমি রাজি হলাম না।” |
চান্দ্রে ওঁরাওয়ের লেজ। নিজস্ব চিত্র |
কয়েক বছর আগে এক বার পাড়ার ছেলেদের টিটকিরির মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তিতিবিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন চান্দ্রে। রাগের চোটে এক দিন লেজের বেশ খানিকটা কেটে দিলেন। খুব দুঃখ হয়েছিল লেজ ছোট হয়ে যাওয়ায়। তবে চান্দ্রের লেজে অবশ্য রক্তমাংস নেই। শুধুই লোম। সেই লোম কিছু দিন বাদেই আবার বেড়ে গেল। এখন চা বাগানে কাজ করার সময় সেই লেজ কোমরে পেঁচিয়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখেন চান্দ্রে। বাইরে থেকে দেখাও যায় না। তবে এই লেজের জন্য বৌ পেতে অনেক সমস্যা হয়েছিল চান্দ্রের। ২১টি মেয়ে তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। সেই ২১ বার ঘায়েল হয়েও গোঁ ছাড়েননি চান্দ্রে। “প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, লেজ-সহ কোনও মেয়ে আমাকে বিয়ে করতে চাইলে তবেই রাজি হব। না-হলে সারা জীবন অবিবাহিতই থাকব হনুমানজির মতো।” শেষ অবধি চান্দ্রেকে বিয়ে করেছে মইনো ওঁরাও। তাঁদের আড়াই বছরের মেয়ের নাম রাধিকা। এখন গ্যাংরাপাড়া চা বাগানের কোয়ার্টারে স্ত্রী, মেয়ে আর দুই বোনকে নিয়ে থাকেন চান্দ্রে। বেতন পান ২৩৪০ টাকা। অভাবের সংসার। স্বপ্ন দেখেন, হাতে টাকা এলে হনুমানজির মন্দির বানাবেন। বলেন, “খুব রেগে গেলে বৌ লেজে হাত বুলিয়ে দেয়। ব্যস, আমার মন তাতেই ঠান্ডা হয়ে যায়।” |