নামনি অসমের গোষ্ঠী সংঘর্ষ আজ আরও তীব্র আকার নিয়েছে। কোকরাঝাড়ে এই সংঘর্ষ শুরু হয়ে গত তিন দিনে তা আরও ছড়িয়ে পড়েছে। এখনও পর্যন্ত সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা ৩২-এ গিয়ে দাঁড়িয়েছে। কোকরাঝাড়ে শুরু হয়ে ক্রমশ তা ছড়িয়ে পড়েছে ধুবুরি, চিরাং, বঙ্গাইগাঁও ও উদালগুড়ি জেলাতেও। ৫০০টি গ্রামের ৫৫ হাজার মানুষ ঘরছাড়া। খাদ্য, শিশুখাদ্য ও পানীয় জলের জন্য হাহাকার চলছে।
পরিস্থিতি সামাল দিতে এখনও পর্যন্ত ৫০ কোম্পানি আধা-সামরিক বাহিনী নামিয়েছে রাজ্য সরকার। উপদ্রুত অঞ্চলগুলিতে আজ থেকে শুরু হয়েছে সেনাবাহিনীর টহল। জারি রয়েছে কার্ফু। কার্ফু কবলিত এলাকাগুলিতে দেখা মাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। নামনি অসমের এই সংঘর্ষের জেরে সামগ্রিক ভাবে উত্তর-পূর্বের জীবনরেখা, রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সড়ক পথও বন্ধ। ফলে মূল ভূখণ্ড থেকে সরবরাহ ব্যবস্থা বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
যে কোনও ভাবে এই সংঘর্ষ রুখতে মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমও মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। চিদম্বরমের কাছে আরও আধা-সেনা চান মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেই এই পাঁচ জেলায় আধা-সেনার মোতায়েন বাড়ানো হয়। রাত পর্যন্ত আরও বেশ কয়েক কোম্পানি আধা-সামরিক বাহিনী নামানো হতে পারে বলে প্রশাসনিক সূত্রে ইঙ্গিত মিলেছে। |
গোলমালের জেরে দাঁড়িয়ে গিয়েছে একের পর এক ট্রেন। যাত্রীদের ভোগান্তি চরমে।
গুয়াহাটি স্টেশন চত্বরে মঙ্গলবার উজ্জ্বল দেবের তোলা ছবি। |
কোকরাঝাড়, চিরাং, ধুবুরি হয়ে বঙ্গাইগাঁও, উদালগুড়িতেও এ দিন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আজ বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৫০ হাজার ঘরছাড়া মানুষের জন্য প্রশাসন ৭৫টি ত্রাণ শিবির খুলেছে। আজ সকালে কোকরাঝাড়ের রামপুর ও চাপারকাটা এলাকায় সংঘর্ষে ইন্ধন-জোগানদারদের একটি দলকে লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি চালায়। তাতে চার দুষ্কৃতীর মুত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বড়োল্যান্ড টেরিটোরিয়াল এরিয়া ডিস্ট্রিক্ট (বিটিএডি)-এর ভারপ্রাপ্ত আইজি এন এন সিংহ।
গত কাল থেকেই গুয়াহাটিমুখী কোনও ট্রেন অসমে ঢুকতে পারেনি। গত রাতে এক বার, তার পরে আজ সকালে আরও এক বার ট্রেন চালানোর চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু গোসাইগাঁওয়ের কাছে রাজধানী এক্সপ্রেস আক্রান্ত হওয়ায় উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল ও রাজ্য সরকার আর ঝুঁকি নেয়নি। রাজধানী এক্সপ্রেসের চারটি কামরা পাথরের ঘায়ে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও কেউ জখম হননি। ট্রেনটিকে কোচবিহার স্টেশনে ফিরিয়ে আনা হয়। সরাইঘাট, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস, লালগড়-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস-সহ বহু ট্রেন মঙ্গলবার রাতে নিউ কোচবিহার, নিউ জলপাইগুড়ি বা নিউ আলিপুরদুয়ারে রেখে দেওয়া হয়। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ট্রেনগুলি গুয়াহাটির দিকে রওনা হয়নি। আজ সন্ধ্যা অবধি মোট ৩১টি ট্রেন বাতিল হয়েছে। গুয়াহাটি থেকে ২০টি ট্রেন ও গুয়াহাটিগামী ১১টি ট্রেন এর মধ্যে রয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আজ রেলমন্ত্রী মুকুল রায় কথা বলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদম্বরমের সঙ্গে। অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈর সঙ্গেও আজ একাধিক বার কথা বলেছেন রেলমন্ত্রী। পরে মুকুলবাবু বলেন, “দু’জনের কাছেই যাত্রীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে বাড়তি বাহিনীও চাওয়া হয়েছে।” অবিলম্বে অবরুদ্ধ যাত্রীদের পানীয় জল ও খাবার পৌঁছে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন মুকুলবাবু।
পরিবহন মন্ত্রী চন্দন ব্রহ্ম, বনমন্ত্রী রকিবুল হুসেন, গণবণ্টন মন্ত্রী নজরুল ইসলাম, রাজস্বমন্ত্রী পৃথ্বী মাঝি ও কৃষিমন্ত্রী নীলমণিসেন ডেকা পরিস্থিতি সামলাতে নামনি অসমে গিয়েছেন। আজ সংঘর্ষ বিধ্বস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন ডিজি জয়ন্তনারায়ণ চৌধুরী। তিনি বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব আমরা স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে পৌঁছনোর চেষ্টা করছি। অতিরিক্ত বাহিনীও আসছে। তবে দুষ্কৃতীরা ক্রমাগত গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলেছে।” কংগ্রেস ও বিজেপির প্রতিনিধি দলও এলাকা ঘুরে শান্তি বজায় রাখার আবেদন করছেন।
মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ জানান, তিনি চিদম্বরমের কাছে আরও আধাসেনা চেয়েছেন। চাওয়া হয়েছে সেনা বাহিনীর সাহায্যও। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ তাঁকে ফোন করে সংঘর্ষের খবর নেন। সংঘর্ষ থামাতে রাজ্য সরকারকে প্রয়োজন মতো সব রকম ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সনিয়া গাঁধীও গগৈকে ফোন করে পরিস্থিতির খবর নিয়েছেন। |