একুশে জুলাইয়ের সমাবেশস্থল থেকেই তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘জবাব’ দেওয়ার চেষ্টা করল রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিএম। রাজ্যের আর্থিক দাবিদাওয়ার প্রশ্নেও মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে এক হাত নিল তারা। কিন্তু তাঁদের জবাবে সাধারণ মানুষের যে এখনও ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ সাড়া মিলছে না, সেই কথাও প্রকাশ্যে কবুল করে নিলেন সিপিএম নেতৃত্ব। দলের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্রের কথায়, মানুষকে সংগঠিত করতে না-পারার ‘দায়িত্ব এবং দুর্বলতা’ তাঁদেরই।
মমতার ‘শহিদ সমাবেশ’ যেখানে হয়েছিল, ধর্মতলার সেই ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে মঙ্গলবার কলকাতা জেলা কমিটির ডাকে বিদ্যুতের মাসুল বৃদ্ধির প্রতিবাদে অবস্থান-সমাবেশ ছিল সিপিএমের। সেই মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য সরকারের প্রবল সমালোচনা করেও বিরোধী দলনেতা সূর্যবাবু বলেন, “মানুষের আস্থা, বিশ্বাস অর্জন করতে আমাদের লড়াই করে যেতেই হবে। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ চাই। যে মানুষ এখনও সঙ্গে আসছেন না, অন্য দিকে আছেন, তাঁদের কাছে পৌঁছতে হবে। আমাদের ত্রুটি-দুর্বলতা কাটাতে হবে।” সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যবাবুর আরও সংযোজন, “সংগঠিত আন্দোলনের ময়দানে বেশি মানুষ আসছেন না। বেশি বেশি মানুষকে আনতে না-পারা আমাদের দুর্বলতা। তাঁদের নিয়ে আসা দলেরই দায়িত্ব।” নতুন সরকারের ১৪ মাসের জমানায় নানা প্রশ্নেই প্রতিবাদে সরব হয়েছেন বিরোধী বাম নেতৃত্ব। নানা বিষয়ে আন্দোলনের কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু ‘সংগঠিত’ কর্মসূচি ছাড়া মানুষের ‘স্বতঃস্ফূর্ত’ সাড়া যে এখনও মিলছে না, তা নিয়ে সিপিএম তথা বামফ্রন্টের অন্দরে কাটাছেঁড়া চলছে। দলের অন্যতম শীর্ষ নেতা সূর্যবাবুর এ দিনের বক্তব্যে প্রকাশ্যে সেই ‘উদ্বেগ’ই ধরা পড়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর তিন দিন আগের বক্তব্যের পাল্টা বলতে অবশ্য ছাড়েননি সিপিএম নেতৃত্ব। আরও কিছু দিন অপেক্ষার পরে কেন্দ্রীয় ঋণের উপরে তিন বছরের জন্য সুদ স্থগিত (মোরাটোরিয়াম)
রাখার দাবিতে তৃণমূলের সাংসদ-বিধায়কদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দরবার করতে যাওয়ার কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিরোধী দলনেতা এ দিন বলেন, গত বছর প্রধানমন্ত্রীর কলকাতা সফরের সময়েই রাজ্যের ‘ন্যায্য পাওনা’ মিটিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁর কাছে রাজভবনে দরবার করেছিল বিরোধী বামফ্রন্ট। মুখ্যমন্ত্রী-সহ রাজ্যের মন্ত্রীদের চিঠি পাঠিয়ে বিরোধীদের তরফে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, প্রয়োজনে একসঙ্গে দিল্লি যাওয়া যেতে পারে। কিন্তু সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী ওই চিঠির উত্তরই দেননি। সূর্যবাবুর কথায়, “এখন বলছেন দিল্লি যাবেন। কাদের নিয়ে কী ভাবে দরবার করবেন, আগে ঠিক করে নিন। উনি অবশ্য বলছেন, কী ভাবে আদায় করতে হয়, উনি জানেন। আদায় করলে দেখতে পাব!”
সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তথা রাজ্যসভার সাংসদ শ্যামল চক্রবর্তীর বক্তব্য, “তৃণমূল যখন এখানে বিরোধী ছিল, কেন্দ্রকে বলত একটা পয়সাও রাজ্য সরকারকে দেবেন না! বাড়তি নয়, ন্যায্য পাওনাও দিল্লি দিত না। তৃণমূলের কাছ থেকে যা শিখেছিল, সেইমতো দিল্লি এখনও টাকা দিচ্ছে না। তৃণমূল নেত্রী নিজেই ওই কৌশলের শিকার হয়েছেন! আসলে শিকার হয়েছেন রাজ্যের মানুষ।”
বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, খরার আশঙ্কা আছে বলে যে ৬টি রাজ্যের নাম প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে জানানো হয়েছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গের নাম নেই। এই রাজ্যেও যে বৃষ্টি ঠিকমতো হচ্ছে না, সেই তথ্য রাজ্য সরকার আদৌ কেন্দ্রকে দিয়েছে কি না, সংশয় প্রকাশ করেন সূর্যবাবু। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির আর এক সদস্য মহম্মদ সেলিমের অভিযোগ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাজ্য সরকার ব্যর্থ। এনডিএ আমলে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন শিথিল করার সময় মমতার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। আর সার্বিক ভাবে মমতার প্রতি শ্যামলবাবুর কটাক্ষ, “অলিম্পিক আসছে। সেখানে মিথ্যা বলার জন্য কোনও ইভেন্ট থাকলে মুখ্যমন্ত্রীর সোনা পাওয়া বাঁধা ছিল!” সঙ্গে সূর্যবাবুর সংযোজন, “একটা পুরস্কার উনি ইতিমধ্যে জিতে নিয়েছেন! মহিলাদের উপরে নির্যাতনে পশ্চিমবঙ্গ এক নম্বরে উঠে এসেছে!”
প্রসঙ্গত, সিইএসসি এলাকায় বিদ্যুতের বর্ধিত মাসুল প্রত্যাহার বা সরকারি ভর্তুকির দাবিতে প্রায় পৌনে চার লক্ষ গণস্বাক্ষর-সহ দাবিপত্র এ দিন মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে জমা দিয়ে এসেছে কলকাতা জেলা সিপিএমের একটি প্রতিনিধিদল। |