সঞ্জয় চক্রবর্তী • শিলিগুড়ি |
নেপালে গ্রামবাসীদের হামলায় জখম দাঁতালের চিকিৎসায় ফের উদ্যোগী হল বন দফতর। মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গের বন্যপ্রাণ বিভাগের মুখ্য বনপাল ব্রিজরাজ শর্মা এই ব্যাপারে দার্জিলিঙের বনপাল সন্দীপ সুন্দ্রিয়ালকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ পাঠিয়েছেন। জখম দাঁতালটি গত কয়েকদিন ধরে বাগডোগরার সেন্ট্রাল ফরেস্ট বস্তি এলাকায় ঘোরাফেরা করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গুরুতর জখম হয়ে পড়া দাঁতালটি ভাল করে হাঁটতে পারছে না। সামনের ডান পা ফুলে রয়েছে। তবু সন্ধ্যার পরে খাবারের খোঁজে বস্তি এলাকায় চলে আসছে। ভোরের আলো ফোটার পরে সেটি ফের খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে জঙ্গলের গভীরে চলে যাচ্ছে। হাতিটির যে অবস্থা তাতে গত বছর নেপালে জখম স্ত্রী হাতিটির মতোই এটির হাল হবে বলে আশঙ্কা করছেন বনকর্মীরা। গত বছর নেপালে গিয়ে ওই স্ত্রী হাতিটি জখম হয়। বন্দুকের গুলিতে সেটির সামনের বাঁ পায়ের হাড় ভেঙে যায়। কয়েক মাস আগে সুকনায় সামরিক ছাউনি এলাকা থেকে সেটির মৃতদেহ উদ্ধার হয়। এই পরিস্থিতিতে দাঁতালটিকে যাতে প্রাথমিক কিছু চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হয় সেই চেষ্টা চলছে। বন্যপ্রাণ বিভাগের উত্তরবঙ্গের মুখ্য বনপাল বলেন, “আমরা আগে হাতিটির শারীরিক পরিস্থিতি কেমন সেটা খতিয়ে দেখতে চাই। তার পরে চিকিৎসকদের সাহায্য নিয়ে অন্যান্য ব্যবস্থা হবে। চব্বিশ ঘণ্টা নজরদারির ব্যবস্থাও হচ্ছে। বনপালকে সেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।” প্রসঙ্গত গত ১৩ জুন নেপালে বুনো হাতির পাল ঢুকে পড়লে স্থানীয় বাসিন্দারা হামলা চালান বলে অভিযোগ। সেই সময়ে একটি শাবককে বাসিন্দারা খুঁচিয়ে মারেন বলেই অভিযোগ। তার কয়েকদিন পরেই নকশালবাড়ির কলাবাড়ির জঙ্গলে দাঁতালটিকে খোঁড়াতে দেখেন বনকর্মীরা। তাতেই সন্দেহ করা হয়, এটিও নেপালে গিয়ে জখম হয়েছে। দাঁতালটির প্রায় ৪ ফুট দৈর্ঘ্যের দাঁত রয়েছে। চোরাশিকারীরা যাতে ওই দাঁত কোনও ভাবে কেটে নিয়ে যেতে না-পারে সে জন্য নজরদারি শুরু হয়। চিকিৎসার জন্য গরুমারা থেকে কুনকি হাতি আনা হয়। সেই সময়ে বুনো হাতির পালে ঢুকে জখম দাঁতাল ফের নেপালে ঢুকে পড়ায় সমস্যায় পড়তে হয় বনকর্মীদের। ডুয়ার্সে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কুনকি হাতি দুটি ফের ফেরত পাঠাতে হয়। চলতি মাসের মাঝামাঝি নাগাদ বুনো হাতির পাল নেপাল থেকে ফিরে আসার পরে ফের জখম দাঁতালটিকে খোঁজা চলছিল। কয়েকদিন আগে সেন্ট্রাল ফরেস্ট বস্তির বাসিন্দারা বনকর্মীদের দাঁতালের খবর দেওয়ার পরে নতুন করে খোঁজখবর শুরু হয়। দার্জিলিঙের বনপাল বলেন, “প্রায় দু’মাস ধরে হাতিটির উপরে নজরদারি চলছে। দাঁতালের চিকিৎসার জন্যও যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” নকশালবাড়ি বিজ্ঞান ক্লাবের সম্পাদক প্রাণগোপাল নাগ বলেন, “হাতিটির উপরে চোরাশিকারীদের যে নজর রয়েছে সেই ব্যাপারে আমরাই প্রথম বনকর্মীদের খবর দিই। এ বার যাতে দাঁতালের চিকিৎসায় গাফিলতি না-হয় সেই দাবি জানাচ্ছি।” |