ধোনির ভারতীয় দলে কি ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার ভূত ফিরে এল?
মঙ্গলবার হাম্বানটোটায় বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের কাঁপতে কাঁপতে আত্মসমর্পণ দেখতে দেখতে তো মনে হচ্ছিল উপমহাদেশের মাঠে নয়, ম্যাচটা হচ্ছে বিদেশের ফাস্ট, বাউন্সি উইকেটে? না হলে শ্রীলঙ্কায় শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ১৩৮ রানে অলআউটের কী ব্যাখ্যা? ২০ ওভারের মধ্যে সেই রান তুলে দিয়ে নয় উইকেটে দুমড়ে দিয়ে গেল শ্রীলঙ্কা। গত এক বছর ধরে নানা লজ্জাজনক হার দেখতে হয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটকে। হাম্বানটোটা সেই তালিকা বাড়িয়ে দিয়ে গেল।
দেখেশুনে মনে হচ্ছিল, ধোনির টিমের মধ্যে বোঝাপড়া ব্যাপারটাই হারিয়ে গিয়েছে। একে তো পিচের চরিত্র ধরতে পারেনি ওরা। পিচে ঘাস ছিল, টিভি-তে ম্যাচ দেখে যত দূর বুঝেছি, সামান্য ভিজেও ছিল। এই অবস্থায় টস জিতে কেউ ব্যাটিং নেওয়া মানে তো নিজে হাতে করে ম্যাচ প্রতিপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া। পিচের চরিত্র যদি বা বুঝতে দেরি হল, সেটা ধরতে পেরেও তো ব্যাটিং-ভঙ্গিমা শোধরানোর কোনও ইচ্ছা দেখতে পেলাম না রোহিত শর্মাদের মধ্যে। অথচ এই তরুণ ক্রিকেটারদেরই কি না ভবিষ্যতের তেন্ডুলকর, দ্রাবিড় ভাবা হচ্ছে! নাকি তরুণ প্রজন্ম মানে তারা শুধু টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটেই ঝলমল করবে! টেস্ট দূরে থাক, ৫০ ওভারের ওয়ান ডে ক্রিকেটে সফল হওয়ার রসায়নও তাদের জানা নেই! |
ভারতীয় ব্যাটিংয়ের পতন। মঙ্গলবার হাম্বানটোটায়। ছবি: এএফপি |
একের পর এক উইকেট পড়ছে দেখেও মিডল-অর্ডার স্ট্র্যাটেজি পাল্টে উইকেটে পড়ে থাকার চেষ্টা করল না। সেই উল্টোপাল্টা স্ট্রোক নিতে গিয়ে আউট হতে থাকল। আমার সবথেকে আশ্চর্য লাগছে যে, বীরেন্দ্র সহবাগ বা বিরাট কোহলির মতো কেউ কি আউট হয়ে ড্রেসিংরুমে ফিরে এই বার্তাটা সতীর্থদের দিল না যে, দ্যাখ ভাই, আজ কিন্তু তিনশোর পিচ নেই। আজ খেটেখুটে রান তুলতে হবে। দু’শো পঁচিশ এই পিচে লড়াকু স্কোর। একমাত্র গৌতম গম্ভীর যেটা করল। ৯৬ বলে ৬৫ করল গম্ভীর। স্ট্রাইক রেট মাত্র ৬৭.৭০। কিন্তু ওর সঙ্গে আর কেউ ক্রিজে দাঁড়াতেই পারল না।
টিম ম্যানেজমেন্টও কেমন হাত গুটিয়ে বসে থাকল। ড্যামেজ কন্ট্রোলের কোনও চেষ্টা করল না। ইরফান পাঠানকে অলরাউন্ডার হিসেবে খেলানো হচ্ছে। ওর ব্যাটিংটাকে কাজে লাগানোর তো আজই সেরা দিন ছিল। টেস্টে ওপেন করে রান করেছে পাঠান। আজ দ্রুত কয়েকটা উইকেট পড়ে গিয়েছে দেখে তো ওকে আগে পাঠানো যেত। তা না ধোনিরা রোজকার রুটিনই আউড়ে গেল। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন একটা দল। তাদের চিন্তাভাবনা এত অসাড় দেখাবে কেন? বিপর্যয় ঘটলে কোনও ‘প্ল্যান বি’ কেন তৈরি থাকবে না?
গত এক বছর ধরে এত বিপর্যয় ঘটল। কিন্তু অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়ার কোনও ইচ্ছাই যেন নেই। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে ফেরার পর উপমহাদেশে এশিয়া কাপ খেলেছে ভারত। সেই টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠতে পারেনি। এখানে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে প্রথম ম্যাচটা কোনও রকমে জিতল। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে ফের অন্ধকার। এখন বাকি সিরিজে কী অপেক্ষা করে আছে কে জানে!
প্রথম একাদশ নির্বাচনেও বিশেষ চিন্তাভাবনার ছাপ দেখা যাচ্ছে না। বরং ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টকে এ বার বিরক্তিকর ভাবে একগুঁয়ে দেখাতে শুরু করেছে। হাম্বানটোটায় মঙ্গলবার যে পিচে খেলা হল সেখানে যে ‘মুভমেন্ট’ রয়েছে সেটা বোঝার জন্য গোয়েন্দা হওয়ার তো কোনও দরকার ছিল না। শ্রীলঙ্কা চার পেসারে খেলল। আর বেশি উইকেট নিয়ে গেল ওদের দুই মিডিয়াম পেসার থিসারা পেরেরা ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। অথচ আমরা সেই দুই স্পিনারের ছক আঁকড়ে থাকলাম। জাহির খানকে আর ওয়ান ডে ক্রিকেট খেলিয়ে লাভ আছে কি না সেই প্রশ্নের সমাধান করারও সময় হয়েছে।
সিরিজে এখনও তিনটে ম্যাচ বাকি। ধোনিদের উচিত অবিলম্বে সাত ব্যাটসম্যান-চার বোলারের চিরাচরিত ভারতীয় ফর্মুলায় ফিরে যাওয়া। অতিরিক্ত ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলানো হোক মনোজ তিওয়ারিকে। এবং রোহিত শর্মার মতো সুযোগ নষ্ট করে যাওয়া তরুণদের কাছে সঠিক বার্তা পৌঁছে দেওয়া যে, ভারতীয় জার্সি কোনও সহজলভ্য জিনিস নয় যে, উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এসেও তা তোমার জন্য অরক্ষিত থাকবে।
|
হাম্বানটোটার স্কোর |
ভারত |
গম্ভীর ক সঙ্গকারা বো মালিঙ্গা ৬৫
সহবাগ ক ও বো পেরেরা ১৫
কোহলি ক সঙ্গকারা বো পেরেরা ১
রোহিত বো ম্যাথেউজ ০
রায়না বো পেরেরা ১
ধোনি ক সঙ্গকারা বো ম্যাথেউজ ১১
ইরফান ক পেরেরা বো মালিঙ্গা ৬
অশ্বিন রান আউট ২১
জাহির এলবিডব্লিউ হেরাথ ২
প্রজ্ঞান ক সঙ্গকারা বো ম্যাথেউজ ৫
উমেশ ন.আ. ০
অতিরিক্ত ১১
মোট ৩৩.৩ ওভারে ১৩৮।
পতন: ৩১, ৩৩, ৩৮, ৪১, ৬০, ৭৯, ১০৭, ১১৩, ১৩২।
বোলিং: মালিঙ্গা ৭.৩-০-৩৬-২, উদানা ৬-০-৪২-০, পেরেরা ৮-৩-১৯-৩,
ম্যাথেউজ ৭-২-১৪-৩, হেরাথ ৫-০-২১-১।
|
শ্রীলঙ্কা |
থরঙ্গা ন.আ. ৫৯
দিলশান ক ধোনি বো অশ্বিন ৫০
চণ্ডীমল ন.আ. ৬
অতিরিক্ত ২৪
মোট ১৯.৫ ওভারে ১৩৯-১।
পতন: ১১৯।
বোলিং: জাহির ৬-০-৩৯-০, ইরফান ৪-০-২৭-০,
উমেশ ৪-০-৩৮-০, অশ্বিন ৫-১-১৮-১, প্রজ্ঞান ০.৫-০-৭-০। |
|
|