প্ল্যাটিনাম জয়ন্তীতে ’আমরা-ওরা’ মুছতে চায় বিধানসভা।
বিধানসভার ৭৫ বছর পূর্তিতে সিকি শতক বা তারও বেশি সময়ের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন, শাসক-বিরোধী দু’তরফের বিধায়কদেরই সংবর্ধনা দেবে রাজ্য সরকার। প্ল্যাটিনাম জয়ন্তীতে আগামী ১৩ এবং ১৪ অগস্ট দু’দিনের অনুষ্ঠানের প্রথম দিনেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং লোকসভার স্পিকার মীরা কুমারের উপস্থিতিতে বিধায়ক-সংবর্ধনা হবে বিধানসভা চত্বরে। সংবর্ধিত হবেন
বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম। লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কেও সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমোদন-সাপেক্ষে অনুষ্ঠানসূচির রদবদল হতে পারে বলে বিধানসভা সূত্রের বক্তব্য।
মোট ২৫ বছর (একটানা বা দফায় দফায়) বিধানসভায় আছেন, এমন বিধায়কদের তালিকায় আপাতত যে ১৫ জনের নাম রয়েছে, তাতে অধিকাংশই বিরোধী শিবিরের। তার মধ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানাতেই জেল-ফেরত সুশান্ত ঘোষ, আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা বা বিধানসভায় বামফ্রন্টের সহকারী দলনেতা সুভাষ নস্কর রয়েছেন। রয়েছেন তৃণমূল নেতা ও পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, গ্রন্থাগারমন্ত্রী আব্দুল করিম চৌধুরী, কংগ্রেসের প্রবীণতম জ্ঞানসিংহ সোহনপাল (চাচা), আব্দুল গফ্ফররের মতো বিধায়কেরা। কোনও রকম ‘বিভেদ-রাজনীতি’র তকমায় যাতে ৭৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান সমালোচিত হতে না-পারে, সে জন্যই শাসক-বিরোধী দলের বিধায়কদের এক সারিতে এনে সংবর্ধনা দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে বলে বিধানসভা সূত্রের ব্যাখ্যা। ওই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি বিষয়ক কমিটির সঙ্গে বৈঠকের পরে মঙ্গলবার স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই অনুষ্ঠানে আমরা-ওরা’র প্রসঙ্গ আসুক, কখনওই চাই না।”
প্রবীণ বিধায়কদের সম্মান জ্ঞাপনের এই প্রচেষ্টাকে ‘স্বাগত’ জানালেও বিধানসভা অধিবেশনে দু’পক্ষের ‘সম্পর্কে’র কথা তুলছে বিরোধী শিবির। বর্ষীয়ান এক বাম বিধায়কের কথায়, “বিধানসভা বিরোধীদের জন্য। বিরোধীদের মর্যাদা রক্ষার আসল জায়গা বিধানসভার কক্ষ। সেই দিকে সরকার পক্ষের নজর নেই। দু’একটা অনুষ্ঠান দিয়ে সেই ক্ষতি পূরণ করা যায় না! তবে উদ্যোগটা স্বাগত।” রাজনীতির ‘ঊর্ধ্বে’ উঠে এই অনুষ্ঠান করার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে কংগ্রেস পরিষদীয় দলও।
বিধানসভার এ দিনের বৈঠকের সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। ১৫ জনের পাশাপাশি বাকি বিধায়ক-মন্ত্রীদেরও সম্মান জ্ঞাপন করা হবে বলে স্পিকার জানান। সম্মান জানানো হবে তিন প্রাক্তন ডেপুটি স্পিকার ভক্তিপদ ঘোষ, কৃপাসিন্ধু সাহা ও কলিমুদ্দিন শামস’কে। রাজনীতির বৃত্তের পাশাপাশি বিধানসভার সচিব-সহ সব কর্মীকেও সম্মান জানানো হবে ওই অনুষ্ঠানে। তবে ওই অনুষ্ঠানেই রাজ্যের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সম্মান জ্ঞাপনের কথাও ভেবেছিল বিধানসভা। তার জন্য তালিকা তৈরির প্রস্তুতিও চলছিল। তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আপাতত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের মধ্যে কয়েক জনকেই সম্মান জ্ঞাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্পিকারের বক্তব্য, “৭৫ বছরের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাকি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সংবর্ধিত করার পরিকল্পনা আছে। তবে বিধানসভা ভবনের দোতলায় স্বাধীনতা সংগ্রামের উপরে একটি দৃশ্য-শ্রাব্য প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকছে।” |