তবে কী ফের ‘ফ্লাইং কফিন’-কেই মেঘালয়ে যাত্রী পরিষেবার ভার তুলে দিতে হবে? পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, তাতে পবনহংস ছাড়া আর কোনও হেলিকপ্টার উড়ান সংস্থাই, ডিজিসিএ ও মেঘালয় সরকারের শর্ত ও সার্বিক মানদণ্ড উৎরোতে পারেনি। কিন্তু আগের চুক্তি বাতিল করার পরে, ফের পবনহংসের হাতেই উড়ান পরিষেবার ভার তুলে দেওয়ার আগে দ্বিধাগ্রস্ত রাজ্য সরকার।
মেঘালয়, অসম, অন্ধ্রপ্রদেশ, অরুণাচলপ্রদেশে একের পর এক কপ্টার দুর্ঘটনার পরে, বিশেষ করে পবনহংস দুর্ঘটনায় অরুণাচলের মুখ্যমন্ত্রী দোর্জি খান্ডুর মৃত্যুর পর মিগ ২১-এর ‘ফ্লাইং কফিন’ তকমা পবনহংসের গায়েও সেঁটে যায়। খাণ্ডুর ঘটনার পরে, সমগ্র উত্তর-পূর্বেই পবনহংস পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। বিশেষ করে মেঘালয় ও অরুণাচলে পবনহংসের নিয়মিত যাত্রীবাহী হেলিকপ্টার পরিষেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সমস্যা বাড়ে। কিন্তু জনমতের চাপে, পবনহংসের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করা ভিন্ন সরকারের উপায় ছিল না। তাওয়াং-এর কপ্টার পরিষেবা এখনও চালু হয়নি।
তবে যাত্রী পরিবহণের সমস্যা মেটাতে সম্প্রতি মেঘালয় সরকার রাজ্যে ফের যাত্রীবাহী কপ্টার চালানোর জন্য আগ্রহপত্র আহ্বান করে। প্রথমে চারটি সংস্থা এগিয়ে এলেও, পরে লাভের আশা কম থাকায়, একে একে তারা সরে গিয়েছে। রয়ে গিয়েছে একমাত্র পবনহংসই। পবনহংসের তরফে জানানো হয়েছে, খান্ডুর মৃত্যুর ক্ষেত্রে কেবল পবনহংসকে দোষ দিয়ে হঠাৎ করে চুক্তি বাতিল করা উচিত হয়নি। তাদের দাবি, মন্দ আবহাওয়া সত্ত্বেও খান্ডুই কপ্টার ওড়াতে জোর করেছিলেন। সে দিন যা আবহাওয়া ছিল, তাতে যে কোনও হেলিকপ্টারই দুর্ঘটনায় পড়তে পারত।
মেঘালয়ে ১৯৯৮ সালে প্রথম কপ্টার পরিষেবা চালু হয়। অলাভজনক হওয়ায় কিছুদিনের মধ্যেই তা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৯ সালে কেন্দ্রের ৫০ শতাংশ ও রাজ্যের ২৫ শতাংশ ভর্তুকি-সহ ফের এই পরিষেবা শুরু করা হয়। মেঘালয় সরকারের টেন্ডার অনুযায়ী, শিলং-তুরা-গুয়াহাটি-শিলং রুটে কপ্টার চালাতে হবে। পাশাপাশি, প্রয়োজনমতো অন্যান্য গন্তব্যেও কপ্টার ওড়াতে হতে পারে। সরকারি শর্ত মেনে কেবল পবনহংসই এই প্রস্তাবে উড়তে রাজি। এই পরিস্থিতিতে, ফের পবনহংসকেই পরিষেবা শুরু করার বরাত দেওয়া ভিন্ন রাজ্য সরকারের সামনে আর কোনও উপায় নেই।
|
পবনহংসের দুর্ঘটনা |
• ২০০৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর
শিলং-এর কাছে বরাপানি এলাকায় পবনহংসের চপার ভেঙে পড়ে। মৃত্যু হয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী সিপরিয়ান সাংমা, ২ জন বিধায়ক ও প্রাক্তন স্পিকার-সহ ১০ জনের।
• ২০১০ সালের ১৮ ডিসেম্বর
চণ্ডীগড়ে পবনহংসের চপার ভেঙে দুই চালক জখম হন।
•২০০৯ সালের সেপ্টেম্বর
অন্ধ্রের নাল্লামাল্লায়, মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই এস আর রেড্ডিকে নিয়ে ভেঙে পড়ে পবনহংসের বেল চপার। মারা যান মুখ্যমন্ত্রী।
• ২০১১ সালের ১৯ এপ্রিল
তাওয়াং-এর হেলিপ্যাডে পবনহংসের চপার ভেঙে ১৯ জন যাত্রী মারা যান।
• ২০১১ সালের ২৯ এপ্রিল
তাওয়াং থেকে বের হয়ে জং প্রপাতের কাছে ভেঙে পড়ে অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী দোর্জি খান্ডুর চপার। খাণ্ডু ও তাঁর দুই সঙ্গী এবং দুই চালকের মৃত্যু হয়। |
|