হুগলির গুড়াপ-কাণ্ডের পরে সরকারি-বেসরকারি হোম পরিচালনায় নানা ধরনের অভিযোগ উঠছে। সেই অভিযোগের তালিকায় এ বার ‘এক শ্রেণির সরকারি অফিসার’কেও জড়ালেন খোদ রাজ্যের সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “দফতরের মধ্যে আমার অক্টোপাসের (কবলে পড়ার) মতো অবস্থা! আমি ভাল অফিসার আনতে চাই। কিন্তু এক শ্রেণির সরকারি অফিসারের বাধায় ভাল অফিসার নিয়োগ করতে পারছি না। পারলে আরও অনেক কাণ্ডকারখানা বেরোত।” মন্ত্রী মন্তব্য করেন, “একটা চক্রান্ত চলছে।” কোন অফিসারেরা তাঁর
উদ্যোগে বাধা দিচ্ছেন, তা অবশ্য বলতে চাননি সাবিত্রীদেবী।
এ রাজ্যে সরকারি ও বেসরকারি হোমের সংখ্যা প্রায় ৫০। গত ১১ জুলাই গুড়াপে ‘দুলাল স্মৃতি সংসদ’ নামে একটি বেসরকারি হোমের পাঁচিলের পাশে পুকুরপাড়ের মাটি খুঁড়ে গুড়িয়া নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলা আবাসিকের গলিত দেহ উদ্ধার করা হয়। সেই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে। ওই হোমে আবাসিকদের উপরে যৌন নির্যাতন চালানো হত বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে জানিয়েছে সিআইডি। সরকারি হোম তো বটেই, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পরিচালিত বেসরকারি হোম পরিচালনার ক্ষেত্রেও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। গুড়াপ-কাণ্ডের পরে হোম পরিচালনার ক্ষেত্রে তাই সরকারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। |
সমাজকল্যাণ মন্ত্রীর দাবি, “বাম আমলে সরকারি হোমগুলিতে যে-অব্যবস্থা চলছিল, গত এক বছরে তার অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে।” তবে বিভিন্ন হোমে অনিয়ম ও দুর্নীতির যে-সব অভিযোগ রয়েছে, তার সঙ্গে সরকারি কর্তাদের একাংশও জড়িয়ে পড়েছেন বলে এ দিন প্রকারান্তরে স্বীকার করে নিয়েছেন মন্ত্রী।
বিভিন্ন হোমের সুপার, জেলাগুলির সমাজকল্যাণ আধিকারিক ও দফতরের অফিসারদের সঙ্গে এ দিন মহাকরণে দীর্ঘ বৈঠক করেন সাবিত্রীদেবী। তিনি সকলকে বলেছেন, “হোমে আবাসিকদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করুন। ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার সঙ্গে কাজ করন।” হোমগুলির নিরাপত্তা রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ করার কথাও জানান তিনি। তাঁর কথায়, “প্রতিটি হোমে দু’জন করে পুলিশকর্মী দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানানো হবে। যাঁরা হোমে যাবেন, লিপিবদ্ধ করা হবে তাঁদের নাম-ঠিকানা। থাকছে সিসিটিভি। পালানো আটকাতে সাইরেনও।” বৈঠকে ঠিক হয়েছে, হোমগুলি কেমন চলছে, প্রতি মাসে তার রিপোর্ট দেখবেন মন্ত্রী। তিনটি জায়গা থেকে রিপোর্ট নেওয়া হবে। একটি রিপোর্ট দেবেন বিডিও। জেলার বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে তৈরি কমিটিও আলাদা রিপোর্ট দেবে। আর একটি রিপোর্ট দেবেন জেলার সমাজকল্যাণ আধিকারিক। মন্ত্রী বলেন, “তিনটি রিপোর্ট দেখেই বুঝব, হোম কেমন চলছে।” যে-জেলার হোমের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই বৈঠক, সেই হুগলির সমাজকল্যাণ আধিকারিক আলোচনায় হাজির ছিলেন না। তাঁকে ‘শো-কজ’ করার নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। |